বছরব্যাপী 'শিল্পের শহর ঢাকা' কর্মসূচি

‘শিল্পের শহর ঢাকা’ কর্মসূচির আয়োজক বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
‘শিল্পের শহর ঢাকা’ কর্মসূচির আয়োজক বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।

এ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ঢাকা হবে ‘শিল্পের শহর’। এই সময় থেকে চলতি অর্থবছরের (২০১৮-১৯) পুরোটা সময় শিল্পের শহর হিসেবে ঢাকায় বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে শিল্পকলা একাডেমি। প্রতি ১৫ দিন অন্তর এই কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। শীতে থাকবে চলচ্চিত্র উৎসব। যানজট, দূষণ কিংবা ব্যয়বহুল শহরের বদনামের বাইরেও যে ঢাকার ৪০০ বছরের বেশি সময়ের ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক গৌরব আছে—এমনটাই প্রমাণ করতে চায় আয়োজকেরা।

শিল্পকলা একাডেমিতে নিজ কার্যালয়ে প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানান মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রমাণ করতে চাই, শিল্প-সংস্কৃতির বিবেচনায় ঢাকা একটি উত্তম শহর। এ শহরের মানুষ মূলত শান্তিপ্রিয়, সংগীতানুরাগী। পয়লা বৈশাখে যেমন শহরের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে উদ্দীপন নিয়ে, তেমনি সারা বছর মননেও উৎসব তথা সংস্কৃতিকে লালন করে। উত্তরা থেকে পুরান ঢাকা, ডেমরা থেকে কেরানীগঞ্জ—সব স্থানের মানুষকে শিল্পের প্রবাহে যুক্ত করার জন্য আমাদের এই আয়োজন।’

লিয়াকত আলী লাকী জানান, ২৬ জুলাই শহরের বেশ কিছু অঞ্চলে পারফরম্যান্স আর্ট পরিবেশন করা হবে। ২৮ তারিখ পর্যন্ত টানা তিন দিন চলবে এই কর্মসূচি। এতে সুজন মাহবুব, আবু নাসের, অসীম হালদার, ফারহা নাজ মুন, জয় দেব, সঞ্জয় চাকলাদার, জুয়েল রব, ইমরান সোহেল, সরকার নাসরিন টুনটুন, শুভ সাহাসহ ১৬ জন শিল্পী অংশ নেবেন। পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার এলাকা থেকে শুরু করে বাংলাবাজার, লালকুঠি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, কমলাপুর রেলস্টেশন ও সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে হবে এই বিশেষ প্রদর্শনী। আয়োজনের কিউরেট করবেন শিল্পী মাহবুবুর রহমান।

শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত বাউল দলের পদযাত্রা। ফাইল ছবি
শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত বাউল দলের পদযাত্রা। ফাইল ছবি

এই কর্মসূচির পরেই বাউল পদযাত্রার আয়োজন করবে শিল্পকলা একাডেমি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাউলদের নিয়ে ‘শিল্পকলা একাডেমি’ বাউল দল গঠন করা হয়েছে। এখানে থেকে ১০০ জন বাউল এই পদযাত্রায় অংশ নেবেন। পরে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বাউলগান করবেন তাঁরা। সব এলাকায় স্থানীয় শিল্পীরাও এতে যোগ দেবেন। স্থানীয় স্কুলের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেবে এসব কর্মসূচিতে।

‘শিল্পের শহর ঢাকা’ কর্মসূচি চলার সময় এবার আয়োজন করা হবে অষ্টাদশ দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী। আগামী ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় শুরু হবে মাসব্যাপী এই প্রদর্শনী। এ প্রসঙ্গে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, এবার অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা অতীতের রেকর্ড ছড়িয়ে যাবে। এই আয়োজনে বাংলাদেশসহ অংশ নেবে ৬৭টি দেশ।

শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে এই প্রদর্শনীতে এশিয়ার দেশগুলোর শিল্পীরা অংশ নেবেন। প্রদর্শনী ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিসহ নগরীর কয়েকটি ভেন্যুতে হবে। এতে চারুকলা প্রদর্শনী ছাড়াও থাকবে চারুকলা বিষয়ে কয়েকটি সেমিনার, আলোচনাসভা ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী।

এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী আয়োজনের প্রস্তুতির কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় গেলে এখন সেই কাজের প্রস্তুতি চোখে পড়বে।

‘শিল্পের শহর’ কর্মসূচিতে প্রতি ১৫ দিন পরপর পর্যায়ক্রমে নাটক, সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি, চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন থাকবে। আগামী শীতে এই কর্মসূচির আওতায় উন্মুক্তস্থানে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।

‘শিল্পের শহর’ কর্মসূচিটি একসময় ছড়িয়ে পড়বে দেশের সব কটি বিভাগীয় ও জেলা শহরে। প্রতি তিন মাস অন্তর প্রতিটি জেলার শিল্পকলা একাডেমিতে বড় অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানালেন লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, ‘আমাদের লোকবলের সংকট আছে। নইলে প্রতি মাসেই অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নিতাম আমরা।’