বদলে যাওয়া সুরের হাওয়ায়...
আলাপের ফাঁকে হঠাৎ একটা ফোন এল। ওপাশ থেকে একজন বললেন, ‘তোমাদের এত সুন্দর অনুষ্ঠানে আমাকে কেন গাইতে ডাকো না?’ শিল্পীর এমন প্রশ্ন শুনে চোখে আনন্দের ঝিলিক খেলে যায় ফোনের এ পাশে থাকা মানুষটির। কারণ তাঁদের অনুষ্ঠান ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’ এতটাই খ্যাতি পেয়েছে গত কয়েক বছরে যে সংগীতশিল্পীদের এমন স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া এখন তাঁদের বিশাল অনুপ্রেরণা ও পুঁজি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঈদুল আজহাতেও তাই উইন্ড অব চেঞ্জ আগের নিয়মেই নতুন করে হাওয়া বদলের ডাক নিয়ে আসছে টিভি পর্দায়। সংগীতভিত্তিক বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল গানবাংলার উইন্ড অব চেঞ্জ অনুষ্ঠান নিয়ে এই প্রতিবেদন
প্রতি ঈদেই টিভি চ্যানেলগুলোর পর্দায় থাকে গানের অনেক অনুষ্ঠান। কখনো শিল্পীদের নিয়ে সম্মিলিত অনুষ্ঠান, কখনো ‘লাইভ স্টুডিও কনসার্ট’—এভাবেই উৎসবে গানে গানে দর্শকদের মাতিয়ে রাখে কমবেশি প্রতিটি চ্যানেল। শুধু গান নিয়ে গান বাংলা চ্যানেলের যাত্রা যখন শুরু হলো, তখন সংগীতপ্রেমী দর্শক-শ্রোতারা একটু যেন নড়েচড়েই বসেছিলেন। গানের পরিবেশনায় নতুন কিছু দেখা ও শোনার আশা ছিল তাঁদের। চ্যানেলটিরও সে চেষ্টা ছিল। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে শুরু হয় উইন্ড অব চেঞ্জ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের গানের শিল্পীদের এই অনুষ্ঠান এনেছে এক মঞ্চে। শুধু দেশ নয়, আন্তর্জাতিক শিল্পীরাও এই মঞ্চে সেই প্রথম থেকেই নিয়মিত। কোনোবার রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন রাশিয়ার সোপরানো শিল্পী এমিলিয়া অ্যানা, কখনোবা এ দেশের ‘ব্যাজবাবা’খ্যাত সুমনের পাশে বসে ফ্ল্যামেঙ্কো গিটারের জাদু ছড়িয়েছেন স্পেনের গিটারবাদক ড্যানিয়েল কাসারেস।
সেদিন (৩ আগস্ট) গান বাংলার বারিধারার কার্যালয়ে বসে হিসাব করে দেখা গেল, মাত্র তিন বছরে উইন্ড অব চেঞ্জের মঞ্চে বিশ্বের ২২টি দেশের ৫০ জন শিল্পী গান পরিবেশন করে গেছেন, বাজিয়ে গেছেন নানান বাদ্যযন্ত্র। তবে দিন শেষে বিদেশি শিল্পীদের ভিড়ে বাংলা গানই ছিল প্রাণ। বাংলা গানের নানা ধরন এ অনুষ্ঠানে উঠে এসেছে বিচিত্র ঢঙে। বিভিন্ন মৌসুমে এ অনুষ্ঠান গান করেছেন নিয়াজ মোহম্মদ চৌধুরী, সৈয়দ আব্দুল হাদী, সুবীর নন্দী, এন্ড্রু কিশোর, খুরশীদ আলম, বারী সিদ্দিকী, ফকির আলমগীর, জেমস, আইয়ুব বাচ্চু, কুদ্দুস বয়াতী, ফাহমিদা নবী, সামিনা চৌধুরী, বাপ্পা মজুমদার, হাবিব, বালাম, হৃদয় খান, ফুয়াদ, কনা, ঐশী, ইমরান, প্রতীক, প্রীতম, শাহানা বাজপেয়ী ও মিনার সহ আরও অনেক গুনী ও জনপ্রিয় শিল্পী।
উইন্ড অব চেঞ্জের আগামী সংস্করণ হতে যাচ্ছে এ অনুষ্ঠানের চতুর্থ মৌসুম (সিজন)। প্রাক্-মৌসুম (প্রি-সিজন) দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানটি মোট পাঁচটি সংস্করণে এল শ্রোতার সামনে (দুটি প্রাক্-মৌসুম ও গত ঈদুল ফিতর পর্যন্ত ৩ মৌসুম)। প্রতিটি মৌসুমেই যেমন টিভি পর্দায়, তেমনই ইউটিউবে সাড়া ফেলেছে। ইউটিউবে গান বাংলা চ্যানেলের দর্শকদের গান দেখা ও শোনার হার দেখে বোঝা যায়, শুধু বাংলাদেশ নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়েছে দেশি গানের সুর।
বাংলাদেশ থেকে ইউটিউবের এই চ্যানেলে দর্শকের ঢুঁ মারার হার অবশ্যই বেশি, এর পর আছে যথাক্রমে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া।
কথা হলো উইন্ড অব চেঞ্জের মূল পরিকল্পনাকারী ও নেতৃত্ব দেওয়া শিল্পী কৌশিক হোসেন তাপসের সঙ্গে। তিনি বলেন, পুরোনোকে বদলে দিয়ে নতুন কিছু তৈরি করা খুব সহজ। প্রথম দিকের প্রাক্-মৌসুমগুলোয় প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা ছিল। কিন্তু এখন এই হাওয়া বদল সবখানে ছড়িয়ে দেওয়া সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিল্পীরা এসে যুক্ত হচ্ছেন তাঁদের উদ্যোগের সঙ্গে, তাঁরা যখন ফিরে যাচ্ছেন তখন বাংলা গানের মাটির সুর সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন। সেই বিদেশি শিল্পীদের সূত্র ধরেই আরও কয়েকজন জানছেন বাংলা সুর, বাংলা গান। এভাবেই ‘ভূত থেকে ভূতে’ কথাটার মতো আমাদের গান আর সুর ছড়িয়ে পড়ছে নানা দেশে। কৌশিক হোসেন জানালেন, বিশ্বখ্যাত সংগীতব্যক্তিত্ব হ্যানস জিমারের দলের সদস্যরা এখন জানে উইন্ড অব চেঞ্জের কথা। পাশের দেশ ভারতের আলোচিত সুরকার প্রীতমও নাকি নানা সময় ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এই আয়োজনের অংশ হতে।
ওয়ান মোর জিরো গ্রুপ প্রযোজিত উইন্ড অব চেঞ্জ সহজ, কিন্তু আকর্ষণীয় উপস্থাপনার কারণে অনেকের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তাই গানের উপস্থাপনা নিয়ে কথা হলো মঞ্চ ও আলোক নির্দেশনার নেপথ্যে থাকা ফারজানা মুন্নীর সঙ্গে। তিনি উইন্ড অব চেঞ্জের প্রযোজক ও গান বাংলা চ্যানেলের চেয়ারপারসনও। মুন্নী বললেন, ‘এই অনুষ্ঠানে খুব বড় কোনো পরিবর্তন আমরা সচরাচর আনি না, অত ভেবেচিন্তেও কিছু করি না। চোখে যেটা দেখতে ভালো লাগে সেভাবেই আলো সাজাই, মঞ্চ সাজাই, শিল্পীদের সাজাই। অনেক সময় কারিগরি বিভাগের কর্মীরা তাত্ত্বিক ব্যাখা নিয়ে আসেন, এই আলো ফুটবে না, এভাবে পুরো গান নষ্ট হয়ে যাবে, ভালো দেখা যাবে না—অনেক সমস্যার কথা বলেন। কিন্তু আমরা আমাদের চোখের বিবেচনাকে গুরুত্ব দিয়ে কাজটা করে ফেলি। শেষমেশ দেখা যায়, সেটাই দর্শক চোখ দিয়ে মনকে ছুঁয়ে যায়।’
চতুর্থ মৌসুমের গান ও শিল্পী
■ কানার হাটবাজার: রিংকু
■ দুই কূলে সুলতান: ঐশী
■ চাঁদের গায়ে: শফি মণ্ডল
■ ১০০ পার্সেন্ট খাঁটি: তাপস অ্যান্ড ফ্রেন্ডস
■ আন্দোলন: তাপস
■ আমি চিনি গো চিনি: কাদেরী কিবরিয়া
■ আমার পরান যাহা চায়: অদিতি মহসিন
■ আলগা কর ওগো: পুলক
■ পরদেশি মেঘ: লুইপা
■ বাবা ভান্ডারি: পারভেজ
■ বেইমান পাখি: মান্নান মোহাম্মদ
■ সুখে থাকো: তন্ময় তানসেন
■ একটা সরল অঙ্ক: দীপ্ত
■ তুমি আমার ঘুম: সৈনিক
■ চারিদিকে কোলাহল: মিলন মাহমুদ
■ আবার দেখা হলে: মেসবাহ
■ নিশি ভোর: ফেরদৌস আরা
■ এখন অনেক রাত: আইয়ুব বাচ্চু
■ তুমি আরেকবার আসিয়া: রথীন্দ্রনাথ রায়
■ ফুয়াদ ফিচারিং ফায়রুজ
■ নিতাই গঞ্জে যাই: কাঙ্গালিনী সুফিয়া
(গান বাংলা চ্যানেল থেকে পাওয়া তালিকার ক্রমানুসারে)