সত্যজিতের অনঙ্গ বৌ

চেনা হাসিতে ববিতা। ছবি: কবির হোসেন
চেনা হাসিতে ববিতা। ছবি: কবির হোসেন
>ববিতা। আমাদের চলচ্চিত্রের খ্যাতনামা অভিনেত্রী, জনপ্রিয় তারকা। অভিনয় করেছেন অস্কারজয়ী নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের সিনেমায়। অর্জন করেছেন আন্তর্জাতিক সুখ্যাতি। সিনেমা প্রযোজনাও করেছেন। গুণী এই অভিনেত্রী গতকাল পেয়েছেন মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা ২০১৮। তাঁকে নিয়েই এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন

সত্যজিৎ রায় খুঁজছেন অনঙ্গ বৌকে। ববিতার কথা ভাবলেন। ডাক পাঠালেন লোক মারফত। ববিতা ভাবলেন, কেউ বুঝি তাঁর সঙ্গে মজা করছে। সত্যজিৎ রায়ের মতো আন্তর্জাতিক মানের পরিচালক তাঁকে ডাকবেন! এ হতেই পারে না। ভুলেই গিয়েছিলেন ঘটনাটা, এমন সময় ভারতীয় দূতাবাস থেকে যোগাযোগ করা হলো ববিতার সঙ্গে। এবার টনক নড়ল। কথাটা তাহলে মিথ্যা নয়। সুচন্দাকে নিয়ে পাড়ি জমালেন কলকাতায়।

জহির রায়হান ও বড় বোন সুচন্দার সঙ্গে ববিতা (বাঁয়ে)
জহির রায়হান ও বড় বোন সুচন্দার সঙ্গে ববিতা (বাঁয়ে)

নায়িকা হবেন ববিতা! তাই হোটেলে বসেই মনের মতো সাজগোজ করে সত্যজিৎ রায়ের বাড়িতে গেলেন। দরজা খুলে হাঁ করে বসে রইলেন পরিচালক। এত সাজগোজ করলে ববিতাকে দেখবেন কী করে! ববিতাও মাথাটা বুকের কাছে সেই যে নামিয়ে রাখলেন, আর ওঠালেন না। সে এক বিব্রতকর পরিস্থিতি! অবশেষে সত্যজিৎ রায় তিন ধরনের তিনটা সংলাপ হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘কাল সকালে ইন্দ্রপুরী স্টুডিওতে দেখা কোরো। এই সংলাপগুলো মুখস্থ করে আমার সামনে আসবে।’

ভয়ে ভয়ে তিন ধরনের সংলাপ তুলে নিলেন ববিতা। পরদিন স্টুডিওতে গিয়ে পরিচালকের সামনে গেছেন। তখনো বিড়বিড় করে মুখস্থ করে যাচ্ছেন সংলাপগুলো। এটা মনে ধরল সত্যজিৎ রায়ের। তারপর স্ক্রিন টেস্ট নিলেন। তার ফল আসবে পরে কিন্তু তখনই উচ্ছ্বসিত সত্যজিৎ রায়ের চিৎকার, ‘আমি পেয়ে গেছি! অনঙ্গ বৌকে পেয়ে গেছি!’

অশনি সংকেত ছবিতে সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপরীতে অনঙ্গ বৌ চরিত্রে ববিতা অভিনয় করেছিলেন। এবং এই ছবির মাধ্যমেই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গন চিনে নিল তাঁকে। সেটা ১৯৭৩ সাল।

অশনি সংকেত সিনেমার সেটে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ববিতা
অশনি সংকেত সিনেমার সেটে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ববিতা

হতে চেয়েছিলেন চিকিৎসক

বাবা নিজামুদ্দীন আতাইয়ুব ও মা জাহানারা বেগমের সংসারে তিন বোন, তিন ভাই। তবে বড় বোন চাটনির (সুচন্দা) পর এ সংসারে এসেছিল আরেকটি বোন। নাম ছিল তার জেলি। মা বলতেন, ‘সব ভাইবোন মিলেও ওর সৌন্দর্যের ধারেকাছেও তোরা যাস না।’ মফস্বলে থাকতেন। অসুখ হলে ঠিকমতো চিকিৎসক দেখানোর উপায় নেই। এ রকমই এক সময় অসুখে মারা গেল জেলি। চিকিৎসার অভাবে মারা গেল ও। মা জাহানারা বেগম তখনই সিদ্ধান্ত নিলেন চিকিৎসক হবেন। লেডি ব্রাবোর্ন কলেজে পড়েছেন তিনি, তাই খুব তাড়াতাড়ি হোমিওপ্যাথি শিক্ষার পাটও শেষ করতে পারলেন, তারপর শুরু করলেন চিকিৎসার কাজ। পাড়া-প্রতিবেশী, গ্রাম থেকেও রোগী আসত। মা চিকিৎসা করতেন এবং চিকিৎসার বিনিময়ে তিনি কোনো টাকা নিতেন না।

চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের সঙ্গে কোনো এক মুহূর্তে
চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের সঙ্গে কোনো এক মুহূর্তে

মায়ের এই কাজটাই ভালো লাগত তখনকার পপির। সে হয়ে উঠল মায়ের সহকারী। তবে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার ইচ্ছে তখন তার প্রবল। তাই একটা ফন্দি আঁটল ক্লাস ফাইভের এই ছাত্রী। মায়ের অবর্তমানে যে রোগীরা আসত, তাদের হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দিত পপি। রোগী ফিরে যাওয়ার আগে বলত, ‘আমি কিন্তু ওষুধের বিনিময়ে টাকা নিই।’ এভাবেই বেশ কিছু অর্থ জমানোর পর স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে গেল নাজ সিনেমা হলে, সেও একটা কাহিনি বানিয়ে, শিক্ষকদের জব্দ করে।

ছোটবেলার যে গল্পগুলো বলছিলেন ববিতা, তাতে মনে হলো ছাত্রী হিসেবে ভালো হলেও তিনি ছিলেন ‘দুষ্টুর শিরোমণি’। এ জন্য শিক্ষকদের ভালোবাসা যেমন পেয়েছেন, তাঁদের কড়া চোখের সামনেও পড়তে হয়েছে।

সুচন্দা-ববিতা-চম্পা—তিন বোনই চলচ্চিত্রজগতে দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করেছেন একসময়। তিন বোনই অসাধারণ সব ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করেছেন। তবে ববিতার যে আন্তর্জাতিক খ্যাতি, সেটা বাংলাদেশের একজন শিল্পীর জন্য অবশ্যই গর্বের, সম্মানের।

তিন বোন, তিন অভিনেত্রী—চম্পা-ববিতা-সুচন্দা
তিন বোন, তিন অভিনেত্রী—চম্পা-ববিতা-সুচন্দা

রুপালি জগতে

চলচ্চিত্রে অভিনয় করবেন, এ রকম ভাবনা একেবারেই ছিল না মনে। বাড়িতে পড়াশোনার পাশাপাশি নাচ, গান, আবৃত্তি শিখতে হতো ঠিকই, কিন্তু তা চলচ্চিত্রের দিকে কোনো দিন তাঁকে নিয়ে যাবে, এ কথা ববিতা ভাবেননি কখনো। জহির রায়হান পরিচালিত সংসার তাঁর প্রথম ছবি। রাজ্জাক-সুচন্দার মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। ইচ্ছার বিরুদ্ধে। এরপর জহির রায়হান জ্বলতে সুরুজ কা নিচে নামে একটি উর্দু ছবি শুরু করেন, কিন্তু সে ছবিটি শেষ করতে পারেননি। ১৯৬৯ সালে জহির রায়হানের শেষ পর্যন্ত ছবিটিতে নায়িকা হিসেবে প্রথম অভিনয় করেন। পথচলা এভাবেই শুরু। বড় বোন সুচন্দার স্বামী ছিলেন জহির রায়হান। চলচ্চিত্র-বিষয়ক খুঁটিনাটি অনেক কিছু তাঁর কাছ থেকেই শিখেছেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পরপরই ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে বড় ভাই শহীদুল্লা কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে মিরপুরে শহীদ হন জহির রায়হান। ববিতা আফসোস করে বললেন, ‘জহির ভাই লেট দেয়ার বি লাইট ছবিটা বানাতে চেয়েছিলেন। খুব মিষ্টি মিষ্টি সংলাপ লিখতেন তিনি। কিছু একটা মনে হলো, কম্বল মাথার ওপর টেনে লিখে ফেলতেন। তারপর কম্বল থেকে বের হয়ে এসে পড়ে শোনাতেন। জহির ভাই বলতেন, “লেট দেয়ার বি লাইটই হবে আমার শেষ ছবি।” ওই ছবিতে ইভা নামের অদ্ভুত চরিত্রটি ছিল আমার। কী সুন্দর সংলাপ ছিল সে ছবিতে, “তপু, আই ওয়ান্ট টু বি দ্য মাদার অব ইয়োর সান।” দুঃখের বিষয়, জহির ভাই ছবিটি শেষ করে যেতে পারলেন না।’

কানাডায় ছেলে অনিকের সঙ্গে মা ববিতা
কানাডায় ছেলে অনিকের সঙ্গে মা ববিতা

১৯৭০ সালে জহির রায়হানের গল্পে টাকা আনা পাই ছবিটি নির্মাণ করেন বাবুল চৌধুরী। ববিতার জন্য এ ছবিটি ছিল একটি টার্নিং পয়েন্ট। ববিতার এরপরের যাত্রাপথ স্বনির্মিত। প্রতিভাবান পরিচালক, প্রযোজক, সিনেসাংবাদিক এবং দর্শকদের ভালোবাসাই ববিতাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে সামনের দিকে।

বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান নায়কদের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন ববিতা। রাজ্জাক–ববিতা, জাফর ইকবাল–ববিতা, ফারুক–ববিতা, সোহেল রানা–ববিতা, উজ্জ্বল–ববিতা  জুটি হয়ে উঠেছিল তুমুল জনপ্রিয়।

রঙিন দিনের সাদাকালো ববিতা
রঙিন দিনের সাদাকালো ববিতা

সিদ্ধান্তগুলো নিজের

স্বাধীনতার পর অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। করেছেন আলোর মিছিল-এ। নারায়ণ ঘোষ মিতার এই ছবিতে রাজ্জাক ছিলেন ববিতার মামা। ছবিটি শেষ হয়েছে আলো বা ববিতার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। এ রকম একটি ছবিতে অভিনয় করবেন ববিতা, এটা চাইছিলেন না কাছের মানুষেরা। কারণ, খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ছিল সেটা। যাঁর সঙ্গে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন, সেই রাজ্জাক হবেন মামা আর শেষ দৃশ্যে মরে যেতে হবে—এতে তো ববিতার সদ্য শুরু হওয়া ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা! ববিতা কিন্তু কোনো কথাই শুনলেন না। আস্থা রাখলেন পরিচালকের ওপর। আস্থা রাখলেন গল্পের ওপর। এবং সত্যিই, মৃত ‘আলো’ ববিতার ক্যারিয়ারকে শুধু আলোকিতই করল না, বিচিত্র সব চরিত্রের প্রতি তাঁর আগ্রহও বাড়াল। বিশেষ করে, এরপর আমরা আমাদের চলচ্চিত্রে এমন এক নান্দনিক নাগরিক শিল্পীকে পেয়ে যাই, যা তুলনাবিহীন। আর বিদেশি চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে বাংলাদেশের পতাকা হাতে ববিতার উজ্জ্বল উপস্থিতি আমাদের প্রাণিত করতে থাকে। এবং আমরা অবাক হয়ে যাই এ কথা জেনে, বহু ভালো ছবিতেই তিনি কাজ করেছেন বিনা পারিশ্রমিকে, কেবল চরিত্রটি পছন্দ হয়ে যাওয়ার কারণে আর গল্পটি ভালো বলে। ববিতা অভিনীত আরও কয়েকটি ছবির কথা উল্লেখ না করলে তাঁকে চেনা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। নয়নমনি, সুন্দরী, লাঠিয়াল, বাঁদী থেকে বেগম, অনন্ত প্রেম, হারজিৎ, একমুঠো ভাত, বসুন্ধরা, দহন, দূরদেশ

ববিতা এখন
ববিতা এখন

বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রবর্তন হওয়ার পর ১৯৭৬ সাল থেকে পরপর তিনবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। এরপর আবারও পেয়েছেন ১৯৮৫ সালে। এ ছাড়া শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রের জন্য দুবার এবং শ্রেষ্ঠ প্রযোজক হিসেবে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। বাচসাস পুরস্কার, বাংলা চলচ্চিত্র প্রসার সমিতি, বেঙ্গল ফিল্মস জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার তিনি পেয়েছেন।

অবুঝ হৃদয় ছবিতে জাফর ইকবালের সঙ্গে ববিতা
অবুঝ হৃদয় ছবিতে জাফর ইকবালের সঙ্গে ববিতা

উৎসবের নায়িকা

ববিতাই গত শতাব্দীর সত্তর ও আশির দশকে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। মস্কো ও তাসখন্দ চলচ্চিত্র উৎসবে তো তিনি অংশ নিয়েছেন অসংখ্যবার। এমনকি মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে একবার হয়েছিলেন জুরিবোর্ডের সদস্যও। তিনি গেছেন জার্মানি, ইতালি, ভারত, চেকোস্লোভাকিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিসরসহ বহু দেশের চলচ্চিত্র উৎসবে। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মানুষ ভারতীয় অভিনেতা রাজ কাপুরে আসক্ত ছিল। ববিতার ছবি মুক্তি পাওয়ার পর সেখানে ববিতাকে নিয়েও শুরু হয়েছিল উন্মাদনা। মস্কো বা তাসখন্দে ট্যাক্সি ড্রাইভার, সেলুনের নাপিত, পথচলতি কিশোর কাছে এসে বলেছে, ‘ববিতা! ওচিন খারাশো’—রুশ ভাষায় কিছু শব্দ নির্ভুল উচ্চারণ করে ববিতা যখন তাঁর উৎসব কাহিনি বলছিলেন, তখন আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠছিল, বাংলাদেশের পতাকা হাতে সুহাসিনী এক নারী ছুটে চলেছেন দেশ থেকে দেশে, তুলে ধরছেন বাংলাদেশের পরিচয়।

লাইলী মজনু ছবিতে রাজ্জাকের সঙ্গে
লাইলী মজনু ছবিতে রাজ্জাকের সঙ্গে

সেই যে দিনগুলি

সে যুগের চলচ্চিত্রপ্রেমিক মানুষ ‘হাওয়া থেকে’ কিছু পেতেন। সে রকমই একটি খবর হাওয়ায় ভেসে বেড়িয়েছে তখন: ববিতার সঙ্গে জাফর ইকবালের সম্পর্ক। নিজের গুলশানের সাজানো-গোছানো বাগানঘেরা বাড়িতে এ প্রশ্ন শুনে হাসলেন ববিতা। বললেন, ‘পরিষ্কার করে বলি। জাফর ইকবালের সঙ্গে যখন আমার প্রথম অভিনয়, তখনো আমাদের টিনএজ। ওই বয়সে একসঙ্গে কাজ করব আর ভালো লাগালাগি হবে না—সেটাই তো অস্বাভাবিক। বাংলাদেশে যত নায়ক এসেছে, তাদের মধ্যে আমার দেখা সবচেয়ে স্মার্ট নায়ক হলো জাফর ইকবাল। ও তো শুধু অভিনয় করত না, গানও করত। ভালো গানের গলা ছিল ওর। ছিল মুক্তিযোদ্ধা। দর্শকেরা আমাকে আর জাফর ইকবালকে গ্রহণ করেছিল। নতুন সিনেমার প্রস্তাব এলে আমি পরিচালককে বলতাম, জাফর ইকবালকে নিলে কেমন হয়? তবে বলতেই হবে, ও ছিল ছেলেমানুষের মতো।

বসুন্ধরা ছবিতে ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে
বসুন্ধরা ছবিতে ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে

‘জাফর ইকবালের গাওয়া “সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী” গানটি নিয়ে অনেকেই ভাবত, ওই গান ইকবাল গেয়েছে আমাকে নিয়ে। তখন দর্শকদের মনে হতো আমার আর ইকবালের সম্পর্কটা দূরে সরে যাচ্ছে। আমি ইকবালকেই জিগ্যেস করলাম, “ইকবাল সাহেব, আপনি কি এই গানটি আমাকে মনে রেখে গেয়েছেন?” ইকবাল বলল, “সুরকার আলাউদ্দীন আলী নাকি তাকে বলেছেন, তুমি এই গানটা গাও, সবাই মনে করবে তুমি ববিতার জন্য গেয়েছ। সুপারহিট হয়ে যাবে গানটি।” সত্যিই এ গানটি সুপারহিট হয়েছিল। অনেকের ধারণা ছিল, আমরা দুজন একে অপরের হব। সেটা হয়নি। আমি জাফর ইকবালকে এখনো ভুলতে পারিনি।’

নয়নমনি চলচ্চিত্রে ফারুকের সঙ্গে ববিতা
নয়নমনি চলচ্চিত্রে ফারুকের সঙ্গে ববিতা

এখনো ববিতা

সংসারে এক সন্তান ববিতার। অনিক। পড়াশোনা করছে কানাডায়। মাঝে মাঝে ছেলেকে দেখতে কানাডায় যান ববিতা। ঢাকার গুলশানের বাড়িতে অনিকের ঘরটিতে গিয়ে বসেন কখনো কখনো। সেখানেই ল্যাপটপের কাজগুলো সারেন। মনে হয়, ছেলের পাশে বসেই কাজগুলো করছেন।

মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা ২০১৮ পাচ্ছেন জেনে খুব খুশি হলেন। বললেন, ‘এ নিয়ে কিছু বলার জন্য ভাষা নেই আমার। যাঁরা বিচারক ছিলেন, তাঁদের ধন্যবাদ। আজীবন সম্মাননার মানে আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে।’

চলচ্চিত্রের বর্তমান হাল দেখে এই জগৎ থেকে একটু সরে দাঁড়িয়েছেন ববিতা। শিল্পের প্রতি শিল্পীর দায়বদ্ধতার অভাব দেখে দুঃখ পান। শিল্পী তিনি। তাই এখনো ভাবেন, ভালো গল্প পেলে, ভালো অভিনয়ের সুযোগ থাকলে অবশ্যই ছবিতে অভিনয় করবেন। অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে কোনো ছবি হলে একটি অটিস্টিক শিশুর সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ এলে, সে সুযোগ কাজে লাগাতে চান ববিতা। এখন সে রকম ছবির জন্যই অপেক্ষা করছেন।