একটি পানতোয়ার গল্প

কামার আহমাদ সাইমন ও সারা আফরিন ছবি: কবির হোসেন
কামার আহমাদ সাইমন ও সারা আফরিন ছবি: কবির হোসেন

গ্রাঁ পি ও ফিল্ম সাউথ এশিয়া জুরি অ্যাওয়ার্ডসহ সম্প্রতি ভারতের মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘স্বর্ণশঙ্খ’ জিতেছে শুনতে কি পাও। চলচ্চিত্রটি বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পাচ্ছে আগামীকাল। জেনে নিন নন্দিত এ চলচ্চিত্র সম্পর্কে
ব্যাপারটা কি কাকতালীয়, না অন্য কোনো গল্প আছে এর মধ্যে? কামার আহমাদ সাইমন ও সারা আফরিন পরিচালিত শুনতে কি পাও প্রামাণ্যচিত্রটি যখন বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়ার তোড়জোড় চলছে, তখনই চাউর হলো সংবাদটি—ভারতের মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে—(মিফ-এ) ‘স্বর্ণশঙ্খ’ জিতেছে সেটি!

কাকতালীয় অথবা যা-ই হোক না কেন, মিফ উৎসবে তাঁদের ছবি যখন স্থান পেল, তখন ‘যাক বাবা বাঁচা গেল’ বলে হাঁফ ছাড়লেন সাইমন ও সারা। কারণ, এতে বেঁচে গেছে তাঁদের এক লাখ টাকা! ঘটনা কী?

ঘটনা হলো, গত ডিসেম্বর থেকে শুনতে কি পাও প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির প্রচেষ্টা চলছিল। ছবি মুক্তির জন্য প্রথমে ডিসিপি (ডিজিটাল সিনেমা প্রজেকশন) করতে হবে মুম্বাই থেকে। তাতে অন্য খরচ বাদ দিলেও প্লেন ও হোটেল ভাড়া বাবদ গুনতে হবে নগদ এক লাখ টাকা। এর মধ্যেই এল মিফ থেকে আমন্ত্রণ। ফলে ওই টাকাটা তো বাঁচল।

কামার আহমাদ সাইমন বললেন, ‘ডিসিপি করার জন্য এমনিতেই তো মুম্বাই যেতে হতো আমাদের। তবে চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রণের সুবাদে আমাদের প্লেন ও হোটেল ভাড়া বেঁচে গেল। ভাবলাম, এই উৎসবে গিয়ে রথ দেখা মানে উৎসবে অংশ নেওয়া এবং কলা বেচা অর্থাৎ ডিসিপি করা—দুটোই তো হচ্ছে। পুরস্কার পাব, এতদূর কিন্তু ভাবিনি।’

না ভাবলেও আরেকটি পুরস্কার যোগ হলো শুনতে কি পাও-এর ঝুলিতে। এর আগে গ্রাঁ পি ও ফিল্ম সাউথ এশিয়া জুরি অ্যাওয়ার্ডসহ নানা সম্মানজনক উৎসবে অংশ নিয়ে এবং পুরস্কার পেয়ে নির্মাতাদের জন্য এখন ব্যাপারটি প্রায় ‘ডালভাতের’ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে মনে হয়।

এ কথায় কামার আহমাদ সাইমন ও সারা আফরিন আপত্তি জানিয়ে মাথা ঝাঁকালেন। প্রথম আলোর ছোট্ট বোর্ড রুমটিতে সে মুহূর্তে ভর করেছে নৈঃশব্দ্য। কিন্তু রোববার দুপুরবেলা সেই নৈঃশব্দ্যের ভেতরে প্রথম আলোতে আমরা দেখলাম অন্য এক কামার-সারার মুখ—আনন্দে যেন টগবগ করে ফুটছেন এই নির্মাতা দম্পতি। কেননা, এত দিনে স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে তাঁদের। আগামীকাল শুক্রবার ঢাকার স্টার সিনে কমপ্লেক্সে মুক্তির মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে আন্তজার্তিকভাবে নন্দিত এ ছবিটি। ফলে ‘পুরস্কার পেয়ে কী হবে, ছবিটি যদি না-ই দেখল দর্শক’—কামারের মনে দীর্ঘদিন জমে থাকা এই খেদটিও মিটছে এবার।

শুনতে কি পাও আসলে কেমন ছবি, এ পর্যন্ত ২১টির বেশি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে কোন ক্যারিশমায় আমন্ত্রণ পেল ছবিটি, এত এত পুরস্কারই বা বগলদাবা করল কীভাবে?

প্রশ্নের জবাবে সারা জানালেন, উৎসবে ছবিটি দেখার পর ভি এস কুণ্ডু, সুপ্রিয় সেনের মতো বাঘা বাঘা চলচ্চিত্র বোদ্ধারা স্বীকার করেছেন, ‘এই বাংলাদেশ তো আমরা দেখিনি!’

তাহলে কোন বাংলাদেশের গল্প আছে শুনতে কি পাও-এর পরতে পরতে? যে বাংলাদেশ শ্যামল, যে বাংলাদেশের মানুষ অদম্য, সেই বাংলাদেশের বাস্তব গল্পই এ ছবিকে দিয়েছে অন্য এক মহিমা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিপক্ষে লড়াই করে সাতক্ষীরার সুতারখালি গ্রামের রাখী-সৌমেন ও তাঁদের ছেলে রাহুলের বেঁচে থাকার গল্প; দর্শক, আপনি শোনার পাশাপাশি দেখতেও পাবেন এখানে। আর ছবিটির যখন সবকিছুই বাস্তব, নাচগান ও কল্পনার ছিটেফোঁটা যখন নেই, তখন আপনি দেখবেন কেন ছবিটি?

প্রশ্নের উত্তরে কামার আহমাদ সাইমন যা বলেছেন, সেটি শুনলে আপনিও পেয়ে যাবেন উত্তর: ‘প্রচলিত ধারার ছবির মতো এখানে নায়ক-নায়িকা আছে, মারামারি আছে, আবার আজকাল ফেসবুকে ছেলেমেয়েরা যেমন তাদের বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড প্রসঙ্গে আলাপ করে, তেমনি গ্রামের মেয়েদের গল্পে তাদের মতো করে সরলভাবে উঠে এসেছে এই ঘটনাগুলো। তবে এ ছবি নির্মাণে আমি প্রচলিত পথে হাঁটিনি। প্রচলিতকে আমি বলেছি, চল ঘুরে দাঁড়াই।’

তারপর মুখ খুললেন সারা, ‘শুনতে কি পাও নিয়ে আমাদের বন্ধুমহলে একটি বিতর্ক উঠেছে—ছবিটি কি ডকুমেন্টারি না ফিকশন? আমরা কিন্তু তাদের এই বিতর্ক বেশ উপভোগ করছি। কারণ, ছবি বানানোর সময় আমাদের মাথায় ডকুমেন্টারি কিংবা ফিকশনের চিন্তা ছিল না; কেবল চেয়েছি, আমরা একটি চলচ্চিত্র বানাব।’

চলচ্চিত্র বানানো হলো। সেই চলচ্চিত্র পৃথিবীর কুলীন চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে সুনাম কুড়াল। এরপর? এরপর স্টার সিনে কমপ্লেক্সে যখন মুক্তি পাচ্ছে শুনতে কি পাও, তখন কামার আহমাদ সাইমন বললেন, ‘আমাদের ছবিতে সবই আছে—মাছ, মাংস, ডাল...। আর আছে একটি পানতোয়া।’

সেই পানতোয়াটি কী?

উঁহু, এখনই সেটি বলতে নারাজ পরিচালক দম্পতি।