কমছে যৌথ প্রযোজনার ছবি!

যৌথ প্রযোজনায় অনুমোদনপ্রাপ্ত বালিঘর ছবির মহরতে তিশা, শুভ ও নওশাবা
যৌথ প্রযোজনায় অনুমোদনপ্রাপ্ত বালিঘর ছবির মহরতে তিশা, শুভ ও নওশাবা

বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় সর্বশেষ বালিঘর ছবির চিত্রনাট্যের অনুমোদন দিয়েছে যৌথ প্রযোজনার প্রাথমিক যাচাই-বাছাই কমিটি। এরপর গত চার মাসে যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণের জন্য একটি চিত্রনাট্যও জমা পড়েনি বিএফডিসির এই কমিটির কাছে—এমনটিই জানিয়েছেন যৌথ প্রযোজনার চিত্রনাট্য যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সবশেষ বালিঘর ছবির চিত্রনাট্যটির অনুমোদন দিয়েছি। গত কয়েক মাস হলো নতুন কোনো চিত্রনাট্য জমা পড়েনি।’

যৌথ প্রযোজনায় সচরাচর যে প্রযোজক ও নির্মাতারা সিনেমা বানান, তাঁরা বলছেন, ২০১২ সালের নীতিমালা সংশোধন করে নতুন যে নীতিমালা করা হয়েছে, তা মেনে যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা তৈরি করা সম্ভব নয়। আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। সব মিলে যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণে আগ্রহ হারাচ্ছেন প্রযোজকেরা। তাঁদের কথা, সংশোধিত নীতিমালায় যে শর্ত দেওয়া আছে, সেগুলো সিনেমা নির্মাণে তৈরি করেছে প্রতিবন্ধকতা। তা ছাড়া চিত্রনাট্য জমা দেওয়ার পর মাসের পর মাস তা বিভিন্ন ধাপে আটকে থাকার কারণেও নিরুৎসাহিত হচ্ছেন প্রযোজকেরা।

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ব্ল্যাক ছবির বাংলাদেশ অংশের প্রযোজক কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া বলেন, ‘এত কঠিন শর্তের নীতিমালা মেনে যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণ করা সম্ভব নয়।’ এর আগে জাজ মাল্টিমিডিয়া ভারতের এসকে মুভিজ ও জিত্’স ফিল্ম ওয়ার্কসের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় শিকারি, নবাব, বাদশা, বস ২-এর মতো বেশ কিছু আলোচিত ছবি নির্মাণ করেছে। বর্তমান যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে আর তঁারাও যৌথ প্রযোজনায় কোনো ছবি নির্মাণ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জাজ মাল্টিমিডিয়ার চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ বলেন, ‘বর্তমান যে নীতিমালা করা হয়েছে, তা মেনে সিনেমা বানানো কঠিন ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তা ছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী ছবির সবকিছুতেই দুই দেশের সমান অংশগ্রহণ থাকতে হবে—এমনটা মেনে কাজ করা সম্ভব নয়। কারণ, ছবির শুটিং চলার সময়ে চিত্রনাট্যে অনেক পরিবর্তন আসে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আর যৌথ প্রযোজনায় ছবি তৈরি করব না।’

বাংলাদেশে আমদানিতে মুক্তি পাওয়া ছবি ইন্সপেক্টর নটি কে
বাংলাদেশে আমদানিতে মুক্তি পাওয়া ছবি ইন্সপেক্টর নটি কে

একটি বাস্তব উদাহরণ টেনে এই প্রযোজক বলেন, ‘গত ফেব্রুয়ারি মাসে সুলতান: দ্য স্যাভিয়ার ছবিটি যৌথ প্রযোজনায় তৈরির জন্য চিত্রনাট্য জমা দিয়েছিলাম। যাচাই-বাছাই কমিটি থেকে অনুমোদন পেয়েছি গত এপ্রিলে। মাঝে তিন মাস আমাকে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। এ জন্য পরে আর ছবিটি যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণ করিনি।’

গত এক বছরে যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণের চেয়ে প্রযোজকেরা ভারত থেকে বাংলা ছবি আমদানির দিকে বেশি ঝুঁকছেন। কিছু ছবি অদৃশ্যভাবে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হলেও কলকাতার একক ছবি হিসেবে সেগুলো ঢুকছে বাংলাদেশে। গত কয়েক মাসে এভাবেই ইন্সপেক্টর নটি কে, চালবাজ, সুলতান: দ্য স্যাভিয়ারভাইজান এলো রে এ দেশে মুক্তি পেয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে আবদুল আজিজ বলেন, ‘এখন আমদানি করে সহজেই কলকাতার ছবি এখানে মুক্তি দেওয়া যাচ্ছে। তাই কঠিন নিয়ম মেনে যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণের দরকার কী?’

তবে এ দেশে আমদানি করা ভারতীয় বাংলা ছবির মুক্তিও সীমিত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি খসড়া তৈরির কাজও চলছে বলে জানান আমদানি-রপ্তানি ছবির প্রিভিউ কমিটির সদস্য মুশফিকুর রহমান গুলজার। তিনি বলেন, ‘আমদানির নামে ঢালাওভাবে এখানে ছবি আসতে পারবে না। মাসে অল্পসংখ্যক ছবি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে।’