বুদ্ধিমত্তা ও বাকচাতুর্যে অনুষ্ঠানটি হয়েছে আকর্ষণীয়

‘আমার আমি’ উপস্থাপনা করেন মুনমুন
‘আমার আমি’ উপস্থাপনা করেন মুনমুন

এশিয়ান টিভির সরাসরি গানের অনুষ্ঠান ‘এশিয়ান মিউজিক’ প্রচারিত হয় প্রতিদিন রাত ১১টায়। কখনো দ্বৈত, আবার কখনোবা একক শিল্পীর পরিবেশনা থাকে এ অনুষ্ঠানে। ৯ আগস্ট এই অনুষ্ঠানে শিল্পী ছিলেন শাহনাজ বেলী। তিনি আমাদের লোকসংগীত শাখায় সুপরিচিত। দুই ঘণ্টার বেশি সময় তিনি গান করেছেন এবং গানের ফাঁকে ফাঁকে ফোনে কথা বলেছেন দর্শকের সঙ্গে। বেলীর পরিবেশিত উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে ছিল সৈয়দ দুলালের ‘কী মায়া লাগাইলা রে বন্ধু কী মায়া লাগাইলা’, সালাহউদ্দিনের ‘দেখি নাই বন্ধু তোমায় আজ বহুদিন’, শাহ আবদুল করিমের ‘আমি তোমার প্রেমের পাগল তোমায় বাসি ভালো’ ইত্যাদি। তাঁর পরিবেশিত সব গানই ছিল লোকসংগীত এবং সবচেয়ে বেশি গান গেয়েছেন শাহ আবদুল করিমের। শাহনাজ বেলীর কণ্ঠ সুরেলা ও মিষ্টি। সুরের পর্দায় চমৎকারভাবে তাঁর কণ্ঠ ওঠানামা করেছে। লোকসংগীতের ক্ষেত্রে যে প্রধান দাবি গলা খুলে গান করা, শাহনাজ বেলী তা শতভাগ পূর্ণ করেছেন। এসব সফলতার পাশাপাশি তাঁর এ দিনের পরিবেশনায় দু-একটি বিষয় আমাদের কাছে একটু শ্রুতিকটুও মনে হয়েছে—যেমন তিনি গান পরিবেশনের সময় মাঝেমধ্যে নিজেই ‘বাহবা’ ও ‘হইহই’ করে উঠেছেন। এটি হয়তো মঞ্চে মানায় কিন্তু টেলিভিশনে বেমানান। মঞ্চের দর্শক ও টেলিভিশনের দর্শক তো এক নয়। এ ছাড়া তাঁর নিজের কথা বলতে গিয়ে বিনয়ের স্থলে কখনো কখনো যেন কিছুটা আত্মশ্লাঘা প্রকাশ পেয়েছে, যা একজন শিল্পীর কাছে মোটেই প্রত্যাশিত নয়। আশা করি ভবিষ্যতে তিনি এ ব্যাপারে সজাগ হবেন।

৯ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে আল আমিন বিপ্লবের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় মাছরাঙা টিভিতে প্রচারিত হলো টেলিছবি শেষের চিঠি। অভিনয় করেছেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, শ্যামল মাওলা, মৌসুমী হামিদ প্রমুখ। টেলিছবির বিষয়বস্তু ক্ষয়িষ্ণু জমিদার ও উঠতি ধনিকশ্রেণির দ্বন্দ্ব। আসাদ জমিদার সেন বংশের প্রতিনিধি উঠতি ধনিক পরিবার শম্ভুর বাবার কাছে দেনার কারণে শেষ পর্যন্ত মেয়ে মৌসুমীকে শম্ভুর সঙ্গে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়। এদিকে মৌসুমীর পছন্দের পাত্র শ্যামল শেষে একটি চিঠি লিখে রেখে চলে যায়। এটিই শেষের চিঠি। প্রথমেই বলব, টেলিছবির নামকরণটি যথার্থ হয়েছে। গল্পটি সুন্দর। চিত্রনাট্য, সংলাপ এবং অভিনয়ও ছিল বেশ পরিচ্ছন্ন ও আকর্ষণীয়। নির্মাতা যে যথেষ্ট পরিশ্রম করে, কষ্ট স্বীকার করে ও আন্তরিকতা নিয়ে ছবিটি বানিয়েছেন, প্রতিটি দৃশ্যেই তার স্বাক্ষর ছিল।

১০ আগস্ট রাত ৯টায় এসএ টিভিতে প্রচারিত হলো সাপ্তাহিক নাটক লং ডিসটেন্স। রচনা ও পরিচালনা করেছেন শ্রাবণী ফেরদৌস। অভিনয়ে তৌসিফ মাহবুব, নাদিয়া মিম, নওরিন, মিলি বাশার, বাপ্পি সাঈদ প্রমুখ। নাটকের বিষয়—দীপ নামের এক তরুণের স্বপ্ন, সে বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হবে। এ জন্য সে সব পিছুটান উপেক্ষা করে, ঘনিষ্ঠ বন্ধু নদীর প্রেমের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে সে সত্যিই বিদেশ গেল। অতঃপর নদী অনেক চেষ্টায় ও বন্ধু নোবেলের সহায়তায় যখন সে মায়াবী প্রেমের ঘোর কাটিয়ে ঘর বাঁধতে যায়, তখনই এসে উপস্থিত হয় দীপ। অনেক টানাপোড়েনের পর শেষে নদী দীপকেই বরণ করে নেয়।

অবক্ষয় নাটকের দৃশ্যে মম
অবক্ষয় নাটকের দৃশ্যে মম

গল্পে অভিনবত্ব না থাকলেও কিছুটা আকর্ষণ ছিল। কিন্তু শেষ পরিণতিটা ভালো লাগেনি এবং যুক্তিসম্মতও মনে হয়নি। কারণ, দীপের আত্মকেন্দ্রিকতা ও স্বার্থপরতা প্রমাণিত হওয়ার পরও নদী তাকে কেন বরণ করবে? কারণ, শেষ পর্যন্ত তো নদী আর আনাড়ি কিংবা অপরিপক্ব নেই। নোবেল তো তাকে বাস্তববোধ ও জীবনবোধে উজ্জীবিত করেছে। কাজেই নোবেলের কাছে তো সে অকৃতজ্ঞ হতে পারে না। তা ছাড়া দীপের মতো অপরিপক্ব ছেলেদের জীবনবোধ জাগরণের জন্য নদীর প্রত্যাখ্যানের তো প্রয়োজন ছিল। আর সেটিই বোধ হয় হতো গল্পের গতানুগতিকতা থেকে বেরিয়ে প্রগতির পথে উত্তরণ। আর নামকরণটিও ভালো লাগেনি, প্রাসঙ্গিকও মনে হয়নি। ভালো লেগেছে আরেকজন প্রতিশ্রুতিশীল নারী নির্মাতার আবির্ভাব। এই সাহসী ও সংগ্রামী পেশায় আগমনের জন্য শ্রাবণী ফেরদৌসকে অভিবাদন জানাই।

১১ আগস্ট রাত ৯টা ৫ মিনিটে বাংলাভিশনে প্রচারিত হলো বরেণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘আমার আমি’। উপস্থাপনা করেছেন রুমানা মালিক মুনমুন। অতিথি ছিলেন বরেণ্য লেখক ও চলচ্চিত্রব্যক্তিত্ব আমজাদ হোসেন। লেখক হওয়ার স্বপ্ন ও সংকল্প নিয়ে আবির্ভূত আমজাদ হোসেন ধীরে ধীরে কীভাবে চলচ্চিত্রে জড়িয়ে পড়লেন, নাটক লেখা ও পরিচালনা পেশা থেকে কীভাবে চলচ্চিত্র পরিচালক হলেন, একে একে তা জানা গেল এ অনুষ্ঠানে। এদিক বিবেচনায় ছোট্ট পরিসরের এ অনুষ্ঠানটি ছিল বেশ তাৎপর্যময়। উপস্থাপক মুনমুনের বুদ্ধিমত্তা ও বাকচাতুর্যে অনুষ্ঠানটি হয়েছে আকর্ষণীয় ও উপভোগ্য।

১২ আগস্ট রাত ৮টা ৫ মিনিটে আরটিভিতে প্রচারিত হলো ‘সময়ের গল্পের নাটক’ শিরোনামে সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে নাটক। এ দিনের পর্বের নাম ছিল অবক্ষয়। এ দিন নাটকে দেখানো হলো পথেঘাটে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা ও তার ভয়াবহ পরিণতি। নাটকের সময়কাল সাপ্তাহিক নাটকের মতোই। আর এখানে আছেন একজন উপস্থাপক। ভারতের অনেক চ্যানেলেও এ ধরনের সত্য ঘটনা নিয়ে নাটক প্রচার করা হয়। সেদিক বিবেচনায় বিষয়টি অভিনব না হলেও আমাদের সমাজবাস্তবতায় এটি প্রাসঙ্গিক এবং প্রয়োজনীয়ই মনে হয়েছে। আর অবক্ষয় পর্বটি সম্পর্কে বলব, যে ঘটনা বা গল্পটি দেখানো হয়েছে, তা অত্যন্ত বাস্তব, কিন্তু নির্মাণটি পুরোপুরি বাস্তবসম্মত ও বিশ্বস্ত মনে হয়নি। অন্যদিকে উপস্থাপক বা সূত্রধর রাখাটাও ভালো মনে হয়েছে। তবে তাঁর বাচনভঙ্গি ও বক্তব্য আরও ভালো হতে পারত।

শেষের চিঠি টেলিছবির দৃশ্যে মৌসুমী হামিদ ও শ্যামল মাওলা
শেষের চিঠি টেলিছবির দৃশ্যে মৌসুমী হামিদ ও শ্যামল মাওলা