মৌলির প্রশংসায় পঞ্চমুখ চেন্নাই

ভরতনাট্যম শিল্পী জুয়েইরিয়াহ মৌলি
ভরতনাট্যম শিল্পী জুয়েইরিয়াহ মৌলি

ভারতের কর্ণাটকে গিয়ে বিপদে পড়ে গিয়েছিলেন ঢাকার নৃত্যশিল্পী জুয়েইরিয়াহ মৌলি। দুই বছর সেখানে থাকতে হবে, অথচ ইংরেজি বা হিন্দি ভাষায় অভ্যস্ত নন সেখানকার সাধারণ মানুষ। দৈনন্দিন কাজে মাতৃভাষাই তাঁদের প্রথম পছন্দ। বাধ্য হয়ে কান্নাডা ভাষা শিখতে হয়েছে মৌলিকে। অল্প সময়ে ভাষা শিখে এখন সবার প্রিয়পাত্রীতে পরিণত হয়েছেন তিনি। নৃত্যগুরু থেকে শুরু করে চেন্নাইতে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ এখন।

ভরতনাট্যমে স্নাতকোত্তর করতে বছরখানেক আগে বেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন মৌলি। মা-বাবাকে ছাড়া প্রথমবারের মতো এতটা দূরে আর এতটা সময় থাকতে হচ্ছে তাঁকে। কেমন লাগছে তাঁর?

আজ শনিবার সন্ধ্যায় ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে মোবাইলে ভাগাভাগি করেন সেই অনুভূতির কথা। বলেন, ‘শুরুর তিন-চার মাস ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। এখন মানিয়ে নিয়েছি। পড়াশোনা, ব্যবহারিক, প্রেজেন্টেশন নিয়ে অনেক ব্যস্ত কাটছে সময়। তা ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচ করতে হচ্ছে। সবকিছুর পরেও এটা ভেবে ভালো লাগছে যে এখান থেকে আমি অনেক কিছু নিয়ে যেতে পারব। দেশে ফিরে আমার পরের প্রজন্ম, যাদের আমি শেখাব, তাদের অনেক কিছু দিতে পারব।’

ঢাকার মঞ্চে মৌলির যাত্রা শুরু সেই শৈশবে। ঢাকা ছাড়ার আগে অনেক অনুষ্ঠানে নাচ করতে হতো তাঁকে। কর্ণাটক ধ্রুপদি সংগীত ও নৃত্যের জন্য প্রসিদ্ধ। সেখানেও তিনি নিয়মিত নাচ করছেন। তবু ঢাকার মঞ্চ মিস্ করেন কি না, জানতে চাইলে মৌলি বলেন, শুধু ঢাকার মঞ্চ না, ঢাকার মানুষ, সংগঠনের বন্ধুদের এবং শিক্ষকদের মিস করেন তিনি। কান্নাডা ভাষায় বললেন, ‘নান ঢাকা তুম্বা মিস মার্তিদিয়া।’

সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েশন অব ভরতনাট্যম আর্টিস্ট অব ইন্ডিয়ার আয়োজনে ভারতের চেন্নাইতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘আভায় প্রবাসী উৎসব’। এতে অংশ নেন বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি ও মালয়েশিয়ার নৃত্যশিল্পীরা। উৎসবে একক ভরতনাট্যম নৃত্য পরিবেশন করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন মৌলি। নৃত্যগুরু কীর্তি রাম গোপালের পরিচালনায় ভরতনাট্যমের পুষ্পাঞ্জলি, ভার্নাম এবং পাদম পরিবেশন করেন তিনি। চেন্নাইতে বাংলাদেশের কোনো শিল্পীর এটাই প্রথম ৫০ মিনিটের একক ভরতনাট্যম পরিবেশনা। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নৃত্যগুরু পদ্মভূষণ ভি পি ধনঞ্জয় মৌলির পরিবেশনা নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। মৌলি বলেন, ‘এই জায়গায় প্রশংসা পাওয়াটা অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার। এখানকার মানুষ সহজে নাচের প্রশংসা করেন না। কারণ এখানকার সবাই শাস্ত্রীয় নৃত্যটা খুব ভালো জানেন। তাঁদের কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়া গর্বের এবং আনন্দের।’

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনসের (আইসিসিআর) বৃত্তি নিয়ে ব্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতনাট্যমে স্নাতকোত্তর করতে গেছেন জুয়েইরিয়াহ মৌলি। ঢাকার ছায়ানটে বেলায়েত হোসেন খানের কাছে তাঁর নৃত্যশিক্ষার শুরু। এরপর কল্পতরুতে শিল্পী অমিত চৌধুরীর কাছে নৃত্যের প্রশিক্ষণ নেন তিনি।

ব্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ভারতের বেশ কিছু উৎসবে নাচ করেছেন তিনি। এগুলোর মধ্যে কেরালায় প্রাকিরথাম উৎসব, বেঙ্গালুরুর পারাভাঞ্জালি ও উদয়রাগা উৎসব এবং তামিলনাড়ুর নাট্যাঞ্জলি উৎসব উল্লেখযোগ্য। হসুর নাট্যাঞ্জলি উৎসবে নাট্যাকালামনী সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। ঢাকায় বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত শাস্ত্রীয় সংগীত উৎসবে একক ভরতনাট্যম পরিবেশন করেছিলেন জুয়েইরিয়াহ মৌলি।