২৫ রাত পেরিয়ে...

গহনযাত্রা নাটকে সৈয়দা শামছি আরা সায়েকা
গহনযাত্রা নাটকে সৈয়দা শামছি আরা সায়েকা

শঙ্কা, রোমাঞ্চ, ভালো লাগা—শরীর বেয়ে নামছিল সৈয়দা শামছি আরা সায়েকার। একক অভিনেত্রী হিসেবে জীবনের প্রথম রজনী। ২০১৬ সালের জুলাই মাসের একদিন। গহনযাত্রা নাটকের প্রথম প্রদর্শনী ছিল সেদিন। তারপর পেরিয়ে গেছে আরও ২৪টি রাত। পেরিয়ে গেছে দুটি বছরও। ২৫তম প্রদর্শনী শেষে দুই বছরের দীর্ঘ যাত্রার স্মৃতি হাতড়ে বেড়ালেন খানিকটা।

‘জানেন, প্রত্যেক মঞ্চাভিনেত্রীর একটা স্বপ্ন থাকে। সেটি হলো একক অভিনয় করা। আমারও অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল এটি। ম্যাকবেথ নাটক করার আরও আগে থেকে একটা একক নাটক করার ইচ্ছা ছিল মনে। এরপর ম্যাকবেথ-এর পর কয়েকজনই আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। কিন্তু মনের কথাটা কাউকে কখনো বলতে পারিনি। কাছের কেউ কেউ জানত। কিন্তু তখনো একক নাটক আর করা হয়ে ওঠেনি।’ বলছিলেন সায়েকা।

এমন করে করে কয়েকজনের সঙ্গেই একক নাটক নিয়ে আলাপ হয় সায়েকার। তার মধ্যে একজন মঞ্চনাটকের তরুণ নির্দেশক সুদীপ চক্রবর্তী। সায়কা যে নাটকের দলে কাজ করেন, ওই দলের প্রযোজনা ম্যাকবেথ নাটকের নির্দেশক তিনি। সায়কার আগ্রহে সুদীপও আগ্রহ জানালেন। শুরুটা হয়েছিল এমন করেই।

তবে একটি একক নাটক তো আর অত সহজেই মঞ্চে আসে না। তার জন্য চাই পাণ্ডুলিপি, মহড়া, শিল্পীর অভিনয়ের জন্য নিজের তৈরি হওয়া—কত কী! সবকিছু মাথায় নিয়েই সামনের দিকে এগোনোর কথা ভাবেন সায়েকা। নির্দেশনার দায়িত্বটা এসে পড়ল সুদীপ চক্রবর্তীর ওপরেই।

সায়েকা বলেন, ‘আমি সুদীপ দাকে বললাম, আপনি নির্দেশনা দেবেন? তিনি আগ্রহ প্রকাশ করলেন।’ তারপর শুরু হলো পাণ্ডুলিপি বাছাইয়ের পালা। নিজেরাই লিখতে চাইলেন নাটক। লেখার ভার পড়ল তরুণ নাট্যকার রুবাইয়াৎ আহমেদের ওপর। নাটকের গল্পে উঠে এল বর্তমান সময়ের মানুষের হিংসা ও নিপীড়নের কথা। সালমা নামের এক তরুণীকে ঘিরে আবর্তিত হলো গল্প, যিনি এই অন্ধকার সময়ের ভেতর দিয়ে সামনের আলোর দিকে এগিয়ে যান। মুখোমুখি হন সব হিংসুটে ও জিঘাংসু মানুষের। ক্ষতবিক্ষত হন তিনি, তবু আশাবাদী থাকেন। এগিয়ে যান অত্যাচারীদের প্রতিপক্ষ হয়ে। সায়েকা বলেন, সারা বিশ্বের তখনকার সমসাময়িক বিষয়গুলোকে তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। আর একটা বৈশ্বিক রূপ দিতে কোনো অঞ্চলের ঘটনাকে বিশেষভাবে দেখানো হয়নি।

পাণ্ডুলিপি ঠিক হতেই মহড়া শুরু হয়। কসরত চলে সায়েকার নিজেকে গড়ে তোলার। কারণ, একক নাটকে অভিনয় করা অত সহজ বিষয় নয়। দলীয় নাটকে দর্শকের মনোযোগ থাকে নানাজনের প্রতি। কিন্তু একক নাটকে একজনকেই ধরে রাখতে হয় দর্শককে। সায়েকার ভাষায়, নাটকটিতে অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিল শারীরিক কসরতের ব্যাপারটি। আর একক নাটক হিসেবে চ্যালেঞ্জ তো ছিলই। তাঁর অগ্রজ যে ফেরদৌসী মজুমদার, শিমূল ইউসুফের মতো অভিনয়শিল্পীরা।

এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। পদাতিক নাট্য সংসদের ৩৯তম প্রযোজনা হয়ে নাটকটি মঞ্চে আসে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে। ঠিক দুই বছর পর এই জুলাই মাসেই পেরোল নাটকটির ২৫তম রজনী।

দুই বছরের এই যাত্রায় প্রেরণা ছিল একক অভিনয়ের স্বপ্ন। যাত্রায় ছিল রোমাঞ্চও। ২৫তম রাত পেরিয়ে কেমন লাগছে সৈয়দা শামছি আরা সায়েকার? তাঁর উত্তর, ‘আমি ভাবিনি এত তাড়াতাড়ি ২৫তম রজনী পার করব। শুরুতে ভয় ছিল নাটকটি এগিয়ে নিতে পারব, নাকি পারব না। ভালো লাগছে, অন্তত ২৫তম রজনী পার করলাম সুস্থভাবে। ইচ্ছা আছে শরীরে যত দিন শক্তি থাকবে, নাটকটি করতে থাকব। অন্ততপক্ষে শততম রজনী যেন পার হয়।’