১ কমিটিতে চার বছর পার!

জাতীয় সম্মেলন করে ভোটের মাধ্যমে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়। মেয়াদ শেষে পুরোনো কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের তাগিদ থাকে, কিন্তু প্রায় কোনোবারই তা আর হয় না। সেই ধারাবাহিকতা থেকে এবারও বেরোতে পারেনি বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের ২১ তম কমিটি। এরই মধ্যে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে কেটে গেছে আরও এক বছর। রীতি অনুযায়ী নতুন কমিটি করার জন্য দেশব্যাপী বিভাগীয় সম্মেলন শেষ করতে হয়। তার একটাও এখনো সম্পন্ন হয়নি।

আগে দুই বছরের কমিটি হলেও বর্তমান কমিটি তিন বছরের জন্য গঠন করা হয়েছে। ফেডারেশনের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্য বিষয়টিকে অযৌক্তিক মনে করছেন। তাঁদের মতে, দুই বছর মেয়াদের কমিটি থাকাই যথেষ্ট ছিল। মেয়াদ তিন বছর করার কারণে কমিটির কার্যক্রম আরও ঢিলেঢালা হয়েছে। নতুন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না, যার প্রভাব সারা দেশে পড়ছে। আঞ্চলিক পর্যায়েও নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। কেননা কেন্দ্রীয় সম্মেলন এবং কমিটি গঠনের পাশাপাশি আঞ্চলিক পর্যায়ের নতুন কমিটি করা হয়।

সর্বশেষ ২০১৪ সালের ২৫ ও ২৬ এপ্রিল যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে নির্বাচনের মাধ্যমে সেক্রেটারি জেনারেলসহ ৪৬ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়। সেবার সভাপতির পদে একাধিক প্রার্থী না থাকায় লিয়াকত আলী লাকী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। নিয়ম অনুযায়ী গত বছরের এপ্রিলের মধ্যে ফেডারেশনের নতুন কমিটি গঠন হওয়ার কথা। কিন্তু প্রতিবারের মতো সেই একই ছকে নতুন কমিটি গঠন আটকে গেল কেন? ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান বলেন, ‘এবার আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই দ্বিবার্ষিক সম্মেলন করে নতুন কমিটি গঠন করতে চেয়েছিলাম। মাঝে রাজনৈতিক টানাপোড়েন ছিল। আমরা নানা কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলাম। যে কারণে আমরা সম্মেলন করে উঠতে পারিনি।’

একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিগত চার বছরে শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে যৌথ আয়োজক হয়ে উৎসব, দায়সারা ফেডারেশন দিবস উদ্যাপন, চৈত্রসংক্রান্তির আয়োজন ছাড়া বর্তমান কমিটি মূলত কোনো কাজই করেনি। পূরণ হয়নি ফেডারেশনের নিজস্ব ভবন প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিনের দাবি। বর্তমান সভাপতি শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি ফেডারেশনকে সময় দিতে পারেন না। উপদেষ্টা কমিটিতে থাকা একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য বলেন, সভাগুলোতেও তাঁদের ডাকা হয় না। সংগঠনের সাবেক মহাসচিব ঝুনা চৌধুরী বলেন, উৎসবসহ নিয়মিত কর্মসূচির পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে এমন প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়াটা জরুরি।

লিয়াকত আলী বলেন, ‘আগামী মাসে, অর্থাৎ এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে নতুন সম্মেলন করার ইচ্ছা আমাদের আছে। সারা দেশ থেকে অসংখ্য নাটকের দলের প্রতিনিধিরা আমাকে আবারও সভাপতির দায়িত্বে থাকার জন্য অনুরোধ করছেন। কিন্তু আমার আর ইচ্ছা নেই। আমি চাই নির্বাচনপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে নেতৃত্ব তৈরি হোক।’

শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক এবং ফেডারেশনের সভাপতি এক মানুষ হওয়ায় এটা শিল্পকলার অধীন হয়ে পড়েছে অনেকাংশে। নিজস্ব চলার গতি নষ্ট হয়ে, শিল্পকলার গতির অঙ্গীভূত হয়ে গেছে। ফেডারেশনের স্বাস্থ্যকর বিকাশ কমে যাচ্ছে। সংগঠনের প্রথম সভাপতি রামেন্দু মজুমদারেরও একই মত। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় ফেডারেশন সভাপতির পদে থাকা উচিত নয়। দুটি পদ বিপরীতমুখী, টেবিলের এপাশ-ওপাশ দুটি চেয়ার। একটি দাবি আদায়ের, অন্যটি দাবি পূরণের। এক ব্যক্তিই যদি দুটি পদে দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে মূল কাজটি ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। সরকারের কোনো কাজের যুক্তিযুক্ত প্রতিবাদ করার প্রয়োজন হলেও তা সম্ভব হয় না, যেহেতু পদাধিকারবলে তিনি সরকারের অংশ।’

১৯৮১ সালের আগস্টে প্রথম জাতীয় সম্মেলন করে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের কমিটি নির্বাচিত হয়। সেবার ৬৭টি দল অংশ নিয়েছিল সম্মেলনে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে ২১ তম সম্মেলনে ৩০০ সদস্য অংশ নেন।