অগ্রজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ মুগ্ধ করেছে

‘মিউজিক এন রিদম’ অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন শিল্পী নদী
‘মিউজিক এন রিদম’ অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন শিল্পী নদী

এবারের টিভি সমালোচনা শুরু করব সরাসরি প্রচারিত একটি গানের অনুষ্ঠান দিয়ে। অনুষ্ঠানটির নাম ‘মিউজিক এন রিদম’, প্রচারিত হলো ১৯ এপ্রিল রাত ১১টা ৩০ মিনিটে এনটিভিতে। এ দিন শিল্পী ছিলেন নদী, উপস্থাপক ছিলেন শুভ। নদী একটানা প্রায় দেড় ঘণ্টা গান করেছেন এ অনুষ্ঠানে। শুরু করেছেন রবীন্দ্রসংগীত ‘তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম’ দিয়ে। তারপর একে একে নিজের গান, অন্যের জনপ্রিয় গান সবই করেছেন। তাঁর গানের নির্বাচন ছিল বৈচিত্র্যময়, উপস্থাপনা ছিল আন্তরিকতাপূর্ণ। তাঁর গাওয়া গানগুলোর মধ্যে ছিল ‘লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প’, ‘চোখের ভেতর স্বপ্ন থাকে’, ‘ওই জাদুটা যদি সত্যি হয়ে যেত’, ‘যখন আমি থাকব না গো’ ইত্যাদি। তাঁর কণ্ঠ সুরেলা ও সাবলীল। সুরজ্ঞানও চমৎকার। তাঁর বিনয়ী উপস্থাপনা দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। তিনি অনুষ্ঠানের শেষ করেছেন সদ্যপ্রয়াত শিল্পী ও সুরকার লাকী আখান্দের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘আমায় ডেকো না, ফেরানো যাবে না’ গেয়ে। অগ্রজের প্রতি তাঁর এ শ্রদ্ধাবোধও মুগ্ধ করেছে। তবে উপস্থাপক শুভর উপস্থাপনা আরেকটু সাবলীল হলে অনুষ্ঠানটি আরও আকর্ষণীয় হতো।

২০ এপ্রিল রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে দেশ টিভিতে প্রচারিত হলো সাপ্তাহিক নাটক অন্তর্গত। রচনা করেছেন মাসুম শাহরিয়ার এবং পরিচালনা করেছেন মুসকান সুমিকা। অভিনয় করেছেন সাবেরী আলম, জিয়াউল হাসান কিসলু, সানজিদা প্রীতি প্রমুখ।

নাটকের গল্পটি সংক্ষেপে এ রকম—আলাওল নামে এক বয়োজ্যেষ্ঠের জীবনকাহিনি নিয়ে তরুণ নির্মাতা সুচিত্রা নির্মাণ করে একটি নাটক। সেই নাটকের গল্পে দেখানো হয়, গ্রামের ছেলে আলাওল উচ্চশিক্ষার জন্য আত্মীয়ের পরিচয়সূত্রে ঢাকা এসে ওঠে জোবেদাদের বাসায়। জোবেদার ছোট বোনকে পড়ানোর বিনিময়ে আশ্রয় পায় চিলেকোঠায়। তারপর জোবেদার উৎসাহে তাদের মাঝে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে, লুকিয়ে তারা কথা বলে, মেলামেশা করে, তবু শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে যায়। বাবা বের করে দেয় আলাওলকে, সে আশ্রয় নেয় ভার্সিটির হলে। জোবেদা স্থির করে পালিয়ে বিয়ে করবে আলাওলকে, কিন্তু তার আগেই তার বাবার চক্রান্তে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় আলাওলকে। জেল হয়ে যায় আলাওলের। এরপর জোবেদা আর আলাওলের কোনো খবর জানে না। নাটকটি যেদিন প্রচারিত হয়, তার পরদিনই বৃদ্ধা জোবেদা নির্মাতা সুচিত্রাদের বাসায় এসে হাজির হয় আলাওলের খোঁজে। কিন্তু সেদিনও সে পায় না আলাওলকে।

গল্প এখানেই শেষ, কিন্তু গল্পের রেশ রয়ে যায় দর্শকের মনে। এরপর জোবেদা কি খুঁজে পেয়েছিল আলাওলকে? পেলে কী হয়েছিল তাদের শেষ পরিণতি। সুন্দর গল্প। নাটকটি দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, ষাটের দশকের একটি উপন্যাসের নাট্যরূপ দেখছিলাম। সময় অনুযায়ী লোকেশন নির্বাচন এবং পাত্র-পাত্রীদের পোশাক ও মেকআপ নাটকটিকে করেছে বাস্তবানুগ ও আকর্ষণীয়। চরিত্রানুযায়ী সবার অভিনয়ও ছিল যথার্থ ও সাবলীল।

১৯ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে ইমরাউল রাফাতের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় মাছরাঙা টিভিতে প্রচারিত হলো সাপ্তাহিক টেলিছবি আনাড়ি। সংক্ষেপে টেলিছবির গল্পটি হলো জনি ও রনি দুই ভাই। ভার্সিটিতে ভর্তির উদ্দেশ্যে তাদের বাসায় আসে বাবার বন্ধুর মেয়ে তুলি। তুলির রূপে ও গুণে দুই ভাই–ই মুগ্ধ। এর মাঝে বিভিন্ন অছিলায় ছোট ভাই রনির সঙ্গে বাইরে যায় ও ঘুরে বেড়ায় তুলি। দুজনের মাঝে গড়ে ওঠে সখ্য। বড় ভাই জনি চাকরি নিয়ে ব্যস্ত হলেও সে ছাত্র ভালো, তাই সময় পেলে তুলিকে পড়ালেখায় সহায়তা করে। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে তুলি বাড়ি চলে যায়। এর মাঝে জনির বিয়ের কথা উঠলে সে মা–বাবাকে সরাসরি জানায়, তুলিই তার পছন্দ। ছোট ভাই রনি কথাটি শুনে ক্ষুব্ধ হয়ে অমত জানায়। কিন্তু কেন তার অমত বা অপছন্দ, তা জানায় না। এরপর তার কথা আমলে না নিয়ে মা–বাবা ও জনি যায় তুলিদের বাসায়। তারপর ফিরে এসে জনি ছোট ভাই রনিকে জানায়, তারা তুলির সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক করে এসেছে। এখানেই গল্পের শেষ।

এককথায় বলা যায়, সাদামাটা গল্প এবং গল্পের বুননেও নেই কোনো মুনশিয়ানার ছাপ। যে কারণে ঘটনাগুলো আরোপিত মনে হয়েছে। দর্শকমনে গল্প বা ঘটনা কোনো রেখাপাতই করতে পারেনি। দুই ভাইয়ের চরিত্রটি যথার্থ মনে হয়নি। যেমন ছোট ভাইকে দেখানো হয়েছে বাড়ির কাজের ছেলের মতো। তারও কোনো যৌক্তিকতা নেই গল্পের ধারাবাহিকতায়। আবার শেষে মা–বাবা ও বড় ভাই মিলে তুলিদের বাসায় গেল বড় ভাইয়ের বিয়ের জন্য আর সেখানে গিয়ে ছোট ভাইয়ের বিয়ে ঠিক করে এল, এটি পুরোপুরি অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক মনে হয়েছে। আর অযৌক্তিক কোনো কিছুই দর্শক গ্রহণ করেন না। লেখক ও নির্মাতা হয়তো শেষে দর্শককে একটা চমক দিতে চেয়েছেন। কিন্তু তাঁরা বুঝতে পারেননি এখন এত সহজে দর্শকহৃদয়ে চমক লাগে না।