খুলছে ঈদের মৌসুমি প্রেক্ষাগৃহ

পাবনার বনোয়ারির মধুমতির মতো শ খানেক হল এবার ঈদ উপলক্ষে খুলছে। ছবি: প্রথম আলো
পাবনার বনোয়ারির মধুমতির মতো শ খানেক হল এবার ঈদ উপলক্ষে খুলছে। ছবি: প্রথম আলো

আশির দশকেও প্রায় ১২০০ প্রেক্ষাগৃহ ছিল সারা দেশে। কমতে কমতে এখন সিনেমা হলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০০-এর মতো, যেখানে সারা বছর নিয়মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। তবে ঈদের সময় এই সংখ্যা বাড়ে আরও প্রায় ১০০।

৭৫ থেকে ১০০টি হল ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে খোলা হয়। তবে এর মধ্যে কিছু প্রেক্ষাগৃহ পয়লা বৈশাখ, ভালোবাসা দিবস ধরে সপ্তাহখানেকের জন্য খোলা হয়। বাকি সারা বছরই হলগুলো তালাবদ্ধ থাকে। এসব হল চলচ্চিত্রপাড়ায় ‘মৌসুমি সিনেমা হল’ নামে পরিচিত। আসন্ন ঈদুল ফিতরেও শ খানেক বন্ধ থাকা সিনেমা হল খোলার কথা শোনা যাচ্ছে।

এর মধ্যে গফরগাঁওয়ের রূপান্তর, ময়মনসিংহের আউলিয়ানগরের চিত্রপুরী, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের সখী, কুমিল্লার কোম্পানীগঞ্জের লাকী, পূর্ণিমা, কুমিল্লার কংসনগরের স্টার ভিউ, টাঙ্গাইলের বল্লাবাজারের আলোছায়া, ঘাটাইলের কনক, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের অনামিকা, মতলব মহাদেবপুরের বুলবুল টকিজ, রাজমহল, পাবনার চাটমোহরের লাভলী, উপহার, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর জিকু, রুজভী, পাবনার বনোয়ারির মধুমতিসহ দেশজুড়ে শ খানেক সিনেমা হল ঈদ উৎসবে খুলছে।

পাবনার বনোয়ারিতে চারটি হলের মধ্যে বলাকা, শাপলা ও নাগ কয়েক বছর আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। একমাত্র মধুমতি সিনেমা হলটি মৌসুমি হলের তালিকায় আছে। হলটির মালিক রাশিদুল ইসলাম জানান, প্রায় ২৫ বছর বয়স হলটির। ১০ বছর আগেও হলটি থেকে ভালো ব্যবসা হয়েছে। এখন ভালো ছবির অভাবে, দর্শকের অভাবে সারা বছরই বন্ধ থাকে। শুধু ঈদ উৎসবে হলটি খোলা হয়।

রাশিদুল বলেন, ‘সিনেমার প্রতি ভালোবাসার কারণেই লোকসান গুনেও এখনো একেবারেই বন্ধ করিনি হলটি। আশায় আছি, কোনো এক সময় সিনেমার দিন ফিরবে। সিনেমা দেখতে সারা বছরই দর্শক আসবেন।’ তবে তিনি আরও বলেন, ‘যৌথ প্রযোজনার ছবিগুলো ভালো। এই ছবির সারা বছর কম-বেশি দর্শক আছে।’

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর জিকু সিনেমা হলের বয়স প্রায় ৩২ বছর। বছর চারেক হলো হলটিতে সিনেমা প্রদর্শনী অনিয়মিত হয়ে গেছে। পুরো জেলায় ২০টি সিনেমা হলের প্রায় সব কটিই একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু নাগেশ্বরীর জিকু হলটি কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছে। এর স্বত্বাধিকারী এরশাদুল হক জিকু বলেন, ‘ঈদের সময়, পয়লা বৈশাখে কিছু ভালো ছবি আসে। তখন হলটি চালু করি। ভালো ছবি না পাওয়ার কারণে সারা বছর হলে দর্শক আসে না।’
এই হলের মালিক জানান, পাশেই রুজভী নামে আরেকটি হল শুধু দুই ঈদে খোলা হয়।

এদিকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতাদের কথা, সিনেমার সংখ্যা কমে গেছে। বছরে যে কটা ছবি তৈরি হচ্ছে তার মধ্যে ভালো, জনপ্রিয় ছবির অভাবে একের পর এক হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান এক নম্বর উপদেষ্টা মিঞা আলাউদ্দিন বলেন, লোকসান গুনতে গুনতে বড় বড় অনেক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। ছবি নির্মাণও বন্ধ। ছবি না পেয়ে হলও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছরের মাথায় মৌসুমি হলও আর থাকবে না।