বিলের মাঝখানে কেক কেটেছি

‘জান্নাত’ ছবির দৃশ্যে সাইমন ও মাহী। ছবি: সংগৃহীত
‘জান্নাত’ ছবির দৃশ্যে সাইমন ও মাহী। ছবি: সংগৃহীত
>ঈদে মুক্তি পেয়েছে নায়ক সাইমন সাদিকের নতুন সিনেমা ‘জান্নাত’। মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত এই ছবির নায়িকা মাহী। শুরুতে মাত্র ২১টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি। সপ্তাহ যেতে না যেতেই তা এখন চল্লিশে ঠেকেছে। আগামী সপ্তাহে প্রদর্শিত হবে ৬০টি প্রেক্ষাগৃহে। ঈদের সিনেমা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে আজ সকালে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন ‘জান্নাত’ ছবির নায়ক সাইমন সাদিক।

এবারই প্রথম ঈদে আপনার ছবি মুক্তি পেয়েছে। ছবিমুক্তির আনন্দ এবারের ঈদকে নিশ্চয়ই ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে?
সত্যিই। এবারের ঈদ আমার জন্য একেবারই অন্য রকম আনন্দের। ঈদের মতো বড় উৎসবে ছবিমুক্তি বিরাট সৌভাগ্যের। আমার জীবনে এখন পর্যন্ত সেরা ছবি ‘জান্নাত’, সেটাও ঈদে মুক্তি পেল। ঈদের সময় আমি আমার প্রাণের শহর কিশোরগঞ্জে ছিলাম। এখনো আছি। আমার শহরের প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি প্রদর্শিত হচ্ছে না। মোটরসাইকেলে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে পাশের গ্রাম পাকুন্দিয়ার মৌসুমী সিনেমা হলে ছবিটি উপভোগ করেছি। একসঙ্গে ৬০ জন গিয়েছিলাম।

এবার অন্যদের ছবি দেখেননি? ফেসবুকে কোনো স্ট্যাটাস দেখলাম না।
এখনো দেখা হয়নি। এবারের ঈদে যেমন আনন্দ ছিল, তেমনি মন খারাপও ছিল। সে জন্যই অন্য ছবিগুলো দেখতে ইচ্ছে করেনি। ঢাকায় ফিরে অবশ্য সবগুলো ছবি দেখব।

‘রানা প্লাজা’ ছবির পোস্টারে সাইমন ও পরীমনি। ছবি: সংগৃহীত
‘রানা প্লাজা’ ছবির পোস্টারে সাইমন ও পরীমনি। ছবি: সংগৃহীত

মন খারাপ কেন?
আশা ছিল, ঈদে ‘জান্নাত’ ছবিটি সারা দেশে অনেক প্রেক্ষাগৃহ পাবে। নিজের ছবি বলে বলছি না, ‘জান্নাত’-এর মতো এত ভালো একটি সিনেমা অনেক প্রেক্ষাগৃহে দেখানোর দরকার ছিল। ঈদের সময় সারা দেশে আমরা ভালো কোনো প্রেক্ষাগৃহ পাইনি। দর্শকদের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও তাই অনেকে ছবিটি দেখতে পারেননি। আশার কথা হচ্ছে, কাল শুক্রবার থেকে ঢাকার অনেকগুলো ভালো মানের প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি প্রদর্শিত হবে। আস্তে আস্তে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা বাড়ছে। আমি বিশ্বাস করি, ‘জান্নাত’ সামনের সপ্তাহে আরও বেশি প্রেক্ষাগৃহ পাবে। এটা খুবই ভালো ছবি, দর্শকের ছবি। দর্শকেরা দেখার পর অনেক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। জান্নাত প্রশংসা কুড়াচ্ছে, সামনে আরও কুড়াবে।

‘জান্নাত’ নিয়ে সবচেয়ে ভালো প্রতিক্রিয় কী ছিল?
অনেকে অনেক রকম মন্তব্য করছেন। কেউ বলছেন, অনেক বছর পর প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবি দেখলাম। অনেকে এটাও বলেছেন, শেষ দেখেছিলাম ‘পোড়ামন’, এবার ‘জান্নাত’। ‘পোড়ামন’ ছবিটিকে ছাড়িয়ে গেছে ‘জান্নাত’। ছবির নির্মাণ, শিল্পীদের অভিনয়, অসাধারণ সব গান দেখে সবার মত হচ্ছে, ‘পোড়ামন’-এর থেকে অনেক ভালোভাবে তাঁরা আমাকে পেয়েছে ‘জান্নাত’ ছবিতে। এ ছবিতে দর্শকেরা হিরোকে নয়, একজন অভিনেতাকে পেয়েছেন। এমন মন্তব্য আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।

সাইমন সাদিক
সাইমন সাদিক

আপনার বাবা-মা কি ছবিটি দেখেছেন?
আমার বাবা-মা সব সময় আমার সিনেমা দেখেন। তাঁরা আমার সবচেয়ে বড় সমালোচক। এবার এখনো তাঁরা ছবিটি দেখতে পারেননি। কারণ আমাদের শহরের প্রেক্ষাগৃহে এখন চলছে ‘ক্যাপ্টেন খান’। আমার শহরে মুক্তি পেলেই আব্বা-আম্মা ছবিটি দেখতে যাবেন।

আপনার প্রিয় নায়িকা কে, যাঁর সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করতে চান?
প্রিয় নায়িকা আর প্রিয় অভিনেত্রী যা-ই বলি না কেন, তিনি হচ্ছেন মাহী। তাঁর সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে। তিনি খুবই আন্তরিক এবং অনেক ভালো অভিনয় করেন। আমারও চেষ্টা থাকে, তাঁর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভালো কাজ করার। সব মিলিয়ে মাহীর সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।

একসময় বলেছিলেন, ‘পোড়ামন’ আপনার অভিনয়জীবনের অন্যতম সেরা ছবি। কিন্তু এই ছবির সিক্যুয়েল ‘পোড়ামন-২’তে আপনি ছিলেন না। এ নিয়ে কোনো দুঃখবোধ আছে?
দুঃখবোধ নেই। তবে খুব ইচ্ছা ছিল ‘পোড়ামন’ ছবির সিক্যুয়েলে কাজ করার। পরে যখন হয়নি তখন ব্যাপারটাকে স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছি। যে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে ‘পোড়ামন’ করেছিলাম, সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরে আমার যোগাযোগ ছিল না। তারপরও আমি চেষ্টা করেছি, যেন ছবিটিতে কাজ করতে পারি, কিন্তু হয়নি। তবে কষ্ট একটু পেয়েছি। অনেক বেশি কষ্ট পাওয়ার কারণ বা কথা ছিল না। কাজটি করতে পারলে আরও ভালো লাগত, এই আরকি। ‘পোড়ামন’ ছবির সিক্যুয়েলে আমাদেরই ছোট ভাই সিয়াম অভিনয় করেছে। দারুণ প্রশংসাও কুড়িয়েছে, এটা আমাকে খুব আনন্দ দিয়েছে।

‘রান্না প্লাজা’ নামের একটি ছবিতে আপনি অভিনয় করেছিলেন। কয়েকবার মুক্তির কথাও শোনা গিয়েছিল। তারপর আর কোনো খবর নেই ছবিটির। আপনি কি কিছু জানেন?
ওই ছবির কোনো খবর আমার কাছে নেই। এটা প্রযোজক ও পরিচালকই ভালো বলতে পারবেন। আমি আসলে এখন ‘জান্নাত’ নিয়ে ভাবছি। ‘জান্নাত’ ছবির সাফল্য আমাকে অন্য কিছু ভাবতে দিচ্ছে না। আমার জীবনের একটা মাইলফলক হতে পারে এই ছবিটি।

‘জান্নাত’ দেখতে যাওয়ার আগে সাইমনের সেলফিতে বন্ধুরা
‘জান্নাত’ দেখতে যাওয়ার আগে সাইমনের সেলফিতে বন্ধুরা

নায়ক হিসেবে নিজেকে ধরে রাখতে কীভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন?
অভিনয়ের প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হচ্ছি। ফিটনেস ধরে রাখতে নিয়মিত জিমে যাচ্ছি। সত্যি কথা বলতে আমি মনে করি, অভিনয় শিখে কিংবা বলে কয়ে হয় না। যত বৈচিত্র্যময় গল্প পাব, ততই নিজেকে প্রমাণ করতে পারব। একজন অভিনয়শিল্পী হতে হলে ভালো পর্যবেক্ষক হতে হয়। আমি ভালো একজন পর্যবেক্ষক। সব ধরনের মানুষকে দেখি, তাঁদের কাছ থেকে শিখি। যে চরিত্র পাই সেটা নিয়ে ভাবি, পড়ি, সেই ধরনের মানুষের সঙ্গে মিশি।

আপনার পরিবারের কেউ তো অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। বাবা-মা নায়ক সাইমনকে নিয়ে কী বলেন?
আমার বাবা-মা তো উচ্ছ্বসিত। আরও অনেক ভালো করার পরামর্শ দেন। অনেক ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন আমাকে নিয়ে।

আজ তো আপনার জন্মদিন। আপনাকে শুভেচ্ছা। নায়কের জন্মদিন কীভাবে উদ্‌যাপন চলছে?
জন্মদিন সব সময় সাদামাটাভাবেই করি। বড় করে কোনো কিছুই কখনো করা হয়নি। বন্ধুরা কেক কাটে, এবারও তাই হয়েছে। এবার দিনটা কাটাচ্ছি কিশোরগঞ্জের কলাপাড়ায়। গতকাল সন্ধ্যায় বন্ধুরা কেক ও ফুল এনেছে। তবে সব সময় ঘরের মধ্যে কেক কাটি। এবার চাঁদনী রাতে খোলা আকাশের নিচে বিলের মধ্যে কেক কেটেছি।