যে নাচ দুর্ঘটনার কারণ

ড্রেক
ড্রেক

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যখন পুরো দেশের কিশোর-তরুণেরা সরব, অন্যদিকে তখন তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এক নাচের ‘চ্যালেঞ্জ’ বিশ্বব্যাপী দুশ্চিন্তা ছড়াচ্ছে। ‘কিকি চ্যালেঞ্জ’ নামের সেই ‘ভাইরাল’–কাণ্ড এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুলিশ ও সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকারীদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চ্যালেঞ্জে দেখা যায়, তরুণ-তরুণীরা চলন্ত গাড়ির দরজা খুলে রাস্তায় নেমে যান এবং চলন্ত গাড়ির গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে গাড়ির ভেতরে থাকা ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে নাচতে শুরু করেন। এই নাচের কারণে কয়েক সপ্তাহে ঘটেছে অনেক দুর্ঘটনা, অনেকে হয়েছেন আহত। তাই বিভিন্ন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিকি চ্যালেঞ্জ বন্ধে রীতিমতো নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

কিছুদিন আগে কিকি চ্যালেঞ্জে অংশ নিতে গিয়ে এক কিশোরী অপর দিক থেকে আসা গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়। আবার এক নারী গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে রাস্তায় নেমে নাচতে গিয়ে দরজার ধাক্কা খেয়ে লুটিয়ে পড়েন রাস্তায়। আরেক ভিডিওতে দেখা গেছে, নাচের ভিডিও করার সময় এক ছিনতাইকারী একজনের ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। কিকি চ্যালেঞ্জ ঘিরে এমন নানা দুর্ঘটনার খবর আসছে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে।

এই কিকি চ্যালেঞ্জকে অভিনব সব উপায়ে ঠেকাতে কাজ করছে বিভিন্ন দেশ। যেমন মিসরে এই চ্যালেঞ্জে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যাকে কিকি চ্যালেঞ্জের ভিডিও পোস্ট করতে দেখা যাবে, তার এক বছরের জেল হবে। এরই মধ্যে তুরস্কের এক তারকাশিল্পী এই কিকি চ্যালেঞ্জের ভিডিও পোস্ট করার কারণে জরিমানা গুনেছেন। আবুধাবিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এই চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর স্পেনের সরকার ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছে, দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে কিকি চ্যালেঞ্জ। তাই নিরাপদ জায়গায় গিয়ে এই চ্যালেঞ্জে অংশ নেওয়ার অনুরোধ করেছে তারা। আর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ বিভাগ তাদের নিজ নিজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাতায় পোস্ট করেছে সচেতনতামূলক ভিডিও। কিন্তু এতে কি কোনো কাজ হচ্ছে? গত জুন মাস থেকে এ পর্যন্ত ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে #কিকিচ্যালেঞ্জ দিয়ে এরই মধ্যে চার লাখ পোস্ট দেখা গেছে। অনেক বড় বড় তারকাও এই চ্যালেঞ্জে অংশ নিচ্ছেন। উইল স্মিথ থেকে শুরু করে কিয়ারা—সবাই ড্রেকের গান ‘ইন মাই ফিলিংস’-এর সঙ্গে তাল মিলিয়েছেন। তবে বড় তারকারা এই চ্যালেঞ্জে বিপজ্জনকভাবে চলন্ত গাড়ি থেকে নেমে নাচছেন না। তাঁরা বরং নিরাপত্তার বিধিবিধান মেনেই পোস্ট করছেন কিকি চ্যালেঞ্জের ভিডিও। যাঁরা নিরাপত্তার বিধান মানছেন না, তাঁরা পড়ছেন নানা ধরনের দুর্ঘটনায় কিংবা জেল-জরিমানার মতো আইনি ফ্যাসাদে।

কিকি চ্যালেঞ্জ কী?

‘কিকি চ্যালেঞ্জ’-কে অনেকেই ‘কেকে চ্যালেঞ্জ’ বা ‘ইন মাই ফিলিংস চ্যালেঞ্জ’ও বলছে। কানাডীয় গানের তারকা ড্রেকের গান ‘ইন মাই ফিলিংস’-এর সঙ্গে অদ্ভুত এক নাচের রীতিকে বলা হচ্ছে কিকি চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে একজনকে চলন্ত গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির দরজা খোলা রেখে নাচতে হয়। গাড়িতে তখন বাজতে থাকে ড্রেকের গানটি। এরপর সেই নাচের ভিডিও পোস্ট করা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। গত জুন মাসে এমন একটি ভিডিও সবার আগে পোস্ট করেন শিগি নামের এক মার্কিন কমেডিয়ান। এরপর থেকে চ্যালেঞ্জটি হয়ে যায় ভাইরাল। বাংলাদেশেও অনেক তরুণ-তরুণীকে কিকি চ্যালেঞ্জে অংশ নিতে দেখা গেছে। তবে যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে সেদিকেও খেয়াল রাখা দরকার।