নৃত্যগীতে মহাকবিকে স্মরণ

জাতীয় নাট্যশালায় মহাকবি কায়কোবাদ স্মরণে দ্বৈত আবৃত্তি
জাতীয় নাট্যশালায় মহাকবি কায়কোবাদ স্মরণে দ্বৈত আবৃত্তি

২১ জুলাই ছিল মহাকবি কায়কোবাদের ৬৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মহাকবি কায়কোবাদ স্মরণে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকার জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান, মুখ্য আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ফাতেমা কাওসার।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, কায়কোবাদ মূলত গীতিকবি হলেও জাতীয় কর্তব্যসাধনের তাগিদে মহাকাব্য রচনায় হাত দিয়েছিলেন। জাতীয় মন-মানস আর অভীপ্সার পরিচয় দেওয়া সাহিত্যের এক মহৎ উদ্দেশ্য। সে উদ্দেশ্য ‘মহাশ্মশান’-এ আংশিক হলেও সার্থক হয়েছে। হতাশাগ্রস্ত, অর্ধচেতন মুসলিম সমাজে এই গ্রন্থ সেই যুগে যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, সহায়তা করেছিল সমাজকে আত্মসচেতন হতে, জাগিয়ে তুলেছিল আত্মপ্রত্যয়ে। আধুনিক মুসলিম বাংলা সাহিত্যের সেই আদি যুগে এমন একটা মহাকাব্য রচনার পরিকল্পনা আর উদ্যম কম প্রশংসনীয় নয়। কায়কোবাদের এ কৃতিত্বও স্মরণীয়। তাই বলা যায়, জাতির আত্মসন্ধান ও আত্মজিজ্ঞাসার পথে ‘মহাশ্মশান’ একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।

নৃত্য পরিবেশন করছেন শিল্পীরা
নৃত্য পরিবেশন করছেন শিল্পীরা

আলোচনা শেষে পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই আয়োজনে অংশ নেন ঢাকা শিল্পকলা একাডেমি ও নবাবগঞ্জ উপজেলার শিল্পীরা। প্রথম পর্বে অংশ নেন ঢাকা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা। আয়োজনের শুরুতে মহাকবি কায়কোবাদের ‘মহাশ্মশান’ থেকে পাঠ করেন এস এম মহসীন। এরপর একক নৃত্য পরিবেশন করেন র‍্যাসেল প্যারিস প্রিয়াঙ্কা। একক কণ্ঠে সোহানূর রহমান ‘তোমার সমাধি ফুলে ফুলে’ ও ইয়াসমিন আলী ‘অঝোর ধারায় বর্ষা ঝরে’ গেয়ে শোনান। আরও সংগীত পরিবেশন করেন অণিমা মুক্তি গোমেজ আর রোকসানা আক্তার। অনুষ্ঠানে ‘সোনায় বান্ধাইয়া নাও’ ও ‘বুকের ভেতর একটাই আছে নাম’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা। ছিল অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনীও।

নবাবগঞ্জ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনার শুরুতেই দ্বৈত কণ্ঠে ‘প্রার্থনা’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন মিলন গোমেজ ও সীমা মণ্ডল। এরপর ‘ধন্য মুজিব ধন্য’ গানের সঙ্গে ছিল নৃত্য। অনুষ্ঠানে ‘ফুলে ফুলে ঢোলে ঢোলে’, ‘মম মায়াময় স্বপনে’, ‘মুজিব মানে আর কিছু নয়’, ‘পিন্ডারে পলাশের বন’, ‘হাওরা মাঝির নাও’, ‘কনক চাপার ধান’, ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’, ‘ওমুই না শুনুম’ ও ‘বাইদার ঘরের মাইয়া আমি’ গানের সঙ্গে ছিল সমবেত নৃত্য। সম্মেলক কণ্ঠে গীত হয় ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ ও ‘মন মোর মেঘেরও সঙ্গী’। একক কণ্ঠে ‘মেঘ থম থম করে’ গানটি গেয়ে শোনান পল পিন্টু গোমেজ।

মহাকবি কায়কোবাদ ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার আগলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫১ সালের ২১ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজে মারা যান তিনি।