ভেলকি দেখাল 'আয়নাবাজি'

‘আয়নাবাজি’ ছবির পোস্টারে চঞ্চল চৌধুরী
‘আয়নাবাজি’ ছবির পোস্টারে চঞ্চল চৌধুরী

‘আয়নাবাজি’ ছবিটি মুক্তির পর বাংলাদেশের সিনেমাপ্রেমী দর্শকেরা প্রেক্ষাগৃহে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। দেশের বাইরে থাকা বাঙালিদের মধ্যেও এই ছবিটি দারুণ সাড়া ফেলে। দর্শকদের মন জয়ের পর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে জুরিবোর্ডে থাকা বিচারকদেরও মন জয় করে নিয়েছে ছবিটি। ২০১৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে অমিতাভ রেজার এই ছবিটি সাতটি পুরস্কার জিতে নিয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে গতকাল বুধবার পুরস্কার বিজয়ীর তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবারের আসরে সেরা চলচ্চিত্র তৌকীর আহমেদের ‘অজ্ঞাতনামা’র একটি দৃশ্যে ফজলুর রহমান বাবু ও শাহেদ আলী
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবারের আসরে সেরা চলচ্চিত্র তৌকীর আহমেদের ‘অজ্ঞাতনামা’র একটি দৃশ্যে ফজলুর রহমান বাবু ও শাহেদ আলী

২০১৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘আয়নাবাজি’ ছবিটি সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা, সেরা চিত্রগ্রাহকসহ মোট সাতটি পুরস্কার জিতে নিয়েছে। পুরস্কার অর্জনের দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানটি দখল করে নিয়েছে নাদের চৌধুরী পরিচালিত ‘মেয়েটি এখন কোথায় যাবে’ ছবিটি। সেরা গীতিকার, সেরা সুরকার ও সেরা সংগীত পরিচালকসহ চারটি পুরস্কার জিতে নিয়েছে এই ছবি। এবারের আসরে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতে নিয়েছে তৌকীর আহমেদ পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘অজ্ঞাতনামা’। সেরা চলচ্চিত্রের পাশাপাশি এটি সেরা কাহিনিকার এবং খল চরিত্রের সেরা অভিনেতার পুরস্কারও জিতে নেয়। গৌতম ঘোষের ‘শঙ্খচিল’ পেয়েছে তিনটি পুরস্কার।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের এবারের আসরে প্রধান চরিত্রে সেরা অভিনয়শিল্পী তিশা-চঞ্চল চৌধুরী ও কুসুম শিকদার
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের এবারের আসরে প্রধান চরিত্রে সেরা অভিনয়শিল্পী তিশা-চঞ্চল চৌধুরী ও কুসুম শিকদার

সরকার এ বছর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে গৌরবোজ্জ্বল ও অসাধারণ অবদানের জন্য ২৬টি বিভাগে ২৯ জন ব্যক্তিকে সম্মাননা জানাচ্ছে। প্রামাণ্যচিত্রের জন্য সম্মাননা পাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও একাত্তর মিডিয়া লিমিটেড। এবার আজীবন সম্মাননা যৌথভাবে পাচ্ছেন চলচ্চিত্রের দুই বরেণ্য অভিনয়শিল্পী ফারুক ও ববিতা।

‘আয়নাবাজি’ ছবির পরিচালক অমিতাভ রেজা বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুরস্কার পেতে তো ভালোই লাগে। ছবি বানাই মানুষের জন্য, তখন তো পুরস্কারের কথা চিন্তা করিনি। ভবিষ্যতেও হয়তো যত ছবি বানাব, মানুষের জন্যই বানাব। মানুষের জন্য ছবি বানাতে বেশ ভালো লাগে।’

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের এবারে আসরে যাঁরা বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন আয়নাবাজি পরিচালক। তিনি বলেন, ‘জাতীয় পুরস্কার বেশ গুরুত্বপূর্ণ, মাননীয় জুরি যাঁরা ছিলেন, তাঁরা যে চিন্তা করেছেন, এই ছবিতে এসব বিভাগে পুরস্কার দেওয়ার জন্য আমি অনেক খুশি। সবচেয়ে বড় কৃতজ্ঞতা, সেরা পরিচালকের পুরস্কার পাওয়ায়। এই বিভাগে পুরস্কার পাওয়া মানে, আমার ডিরেক্টরিয়াল টিমের সবার পাওয়া। তাঁরাই আমাকে তৈরি করেছেন এই ছবির জন্য। আমার টেকনিক্যাল টিমে যাঁরাই পেয়েছেন, তাঁদের জন্যও আমি অনেক খুশি। তবে একটু আশা করছিলাম, এই ছবির শিল্প নির্দেশনা বিভাগে পুরস্কার পাব। “আয়নাবাজি”র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে শিল্প নির্দেশনা। যাই হোক, বিজ্ঞ জুরিবোর্ড যা ভেবেছেন তাই করেছেন।’

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের এবারের আসরে আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন ববিতা ও ফারুক
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের এবারের আসরে আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন ববিতা ও ফারুক

পরিচালকের পাশেই পাওয়া গেল ‘আয়নাবাজি’ ছবির চিত্রনাট্যকার গাউসুল আলম শাওনকে। তাঁর অনুভূতি জানতে চাইলে বললেন, ‘জাতীয় পুরস্কারের চেয়ে বড় পুরস্কার তো হয় না। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই পুরস্কার পেয়ে আমরা অনেক খুশি। আমাদের প্রথম ছবি। প্রথম ছবিতেই জাতীয় পুরস্কার, অনেক কৃতজ্ঞতাবোধ করছি। আবেগপ্রবণ হচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী অথবা জাতীয় পর্যায়ের কোনো ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে পুরস্কার নেব, অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে, সামনে আরও ভালো কাজ করতে হবে। তবে আমার মনে হয়েছে, এই ছবিটি সেরা ছবি হতে পারত, তারপরও বিজ্ঞ জুরিরা যা ভেবেছেন, তাতেই সন্তুষ্ট। আমাদের কোনো দুঃখবোধ নেই।’

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের এবারের আসরে যাঁরাই বিজয়ী হয়েছেন, শিগগিরই একটি জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাঁদের সবার হাতে সম্মাননা ট্রফি তুলে দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের এবারের আসরে সেরা সুরকার ও সংগীতপরিচালক ইমন সাহা এবং গীতিকারের পুরস্কার গাজী মাজহারুল আনোয়ার
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের এবারের আসরে সেরা সুরকার ও সংগীতপরিচালক ইমন সাহা এবং গীতিকারের পুরস্কার গাজী মাজহারুল আনোয়ার

এক নজরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৬

আজীবন সম্মাননা : ফারুক ও ববিতা

সেরা চলচ্চিত্র : অজ্ঞাতনামা (ফরিদুর রেজা সাগর)
সেরা পরিচালক : অমিতাভ রেজা চৌধুরী, (আয়নাবাজি)
সেরা অভিনেতা : চঞ্চল চৌধুরী (আয়নাবাজি)
যৌথভাবে সেরা অভিনেত্রী : তিশা (অস্তিত্ব) ও কুসুম শিকদার (শঙ্খচিল)
যৌথভাবে পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেতা : আলীরাজ (পুড়ে যায় মন) ও ফজলুর রহমান বাবু (মেয়েটি এখন কোথায় যাবে)
পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেত্রী : তানিয়া আহমেদ (কৃষ্ণপক্ষ)
খল চরিত্রে সেরা অভিনেতা : শহীদুজ্জামান সেলিম (অজ্ঞাতনামা)
সেরা শিশুশিল্পী : সাঁঝবাতি (শঙ্খচিল)
সেরা সংগীত পরিচালক : ইমন সাহা (মেয়েটি এখন কোথায় যাবে)
সেরা নৃত্য পরিচালক : হাবিব (নিয়তি)
সেরা গায়ক : সৈয়দ ওয়াকিল আহাদ (দর্পণ বিসর্জন, গান : অমৃত মেঘের বারি)
সেরা গায়িকা : মেহের আফরোজ শাওন (কৃষ্ণপক্ষ, গান : যদি মন কাঁদে)
সেরা গীতিকার : গাজী মাজহারুল আনোয়ার (মেয়েটি এখন কোথায় যাবে, গান: বিধিরে ও বিধি)
সেরা সুরকার : ইমন সাহা (গান : বিধিরে ও বিধি)
সেরা কাহিনিকার : তৌকীর আহমেদ (অজ্ঞাতনামা)
সেরা সংলাপ রচয়িতা : রুবাইয়াত হোসেন (আন্ডার কনস্ট্রাকশন)
সেরা চিত্রনাট্যকার : অনম বিশ্বাস ও গাউসুল আলম (আয়নাবাজি)
সেরা সম্পাদক : ইকবাল আহসানুল কবির (আয়নাবাজি)
সেরা শিল্প নির্দেশক : উত্তম গুহ (শঙ্খচিল)
সেরা চিত্রগ্রাহক : রাশেদ জামান (আয়নাবাজি)
সেরা শব্দগ্রাহক : রিপন নাথ, (আয়নাবাজি)
যৌথভাবে সেরা পোশাক ও সাজসজ্জা : সাত্তার (নিয়তি) ও ফারজানা সান (আয়নাবাজি)
সেরা রূপসজ্জা : মানিক (আন্ডার কনস্ট্রাকশন)
সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র : ঘ্রাণ (এস এম কামরুল আহসান)
সেরা প্রামাণ্য চলচ্চিত্র : জন্মসাথী (একাত্তর মিডিয়া লি: ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর)