জ্যাজ নিয়ে দেশ-বিদেশ
গানের বাজারের অবস্থা নাকি খারাপ? এমনটা কিন্তু এ সময়ের তরুণ জ্যাজ শিল্পী ইমরান, আর্য আর মুহাইমিনের কথা শুনলে বোঝার উপায় নেই। তাঁদের আলাপে তো শুধু গান দিয়ে বিশ্ব জয়ের গল্পই শোনা যায়। এই যেমন তাঁরা কিছুদিন আগে মালয়েশিয়া ও জার্মানির জ্যাজ শ্রোতাদের মন জয় করে এলেন। গত সপ্তাহে বাংলাদেশি জ্যাজ ব্যান্ড ইমরান আহমেদ ট্রায়োর সঙ্গে সেই বিদেশ সফরের সূত্র ধরেই আলাপ করতে বসা। কথায় কথায় তাঁরা শুনিয়ে দিলেন অনেক স্বপ্ন আর পরিকল্পনার কথা।
জ্যাজ গানের একনিষ্ঠ শ্রোতা বাংলাদেশে খুবই কম। তবে এই ঘরানার সুর, উপস্থাপনা আর সংগীতায়োজন সর্বজনীন হওয়ার সুবাদে শ্রোতারা খুব সহজেই ইমরান-আর্য-মুহাইমিনদের সুরের সঙ্গে জুড়ে যেতে পারেন, এটা নাকি খুব অনুপ্রেরণা দেয় এই দলকে। তাই দেশে কোনো আয়োজনে বাজাতে গিয়ে আজ পর্যন্ত হতাশ হতে হয়নি তাঁদের। খুব আত্মবিশ্বাস নিয়েই বললেন আর্য শ্রেষ্ঠ, ‘আজ পর্যন্ত কোনো গিগ (অনুষ্ঠান) ফাঁকা যায়নি আমাদের। বয়স্ক থেকে ছোট বাচ্চাদেরও দেখেছি আমাদের মিউজিক শুনে উপভোগ করতে।’
দেশের মানুষ যে এভাবে তাঁদের একটু একটু করে গ্রহণ করছেন, এটা অনেক সাহস জুগিয়েছে তাঁদের। এ জন্যই তো নানান অদৃশ্য সংকটে ঘেরা এই সময়েও রাত-দিন এক করে নিজেদের প্রথম অ্যালবামের কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা। জানালেন এই বছর নাগাদই আসবে অ্যালবাম।
শুধু কি অ্যালবাম! এর পাশাপাশি আরও অনেক কাজই সমানতালে করতে হচ্ছে ইমরান আহমেদ ট্রায়ো নামের এই জ্যাজ ব্যান্ডটিকে। নিজেদের প্রচার, নতুন নতুন শোয়ের ভাবনা, শোয়ের জন্য জায়গা ঠিক করা, পৃষ্ঠপোষক খুঁজে বের করা, গান নিয়ে বিদেশ সফরের খোঁজখবর করা—আরও কত-কী! এসব করতে গিয়ে যে সংকটটায় তাদের প্রায়শই পড়তে হয়, সেটা হলো শোয়ের জন্য জায়গা খুঁজে পাওয়া। অনেক স্বপ্ন-সম্ভাবনার আলাপে এই একটাই সমস্যার কথা বললেন তাঁরা। ইমরান বললেন, ‘আমাদের এই গান নিয়েই দিব্যি দিন কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব। কারণ শ্রোতা ঠিকই আছে। টিকিট কেটে তাঁরা আমাদের শুনতেও আসছেন। শুধু শো করার জায়গার অভাব। দেখা যায়, দু-এক সপ্তাহ কিংবা এক মাস পরপর একই জায়গায় আমাদের বাজাতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে একই শ্রোতারা তো আর ঘনঘন আমাদের শুনতে আগ্রহী হবেন না। তাই আরও ভেন্যু বাড়লে সেটা আমাদের জন্য খুব ভালো হয়।’
গত মে মাসে ইমরান আহমেদ ট্রায়ো অংশ নেয় সিঙ্গাপুরে ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ জ্যাজ ফেস্টিভ্যালে। সেখান থেকে গেছে জার্মানিতে, পরপর কয়েকটি জ্যাজ অনুষ্ঠানে বাজাতে। সেখান থেকে ঝুলিভরা অভিজ্ঞতা, নতুন নতুন বন্ধু আর বাংলাদেশের জন্য ভূরি ভূরি প্রশংসা কুড়িয়ে এনেছেন তাঁরা।
মুহাইমিন বললেন, ‘আমদের মৌলিক জ্যাজ কম্পোজিশন (সংগীতায়োজন) শুনে দেশের বাইরের শ্রোতারা খুব অবাক হয়েছেন। আমাদের এসে বলেছেন, বাংলাদেশের জ্যাজ নিয়ে তাঁদের প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে গেছে আমাদের পরিবেশনা। এটা খুবই অনুপ্রেরণা দিয়েছে আমাদের।’ সেই অনুপ্রেরণা থেকে শক্তি নিয়ে ইমরান আহমেদ ট্রায়ো এখন দেশের বাইরে আরও কিছু শোয়ে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। সামনে তাঁদের গন্তব্য ইউরোপেরই আরেকটি দেশ। আশা করছেন, সেটাও সফল হবে গতবারের মতো। কারণ চলার পথে সবার যে সহযোগিতা পাচ্ছে দলটি, তা তাদের থামতে দেবে না। বলে রাখা ভালো, সিঙ্গাপুর ও জার্মানিতে ইমরান আহমেদ ট্রায়ো যে সফরে গিয়েছিল, এর একাংশের পৃষ্ঠপোষক কিন্তু ছিল বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
এ তথ্যটা অনেক গর্ব নিয়েই আমাদের জানালেন দলের সদস্যরা। ইমরান বললেন, ‘আমরা অনেকেই সব সময় অভিযোগ করি—সরকার কিছু করল না, এটা দিল না, ওটা বানাল না। এমন কিন্তু প্রতিবার হয় না। তাদের পর্যন্ত যেতে পারলে তারা ঠিকই এগিয়ে আসে আর ভালো কাজের পৃষ্ঠপোষকতা করে।’