সব অভিনেতার স্বপ্ন মাধুরীর সঙ্গে কাজ করা

সোনাক্ষী সিনহা
সোনাক্ষী সিনহা
>হতে চেয়েছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার, কিন্তু হলেন অভিনেত্রী। আঁকাআঁকির ভীষণ শখ। তাই দিনের শেষে ক্লান্তি দূর করতে ঢুকে যান নিজের প্রিয় ঘরটিতে। সেখানে ক্যানভাসে তুলির আঁচড়ে জীবন্ত করেন। বলিউডের হাসিখুশি প্রাণবন্ত এই অভিনেত্রী, অর্থাৎ সোনাক্ষী সিনহার মুখোমুখি প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য। সম্প্রতিই মুক্তি পাওয়া সোনাক্ষীর ছবি হ্যাপি ফির ভাগ যায়েগি নিয়ে এই অভিনেত্রী কথা বললেন প্রথম আলোর সঙ্গে। ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইরোজ ইন্টারন্যাশনালের অফিসে বসে ছিল সোনাক্ষীর সঙ্গে এই কফি আড্ডা।
সোনাক্ষী সিনহা
সোনাক্ষী সিনহা

প্রশ্ন: আপনি ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। বলিউডে কাজও শুরু করেছিলেন ডিজাইনার হিসেবে। আজ আপনি অভিনেত্রী। ডিজাইনার থেকে অভিনেত্রী হয়ে উঠলেন কী করে?
সোনাক্ষী:
আমার মধ্যে ছোটবেলা থেকেই শিল্পী সত্তা আছে। নিজেকে নয়, অন্যকে সাজাতে ভালোবাসি। হাতে একটা পেনসিল থাকলেই আমি নিজের মনে আঁকতে থাকি। আমার বরাবরই স্কেচিং করার খুব শখ। মূলত সেখান থেকেই ফ্যাশনের প্রতি আমার আগ্রহ জন্মে। ধীরে ধীরে আমি এই দুনিয়ায় ঢুকে পড়ি। কোনো কিছু কল্পনা করে সৃষ্টি করতে আমার দারুণ লাগে। এমব্রয়ডারির কাজ আমি খুব ভালো পারি। ক্লাসে আমি সব সময় টপ করতাম। একটা গোটা পোশাক আমি অনায়াসে মেশিনে সেলাই করতে পারি। আর খুব উপভোগ করেই এসব কাজ আমি করতাম। অভিনেত্রী তো হয়ে উঠলাম সালমান খানের জন্য। তিনি আমায় বলতেন যে, আমার মধ্যে অভিনয়ের পোকা আছে, অভিনয়ই নাকি আমার আসল জগৎ। আমি আগে ভীষণ মোটা ছিলাম। সালমানের কথামতো বাড়তি ওজন ঝরিয়ে অভিনয়ের জগতে পা রাখি।

প্রশ্ন: নিজের নকশা করা পোশাকের প্রদর্শনী করতে চান?
সোনাক্ষী
: এই মুহূর্তে সে রকম কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে ইচ্ছা আছে। ভবিষ্যতে নিজের নকশা করা কোনো ব্র্যান্ড হয়তো নিয়ে আসতে পারি। আর যেহেতু ফ্যাশন নিয়ে পড়াশোনা করেছি, তাই কখনোই সেটা নষ্ট হতে দিতে চাই না। একটা সময় এটা আমার সাপোর্ট হতে পারে।

প্রশ্ন: চিত্রনাট্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন দিকটা বেশি গুরুত্ব দেন?
সোনাক্ষী:
কোনো চিত্রনাট্য পড়ে আমি সঙ্গে সঙ্গেই সিদ্ধান্ত নিই। চিত্রনাট্য ভালো লাগলে আমি সঙ্গে সঙ্গে হ্যাঁ করি। যে চিত্রনাট্য নিয়ে বেশি ভাবনা-চিন্তা করি, সেটা সাধারণত না করে দিই।

প্রশ্ন: ‘হ্যাপি ফির ভাগ যায়েগি’র চিত্রনাট্যও কি আপনাকে তৎক্ষণাৎই আকর্ষণ করেছিল?
সোনাক্ষী:
হ্যাঁ। ছবির চিত্রনাট্য পড়েই আমার দারুণ মজার লাগে। আমি যখন ছবিটা করব বলে সিদ্ধান্ত নিই, তখনো আমি আগের ছবিটা দেখিনি। পরে যখন হ্যাপি ভাগ যায়েগি ছবিটা দেখি, ওটা আমার দারুণ লাগে। এই ছবিতে কাজ করে খুব মজা পেয়েছি। আর জিমি শেরগিলের মতো অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা দারুণ। পিয়ুশ মিশ্রর সঙ্গে আমি এই ছবিতে প্রথম কাজ করলাম। তিনি অসাধারণ অভিনেতা। সেটে তাঁর সঙ্গে খুব ভালো সময় কাটিয়েছি। সবচেয়ে মজার ব্যাপার যখন তাঁর শট থাকত না, তখনো তিনি কস্টিউম পরে সেটে হাজির থাকতেন। তিনি এভাবেই চরিত্রের মধ্যে ঢুকতেন।

প্রশ্ন: ‘হ্যাপি ফির ভাগ যায়েগি’ ছবির হ্যাপির মতো সোনাক্ষীও কি জীবনের কোনো পরিস্থিতি থেকে পালাতে চান?
সোনাক্ষী: হা, হা, হা (সশব্দে হেসে) না, আমি কোনো সমস্যা বা পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে যাই না। আমি সেই সমস্যার দিকে বরং এগিয়ে যাই। কোনো সমস্যাকে আমার জিইয়ে রাখতে ভালো লাগে না। আমি চাই সমস্যাটা চিরতরের জন্য মিটিয়ে ফেলতে।

প্রশ্ন: আজ অনেক গয়নাগাটি পরে এসেছেন। মনে হচ্ছে, আপনার গয়নার খুব শখ?
সোনাক্ষী:
একদমই না। এ ক্ষেত্রে আমি আর পাঁচটা মেয়ের থেকে একদম আলাদা। আর আমি মনে করি, আমি বিশ্বের একমাত্র মেয়ে যে গয়না পছন্দ করি না। আজ সাক্ষাৎকারের জন্য সেজেগুজে এসেছি। শুধু কাজের জন্য মেকআপ করি, অলংকার পরি। আমি খুবই সাধারণ থাকতে ভালোবাসি। মা আমাকে খুব বকাবকি করেন। তিনি বলেন, ‘অন্তত কানে দুলটি তো পর!’

প্রশ্ন: ছোটবেলা থেকেই আপনি এ রকমই...
সোনাক্ষী: একদমই। আমি ছোট থেকে ‘টম বয়ের’ মতো। সাজগোজ করতে একদম ভালোবাসতাম না। স্কুলে গিয়ে ফুটবল খেলতাম। এ জন্য তাড়াতাড়ি স্কুলে পৌঁছে যেতাম। আর মা খুব রেগে যেতেন। মা আমাকে সাজাতে অনেক চেষ্টা করতেন, কিন্তু আমি একদমই উল্টো পথে হাঁটতাম। আসলে আমার খেলাধুলার খুব শখ। তাই সারাক্ষণ খেলার মধ্যে থাকতাম। সাজগোজ একদমই না।

প্রশ্ন: এখন খেলাধুলা করার সুযোগ হয়?
সোনাক্ষী: এখন একদমই হয় না। তাই খুব মিস করি। তবে সেটে সময় পেলে ভলিবল কিংবা ফুটবল খেলি। তবে সেটা খুব কমই।

প্রশ্ন: সারাক্ষণ সেজেগুজে থাকা কি আপনার জন্য চাপের?
সোনাক্ষী: চাপের তো বটেই। কিন্তু কী করব। একজন অভিনেত্রীকে এই চাপ নিতে হয়। এসব আমাদের কাজের অংশ। তাই সেজেগুজে থাকতে হবে। তবে কাজ শেষ হওয়ামাত্রই আমি আমার নিজের পোশাকে ফিরে আসি।

প্রশ্ন: আপনি এখন অনেক স্লিম। নির্দিষ্ট কোনো ডায়েট চার্ট ফলো করছেন?
সোনাক্ষী: এখন স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে বেশি পছন্দ করি। এ ছাড়া শরীরচর্চা করি। আর যখন এই সবকিছুর প্রতিফলন দেখতে পাই, তখন আরও উৎসাহ পাই। তবে মাঝেমধ্যে ইচ্ছা করলে একটু-আধটু ফাস্ট ফুড খেয়ে ফেলি।

হ্যাপি ফির ভাগ যায়েগি ছবির দৃশ্য
হ্যাপি ফির ভাগ যায়েগি ছবির দৃশ্য

প্রশ্ন: এই যে চারদিকে এত চাপ, এত চাপের মধ্যে নিজেকে ফুরফুরে রাখেন কীভাবে?
সোনাক্ষী: আমি স্কেচ এবং পেইন্টিং করি। এই মুহূর্তে আপনি যদি আমার হাতে একটা পেন ধরিয়ে দেন, দেখবেন যে আমার হাত নিজের থেকে চলছে। আর এর জন্য আমাকে কোনো কিছু ভাবতে হয় না। ছবি আঁকা আমাকে সারা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। পেইন্টিং করার সময় চার ঘণ্টা কোথা থেকে চলে যায় বুঝতেও পারি না। আমি তখন এক অন্য দুনিয়ায় থাকি। পেইন্টিং আমার জন্য সত্যি অনেক বড় ‘স্ট্রেস বাস্টার’। জানেন, শুটিং শেষ করে রাত একটার পর বাড়ি ফিরে আমি শুতে যাই না। সোজা আমার পেইন্টিং রুমে চলে যাই। সেখানে গিয়ে ছবি আঁকি। আর আমার আঁকা ছবিগুলো খুব রঙিন হয়।

প্রশ্ন: আপনার পেইন্টিং কখনো বলিউডের কাউকে উপহার দিয়েছেন?
সোনাক্ষী: সালমান খানকে একবার দিয়েছিলাম। টাইগার জিন্দা হ্যায় মুক্তির পর আমি সালমানকে আমার আঁকা একটি বাঘের ছবি দিয়েছিলাম।

প্রশ্ন: ‘দ্য ব্যাং’ কনসার্ট কেমন উপভোগ করলেন?
সোনাক্ষী: আমরা খুব উপভোগ করেছি। আমি স্টেজে পারফর্ম করতে খুবই পছন্দ করি। তিন সপ্তাহ আমরা (সালমান খান, ক্যাটরিনা কাইফ, জ্যাকুলিন ফারনান্দেজ) একসঙ্গে ছিলাম। একসঙ্গে খাওয়া, আড্ডা, জিম, নাচ—সবকিছু। আমরা খুব মজা করে সময়টা কাটিয়েছি।

প্রশ্ন: কোন কোন জিনিস আপনাকে আনন্দ দেয়?
সোনাক্ষী: আমি ছোট ছোট জিনিসের মধ্যে আনন্দ খুঁজে পাই। আর আমি মনে করি, ছোট ছোট জিনিসের মধ্যেই খুশি লুকিয়ে থাকে।

প্রশ্ন: ‘কলঙ্ক’ ছবির শুটিং শুরু হয়ে গেছে। মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
সোনাক্ষী: আমার মনে হয় সব অভিনেতার স্বপ্ন মাধুরী দীক্ষিতের মতো অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করা। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। আর অভিনেত্রী হিসেবে তিনি সবার আদর্শ। তবে এ ব্যাপারে পরে কথা বলব।