যা হতে চেয়েছি, পারিনি: অঞ্জন দত্ত

স্ত্রী ছন্দার সঙ্গে অঞ্জন দত্ত। ছবি: আবদুস সালাম
স্ত্রী ছন্দার সঙ্গে অঞ্জন দত্ত। ছবি: আবদুস সালাম

‘গান গেয়ে আমার নামডাক হয়েছে। গান গেয়ে মানুষের সবচেয়ে বেশি কাছে এসেছি, ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু সত্যি কথা হলো, জীবনে যা হতে চেয়েছি, তা হতে পারিনি। সত্যি এ জীবনে আমি ভালো অভিনেতা হতে চেয়েছি। কিন্তু তা হতে পারিনি।’ বললেন দুই বাংলার তুমুল জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী অঞ্জন দত্ত। আজ মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছেন তাঁকে নিয়ে লেখা বই ‘অঞ্জনযাত্রা’র মোড়ক উন্মোচন করতে।

তাঁর জীবনের বহু ঘটনার সন্নিবেশ ঘটেছে ‘অঞ্জনযাত্রা’য়। অঞ্জন দত্তকে নিয়ে বইটি লিখেছেন বাংলাদেশের সাজ্জাদ হুসাইন। ‘অঞ্জনযাত্রা’ বইটি প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ছাপাখানার ভূত থেকে। আজ বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মিলনায়তনে এই বইয়ের আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

অঞ্জন দত্ত বলেন, ‘গানই আমার পরিচয়। অভিনেতা হিসেবে সেভাবে পরিচিতি পাইনি। বড়মাপের পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি, কিন্তু বড় অভিনেতা হতে পারিনি। আমি এখন আর নতুন করে অভিনেতা হওয়ার চেষ্টা করি না। আমি মনে করি, একটা সময় যেভাবে অভিনেতা হওয়ার জন্য কাজ করেছি, তা এখন আর সম্ভব নয়। যদি বয়স কম হতো, তাহলে অভিনেতাই হতে চাইতাম। গান না গাইলে হয়তো হারিয়েই যেতাম।’

অঞ্জন দত্ত। ছবি: আবদুস সালাম
অঞ্জন দত্ত। ছবি: আবদুস সালাম

অঞ্জন দত্ত আরও বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৬৪। বড় হয়েছি দার্জিলিংয়ে। প্রথম যখন ঢাকায় আসি, তখন জাতীয় জাদুঘরের এক অনুষ্ঠানে দেখা হয় শিল্পী লাকী আখান্দের সঙ্গে। এরপর অনুষ্ঠানের ফাঁকে পরিচয়, এরপর বন্ধুত্ব। সব সময় যোগাযোগ হতো। তিনি কলকাতায় গেলে আমাদের দেখা হতো। অসুস্থ হওয়ার সময় তাঁর মোবাইল বন্ধ ছিল। তাঁর মেয়ের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেছি। অসাধারণ একজন শিল্পী ছিলেন।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত একজন ভক্ত তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনার গানের চরিত্র মিস্টার হল কে ছিলেন?’ অঞ্জন বলেন, ‘তিনি ছিলেন আমার গানের শিক্ষক। বয়সে অনেক বড়। প্রথম আমি তাঁর প্রেমে পড়েছিলাম।’

আরেকজন ভক্তের প্রশ্ন, ‘আপনার অনুপ্রেরণা কে?’ অঞ্জন হেসে বলেন, ‘কে আবার, আমি নিজে!’

বই নিয়ে বলতে গিয়ে অঞ্জন বলেন, ‘আমি মনে করি, কাজের বাইরেও একটি মানুষ থাকে। তিনি যা করেন, এর বাইরে তাঁর একটি জগৎ থাকে। এই বইয়ে সেই আমিকে বের করে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। আমার মনে হয়েছে, লেখক তাঁর সততা দেখিয়ে আমাকে মুগ্ধ করেছেন বলে আমিও সব সত্য কথা বলে দিয়েছি। এই বই পড়ার পর হয়তো আমার সম্পর্কে মানুষের ভাবনাতে পরিবর্তন আসবে। এর আগে অনেকে আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। কিন্তু এই বইয়ের জন্য আমি যে সাক্ষাৎকার দিয়েছি, তা আর কোথাও দিইনি। কোনো সাক্ষাৎকার নিয়ে এত উচ্চাশা হয়নি, যেটা এই বইয়ে দিয়েছি। বইয়ের লেখক সাজ্জাদ যে প্রশ্ন করেছে, তা কেউ করেনি।’

অনুষ্ঠানে বইয়ের মোড়ক খোলেন অতিথিরা। ছবি: আবদুস সালাম
অনুষ্ঠানে বইয়ের মোড়ক খোলেন অতিথিরা। ছবি: আবদুস সালাম

বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা ব্যক্ত করতে গিয়ে অঞ্জন বলেন, ‘আমার ভক্তদের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ মানুষ বাংলাদেশের। প্যারিসে গিয়েছি, আমেরিকায় গিয়েছি, বাংলাদেশর মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি।’

বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের পর তা থেকে প্রথম দুই পৃষ্ঠা পড়ে শোনান অঞ্জন। তাঁর স্ত্রী ছন্দাকে তিনি সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। ছন্দা বলেন, ‘আমার মামাবাড়ি ফরিদপুর। এখানে আসতে পেরে অনেক ভালো লাগছে।’

অনুষ্ঠানে কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, ‘আমি এখন সবচেয়ে বেশি শুনি অঞ্জন দত্তের গান। একটা মানুষ গান লেখে, সুর করে, গায়—এই সবকিছু আমাকে দারুণ টানে।’

বইয়ের লেখক সাজ্জাদ বলেন, ‘অঞ্জন দত্তকে যা জিজ্ঞাসা করেছি, তারই উত্তর দিয়েছেন। তিনি সব সত্যি কথা আমাকে বলে দিয়েছেন। বইয়ে কী লেখা যাবে, কী যাবে না, কোন ছবি যাবে—এ বিষয়ে কোনো মতামত দেননি অঞ্জন। সব নিজের স্বাধীনতা থেকে করেছি।’