মমতা বললেন, শুক্রবার থেকে শুটিং

‘কুসুম দোলা’ ও ‘করুণাময়ী রাণী রাশমণি’ সিরিয়ালের দৃশ্য
‘কুসুম দোলা’ ও ‘করুণাময়ী রাণী রাশমণি’ সিরিয়ালের দৃশ্য

‘মা-ভাইবোনেরা কাল থেকে আবার সবাই সিরিয়াল দেখতে পাবেন।’ ভারতের বাংলা টিভি চ্যানেলের মেগা সিরিয়ালের সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষের প্রতিনিধিদের পাশে নিয়ে সাংবাদিকদের বললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে নবান্নে নিজের কার্যালয়ে মমতা বৈঠকে বসেন। স্থানীয় সময় বিকেল চারটায় শুরু হয় আলোচনা। এখানে উপস্থিত ছিলেন প্রযোজকদের সংগঠন, আর্টিস্ট ফোরাম, টেকনিশিয়ান আর বিভিন্ন চ্যানেলের প্রতিনিধিরা।

আবার মেগা সিরিয়ালগুলোর নতুন নতুন পর্ব দর্শক দেখতে পাবেন। কারণ আগামীকাল শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে সিরিয়ালগুলোর শুটিং। তাহলে শিল্পীরা যেসব দাবি আদায়ের জন্য গত শনিবার থেকে ধর্মঘট করছেন, সে ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘টালিউড ও টেলিউড বাংলার গর্ব। বাংলার এই শিল্প অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের জোগান দেয়। তাই সব পক্ষ যাতে খোলামেলাভাবে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে পারে, তার জন্যই আজকের এই বৈঠক ডাকা হয়। শুধু তা-ই নয়, বৈঠকে সবাই খোলামেলাভাবে আলোচনা করেছেন। একসঙ্গে কাজ করতে হলে মতবিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু সেসব মিটে গেছে। শুক্রবার থেকে আবার শুটিং শুরু হবে।’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘শিল্পীরা যাতে প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে বেতন পেয়ে যান, সেই বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। বাংলা সিরিয়াল বন্ধ হওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। বহু মানুষ সিরিয়াল দেখে অবসর সময় কাটান। এমনকি আমি নিজেও সিরিয়ালের একজন দর্শক।’

এখানে জানানো হয়, বাংলা সিরিয়ালের শিল্পী আর টেকনিশিয়ানদের দাবি বিবেচনার জন্য একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে থাকছেন প্রযোজক, কলাকুশলী, পরিচালক, অভিনয়শিল্পী ও চিত্রনাট্যকারদের প্রতিনিধিরা। আছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়, শ্রীকান্ত মোহতা, নিসপাল সিং রানে, শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বরূপ বিশ্বাস, অপর্ণা ঘটক, লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, জি বাংলার সম্রাট ঘোষ, স্টার জলসা, কালারস বাংলাসহ সব টিভি চ্যানেলের প্রতিনিধিরা। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাজ করতে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, তার জন্য প্রতি মাসে এই কমিটি বৈঠকে বসবে। যেসব সমস্যা সামনে আসবে, এই কমিটি আলোচনা করে দ্রুত তার সমাধান করবে।

এই কমিটির মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে খুব সহজেই মিটে গেছে সমস্যা। আপনারা এই বার্তাটুকুই পৌঁছে দিন। কার সঙ্গে কী ঝগড়া, সেই সব লিখবেন না।’

মমতার এই সিদ্ধান্তে খুশি বিরোধে লিপ্ত মেগা সিরিয়ালের সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষ। সমস্যার সমাধানের জন্য সব পক্ষই ধন্যবাদ জানায় তাঁকে।

‘টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির ধর্মঘটের জেরে আপনাদের প্রিয় ধারাবাহিকের শুটিং এখন বন্ধ আছে। তাই আপনাদের প্রিয় ধারাবাহিকের নতুন পর্ব সম্প্রচার করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য দুঃখিত। শিগগিরই আপনারা প্রিয় ধারাবাহিকের নতুন পর্ব দেখতে পাবেন। সঙ্গে থাকুন।’ গত সোমবার থেকে ভারতের সব কটি বাংলা চ্যানেলে সিরিয়ালের প্রচার শুরু হওয়ার আগে জনপ্রিয় শিল্পীদের দিয়ে এই ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। সেদিন থেকে ভারতের সব কটি বাংলা চ্যানেলে সিরিয়ালগুলোর কোনো নতুন পর্ব প্রচারিত হচ্ছে না। দেখানো হচ্ছে পুরোনো পর্বগুলো থেকে। জানা গেছে, কলকাতার টিভির আর্টিস্ট ফোরামের ধর্মঘটের কারণে এই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

দিনের পর দিন ওভারটাইম করে প্রাপ্য টাকা না পাওয়া, বেতন নিয়ে জটিলতা৷ এ ধরনের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রযোজকদের সঙ্গে শিল্পীদের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে বিরোধ চলছে। এ ছাড়া যাঁদের সঙ্গে চুক্তি আছে, সেই শিল্পীরা ১২ ঘণ্টার বেশি কাজ করবেন না। চুক্তির বাইরের শিল্পীরা সর্বোচ্চ ১০ ঘণ্টা কাজ করবেন। তবে কোনো শিল্পীকে দিয়ে ১৪ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যাবে না। আর মাসের যেকোনো সাত দিন একজন শিল্পীকে দিয়ে রাতে কাজ করানো যাবে। কিন্তু প্রযোজকেরা এসব দাবির ব্যাপারে ছাড় দিতে চান না। এর ফলে গত শনিবার থেকে ধর্মঘট শুরু করে শিল্পীরা।

আগেই জানানো হয়েছে, গত ৭ জুলাই প্রযোজকদের সংগঠন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন প্রোডিউসার (ডব্লিউএটিপি) এবং শিল্পীদের সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ মোশন পিকচার্স আর্টিস্ট ফোরামের (ডব্লিউবিএমপিএএফ) বৈঠকে যৌথভাবে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে ছিল বাংলা সিরিয়ালের শিল্পী ও কলাকুশলীদের বকেয়া পাওনা দ্রুত মেটানো এবং কাজের সময় ১০ ঘণ্টা নির্ধারণ। কিন্তু প্রযোজকেরা পরে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে চাননি।