যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চটেছেন ক্যারি

জিম ক্যারি
জিম ক্যারি

যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ভীষণ ক্ষুব্ধ অভিনেতা জিম ক্যারি। যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে দিয়েছে অর্থ, যশ, সম্মান, সেই দেশের কঠোর সমালোচনায় সোচ্চার এই অভিনেতা। একের পর এক টুইটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের প্রতি ধিক্কার জানাচ্ছেন তিনি। গতকাল এক টুইটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি কার্টুন এঁকে লিখেছেন, ‘নিচ থেকে আরও নিচে নামছে তারা। ইতিহাসের সব থেকে বাজে প্রশাসন।’

সম্প্রতি ইয়েমেনে মিসাইল হামলার পর গতকাল শনিবার টুইটারে জিম ক্যারি লেখেন, ‘ইয়েমেনে ৪০টি নিষ্পাপ শিশুকে বাসের মধ্যে খুন করা হলো। আমাদের বন্ধু, আমাদের মিসাইল, অপরাধটিও আমাদের।’ সঙ্গে ছিল নিজের আঁকা একটি কার্টুন।

জিম ক্যারি ও সাবেক প্রেমিকা জেনি মেকার্থি। ছবি: নিউজ ডটকম
জিম ক্যারি ও সাবেক প্রেমিকা জেনি মেকার্থি। ছবি: নিউজ ডটকম

দুনিয়ার সব থেকে গোমড়ামুখো লোকটিও হেসে ফেলতেন ক্যারিকে দেখে। যেকোনো বয়সী মানুষের পছন্দের অভিনেতা ছিলেন তিনি। তাঁর ছবি এত ব্যবসা করত যে, এক ছবির সম্মানী হিসেবে তাঁকে দিতে হতো ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সবাইকে হাসানো আর আনন্দ দেওয়া লোকটি এখন যেন কোথাও নেই! ঘরে দরজা বন্ধ করে ছবি আঁকছেন। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে ‘সান শাওয়ার’ নামে একটি একক প্রদর্শনীও করেছিলেন।

‘এস ভেঞ্চুরা: পেট ডিটেকটিভ’ ছবিটি বিশ্বজুড়ে খ্যাতি এনে দিয়েছিল জিম ক্যারিকে। পরে ‘ডাম্ব অ্যান্ড ডাম্বার’, ‘দ্য কেবল গাই’, ‘লায়ার লায়ার’, ‘দ্য ট্রুম্যান শো’, এবং ‘ব্রুস অলমাইটি’ ছবিগুলোর প্রতিটি ছিল ব্যবসাসফল। এই ছবিগুলো তাঁকে আলোচনায় রেখেছিল তাঁর দুই হাইপ্রোফাইল প্রেমিকা রেনে জেলওয়েগার ও জেনি মেকার্থি। বলা হয়ে থাকে, এই দুই নারী হলিউডে উজ্জ্বল করে রেখেছিলেন তাঁকে। যাঁর ছবি মানেই বক্স অফিস হিট, সেই অভিনেতা হঠাৎ কেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন হলিউড থেকে!

জিম ক্যারি ও মেক-আপ শিল্পী ক্যাথরিনা হোয়াইট। ছবি: নিউজ ডটকম
জিম ক্যারি ও মেক-আপ শিল্পী ক্যাথরিনা হোয়াইট। ছবি: নিউজ ডটকম

ক্যারি ভেঙে পড়েছেন। ব্যক্তিগত মেক-আপ আর্টিস্ট ও প্রেমিকা ক্যাথরিনা হোয়াইটের আত্মহননের পর ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছেন এই অভিনেতা। ক্যাথরিনার পরিবারের সঙ্গে আইনি লড়াই তাঁকে আরও কাবু করে ফেলেছে।

সম্প্রতি হলিউড রিপোর্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গোল্ডেন গ্লোবজয়ী ক্যারি বলেছেন, চলচ্চিত্রকে অতটা গুরুত্বের সঙ্গে নেননি তিনি। তিনি বলেন, ‘হলিউডে কাজ করার কোনো পরিকল্পনাই ছিল না আমার। বরং হলিউডকে নষ্ট করতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, যাঁরা এ জিনিসগুলোকে গুরুগম্ভীর করে তোলে তাঁদের একটা বিরাট আঘাত করব।’

এমনকি ‘খ্যাতি’ ব্যাপারটিও তাঁকে আর টানে না। তিনি মনে করেন, খ্যাতি অর্জিত হয়ে যাওয়ার পর বিষয়টি আর বেশি দিন ভালো লাগে না। এটা বোঝার পরই হয়তো ধীরে ধীরে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেছেন ক্যারি। হলিউড তাঁকে নিয়ে ক্লান্ত না হলেও, ক্যারি হলিউডকে নিয়ে ভীষণ ক্লান্ত। বলেও ফেলেছেন, ‘আমি আর এসবের মধ্যে নেই। যা ঘটছে, করপোরেশন যেভাবে সবকিছু হাতিয়ে নিচ্ছে, এসব আমার ভালো লাগছে না।’

টুইটারে আপলোড করা ক্যারির একটি কার্টুন
টুইটারে আপলোড করা ক্যারির একটি কার্টুন

ভালো না লাগার অন্য কারণ থাকতে পারে। ক্যারি মনে করেন, সৃজনশীলতার ভিন্ন এক ক্ষেত্রের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয়েছে তাঁর। তিনি বলেন, ‘চিত্রকলা আমাকে আঁকড়ে ধরেছে। এর নিয়ন্ত্রণ আমার ভালো লাগছে। এখানে এমন কেউ নেই যে আমাকে ভালো-মন্দ ঠিক করে দেবে।’

দুঃখজনক হলেও সত্য, জিম ক্যারির উজ্জ্বল ক্যারিয়ার থেকে মানুষের সহমর্মিতা সরে গেছে ২০১৫ সালে আত্মহত্যা করা তাঁর প্রেমিকা ও মামলাগুলোর দিকে। এসবের মধ্যে পড়ে অনেকটা বদলে গেছেন কমেডিয়ান জিম ক্যারি। গত বছর হারপার্স বাজার পার্টির লাল গালিচায় ই-নিউজের এক প্রতিবেদককে তিনি বলেছিলেন, ‘এসব অর্থহীন। একেবারেই অর্থহীন সব জিনিসের পেছনে ছুটতে ছুটতে আজ আমি এখানে।’

বিনোদন ব্যবসার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেললেও পরে ‘কিডিং’ নামে একটি টিভি অনুষ্ঠান করেছিলেন তিনি। সেটির প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘এই অনুষ্ঠানের চরিত্র জেফের ব্যক্তিগত সমস্যাগুলোর কারণে অনুষ্ঠানটি ছিল আকর্ষণীয়। মানুষ সব সময়ই এমন কিছুর সন্ধান করে, যার সঙ্গে সে সম্পৃক্ত। জীবনে সে রকম সময় চলেই আসে।’ সূত্র: মিরর, নিউজ ডট কম ও টুইটার