রাজ্জাককে নিয়ে তথ্যচিত্র

তথ্যচিত্র নির্মাণের সময় রাজ্জাকের সঙ্গে শাইখ সিরাজ
তথ্যচিত্র নির্মাণের সময় রাজ্জাকের সঙ্গে শাইখ সিরাজ

নায়করাজ রাজ্জাকের জন্মস্থান, পরিবার, জীবনযাপন, চলচ্চিত্র, ফ্যাশন আর তাঁর নায়িকাদের নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই মানুষের। প্রয়াত এই নায়কের জীবনের ওপর নির্মিত হয়েছে তথ্যচিত্র ‘রাজাধিরাজ রাজ্জাক’। নায়করাজের জীবনীভিত্তিক তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন শাইখ সিরাজ। ২১ আগস্ট চিত্রনায়ক রাজ্জাকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে চ্যানেল আইয়ে ১৭ আগস্ট বেলা সাড়ে তিনটায় কিংবদন্তি এই তারকাকে নিয়ে ৯০ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘রাজাধিরাজ রাজ্জাক’ দেখানো হবে।

নায়ক রাজ্জাক জীবিত থাকাকালীন নায়ককে নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেন। শাইখ সিরাজ বলেন, ‘আমাদের শৈশবে বিনোদন মাধ্যম বলতেই ছিল চলচ্চিত্র। প্রথম থেকেই আমি তাঁর ভক্ত ছিলাম। যখন মিডিয়ায় যুক্ত হলাম, টেলিভিশন করলাম, তখন রাজ্জাক সাহেবের সঙ্গে নিয়মিত আলাপ হতো। আমাদের চ্যানেলে এলে চা খেতে খেতে গল্প করতেন। বলতেন, কোন ছবির কোন পোশাকটা কীভাবে তিনি তৈরির নির্দেশনা দিতেন। বলেছিলেন “আগন্তুক” ছবির ওই ড্রেসটা আমিই বানিয়েছিলাম।’

রাজ্জাকের একনিষ্ঠ ভক্ত শাইখ সিরাজ বলেন, ‘যখন স্কুলে পড়ি, গুলশানে রাজ্জাকের বাড়ি তৈরি হচ্ছিল। বাড়িতে সুইমিং পুল ছিল। সেটা দেখতে গিয়েছিলাম। বড় হয়ে এগুলো মনে করে নস্টালজিক হয়ে পড়ি। মনে হলো, রাজ্জাকের ওপর একটি তথ্যচিত্র বানাই। যেহেতু সুযোগ আছে, কেন বানাব না!’

জানালেন, কাজটা করার সময় নায়করাজ রাজ্জাক তাঁকে বলেছিলেন, ‘আমার এত কিছু এত সূক্ষ্মভাবে আপনি কীভাবে মনে রেখেছেন?’

তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করতে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় নির্মাতার। শাইখ সিরাজ বলেন, ‘নানা কারণে আমাদের দেশে বায়োপিক তৈরি হয় না। আমাদের অনেক কিংবদন্তি আছেন। কিন্তু তাঁদের বায়োপিক করা যায় না। প্রধান সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে একজন মানুষ ছোটবেলা থেকে তাঁর ক্যারিয়ারের সব জিনিসপত্র সঠিকভাবে সংরক্ষণ করেন না। লিজেন্ড হয়ে গেলে পরে সেগুলো দরকার হয়। যেমন রাজ্জাকের পোশাকগুলো পাওয়া যায়নি। সেই সময়কার একটা জামাও যদি পেতাম, তাহলে তাঁর ফ্যাশন নিয়ে তথ্যচিত্রে একটি ভালো অংশ রাখতে পরতাম। অথচ মুখের কথা আর সিনেমার শার্ট ছাড়া দেখানোর কিছু ছিল না। ওই শর্টের সঙ্গে আলমারি থেকে শার্টটা বের করে দেখাতে পারলে দৃশ্যটি আরও অন্য রকম হতো।’

তথ্যচিত্রের জন্য প্রায় দেড় বছর কাজ করতে হয়েছে, জানিয়েছেন পরিচালক শাইখ সিরাজ। তিনি বলেন, ‘দুই দিন টানা ৬/৭ ঘণ্টা করে শুটিং করেছি। তাঁর মত নিয়েছি। কাছ থেকে তাঁকে দেখে বুঝেছি, রাজ্জাক একজন পরিপূর্ণ মানুষ। কী সামাজিক দিক থেকে, কী পিতা হিসেবে, কী স্বামী হিসেবে, কী সামাজিক মানুষ হিসেবে। এমনকি ধর্মীয় দিক থেকেও তিনি ছিলেন সক্রিয়। গুলশানের আজাদ মসজিদ নির্মাণের প্রথম দিকে যাঁরা ছিলেন, রাজ্জাক তাঁদের একজন। অনেকেই জানে না এ কথা।’

তথ্যচিত্রে রয়েছে রাজ্জাকের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার। তাঁর কলকাতায় বেড়ে ওঠার বসতভিটার অবস্থা, সেখানে অবস্থানরত জীবিত নিকটাত্মীয়, মহল্লার বন্ধু-বান্ধবের স্মৃতিচারণাসহ রাজ্জাকের কালজয়ী দুর্লভ সিনেমার অংশ আর গান প্রামাণ্যচিত্রটিতে সংযোজন করেছেন শাইখ সিরাজ। রাজ্জাককে নিয়ে কথা বলেছেন সুচন্দা, কবরী আর ববিতা।

তথ্যচিত্রটি পুনঃপ্রচার করা হবে ২১ আগস্ট। রাজ্জাক-ভক্তদের জন্য প্রেক্ষাগৃহেও তথ্যচিত্রটি প্রদর্শনের পরিকল্পনা করছেন নির্মাতা। এ ছাড়া তথ্যচিত্রটি ফিল্ম আর্কাইভেও সংরক্ষণ করা হবে।