স্বপ্নদলের 'হিরোশিমা দিবস'

প্রতিবছর নাটক মঞ্চায়ন মধ্য দিয়ে হিরোশিমা দিবস পালন করে নাটকের সংগঠন স্বপ্নদল। ১৭ বছর ধরে নিয়মিতভাবে শান্তির সপক্ষে উদ্বুদ্ধকরণ, যুদ্ধবিরোধী প্রচারণাসহ ‘হিরোশিমা দিবস’ পালন করছে এ সংগঠন। ‘আর নয় হিরোশিমা, আর নয় নাগাসাকি, আর নয় যুদ্ধ’ স্লোগান নিয়ে নাট্যসংগঠন স্বপ্নদল এবার দিনটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। ৬ আগস্ট, সোমবার ‘ত্রিংশ শতাব্দী’র বিশেষ মঞ্চায়ন ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতায় ‘হিরোশিমা দিবস ২০১৮’ পালন করা হবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে হবে এ আয়োজন।

বাদল সরকারের মূল রচনা অবলম্বনে হিরোশিমা-নাগাসাকির বিয়োগান্ত ঘটনা-নির্ভর স্বপ্নদলের দেশ-বিদেশে আলোচিত ও দর্শকনন্দিত যুদ্ধবিরোধী গবেষণাগার প্রযোজনা ‘ত্রিংশ শতাব্দী’র রূপান্তরসহ নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন। দলপ্রধান জাহিদ রিপন প্রথম আলোকে জানান, এবার ‘হিরোশিমা দিবস’-এর অনুষ্ঠানমালা সাম্প্রতিক বাসচাপায় ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের প্রতি উৎসর্গ করা হচ্ছে।

আগামী সোমবার বিকেল পাঁচটা থেকে পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনের লবিতে হিরোশিমা-নাগাসাকিভিত্তিক যুদ্ধবিরোধী পোস্টার-আলোকচিত্র-ভিডিও-ইনস্টলেশন আর্ট প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে এ কর্মসূচি। সন্ধ্যা সাতটায় মিলনায়তনে থাকবে যুদ্ধযন্ত্রণার প্রতীক জাপানি শিশু সাদাকো সাসাকি স্মরণে কাগজের সারস বিতরণ, যুদ্ধ-জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবিরোধী সংক্ষিপ্ত বক্তব্য এবং ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ নাটকের ৯৫তম মঞ্চায়ন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মীজানুর রহমান। কবি রবীন্দ্র গোপের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন নাট্যজন ইনামুল হক।

জাহিদ রিপন বলেন, যুদ্ধোন্মাদনার বিরুদ্ধে শৈল্পিক প্রতিবাদ ‘ত্রিংশ শতাব্দী’র মূল কাহিনি পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকির আণবিক বোমা বিস্ফোরণের অপ্রত্যাশিত পরিণতি। এর সমান্তরালে গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বসনিয়া-ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, পাকিস্তান-ভারত, ইরাকে আগ্রাসন, কুয়েত-তিউনিসিয়া-ইয়ামেন-সিরিয়া-তুরস্ক-মিয়ানমার-গুলশানে বর্বর হামলা, সাম্প্রতিক বাসচাপায় শিক্ষার্থী হত্যা প্রভৃতি প্রসঙ্গ।

তিনি আরও বলেন, ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ প্রযোজনায় নানাবিধ দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে যুদ্ধবাজ-যুদ্ধাপরাধী-অশান্তকামীদের স্বরূপ এবং তাদের কাজের তাৎক্ষণিক ও সুদূরপ্রসারী বীভৎসতার চিত্র উদঘাটিত হয়েছে। সভ্যতা ধ্বংসকারী মানবসৃষ্ট যুদ্ধ-গণহত্যা-অনাচারের বিপরীতে মানুষ হিসেবে বর্তমান কর্তব্য অনুধাবন এবং এ ক্ষেত্রে দর্শককে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মুখোমুখি স্থাপনই ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ প্রযোজনার প্রত্যাশা। আর প্রযোজনাটির উপস্থাপনায় প্রয়োগ করা হয়েছে হাজার বছরের নাট্য-ঐতিহ্যের ধারায় আধুনিক ‘বাঙলা নাট্যরীতি’।

জাহিদ রিপন জানান, স্বপ্নদলের ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ প্রযোজনাটি দেশের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ইউরোপের স্বনামখ্যাত নাট্যোৎসব ‘১৩তম এ সিজন অব বাংলা ড্রামা ২০১৫’, নয়াদিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় (এনএসডি) অনুষ্ঠিত এশিয়ার বৃহত্তম ও মর্যাদাপূর্ণ ভারতের রাষ্ট্রীয় নাট্যোৎসব ‘১৭তম ভারত রঙ মহোৎসব ২০১৫’, কলকাতার দমদমে ‘শম্ভু মিত্র ও বিজন ভট্টাচার্য স্মৃতি আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ২০১৬’সহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে আমন্ত্রিত প্রদর্শনীর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।