'কলকাতায় ডায়েট করতে বলা শাস্তি'

জ্যোতিকা জ্যোতি
জ্যোতিকা জ্যোতি

সকালে সবুজ বাতি জ্বলছিল জ্যোতিকা জ্যোতির ফেসবুক প্রোফাইলে। গতকাল সোমবার দুপুরে কলকাতায় তাঁর নতুন ছবি নিয়ে প্রথম সংবাদ সম্মেলন হলো। কী নিয়ে কথা হলো? সাংবাদিকদের কী জানালেন? পরিচালক, নায়িকাই-বা কী বললেন? জানতে ইচ্ছে করে। ঢাকার মেয়ে অভিনয় করছেন কলকাতার ছবিতে। সদ্য শেষ হলো সেটার ডাবিং। পোস্টারের ডিজাইন শেষ, কয়েক দিন পর ছাপা হবে। কলকাতার পথে পথে দেয়ালে ঋত্বিক-জ্যোতির ছবি আহ্বান করবে, আসুন, দেখুন নতুন সময়ের ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’দের। আগামী নভেম্বরের শেষে মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি। কলকাতা থেকে মুঠোফোনে কথা বলেন ছবির নায়িকা জ্যোতিকা জ্যোতি।

এই ঢাকা, তো এই কলকাতা! কখন যাচ্ছেন, কখন আসছেন টের পাওয়া যাচ্ছে না। কবে গেলেন?
এই তো কদিন আগে। অনেকে ভেবেছে, আমি বোধ হয় পুরোপুরি ভারতে চলে গেছি। আসলে যাতায়াতটা খুব ঘনঘন করতে হয়েছে। প্রস্তুতি ও কাজ নিয়ে বেশ পরিশ্রম গেল। এবার শুরু হলো প্রচারণা।

কলকাতায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রচারণা শুরু হলো?
বলা যায়। আসলে সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত বসা হয়নি। পরিচালক ছবিটা নিয়ে সবাইকে জানালেন, কী হচ্ছে, কবে হচ্ছে, কেমন হচ্ছে? বাংলাদেশি হিসেবে আমার কাছে অনেক কথা জানার ছিল তাঁদের। ঢাকা ও কলকাতার ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের পার্থক্য ও অভিজ্ঞতার কথা জানতে চান তাঁরা।

পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের সঙ্গে জ্যোতিকা জ্যেতি
পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের সঙ্গে জ্যোতিকা জ্যেতি


‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ শরৎচন্দ্রের গল্প। ২০১৮ সালে এসে পুরোনো দিনের গল্প কেমন লাগবে?
যা ভাবছেন, কাহিনি সে রকম নয়। ছবিতে দেখবেন পুরোপুরি ব্যতিক্রম এক ঘটনা, এখনকার গল্প। ছবির গল্পের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকটা হচ্ছে গল্পটা বলার ধরন। মানুষের ভেতরে রাজলক্ষ্মীর একটা ছবি আছে। সেই ছবির সঙ্গে এই সিনেমার রাজলক্ষ্মীর মিল পাওয়া যাবে খুব কম।

তার মানে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে শুধু ‘রাজলক্ষ্মী’ ‘শ্রীকান্ত’ নামগুলোই নেওয়া হয়েছে?
অনেকটা তা-ই। তবে হ্যাঁ, শ্রীকান্তের ছোটবেলার যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, সেটা ছবিতে দেখা যাবে। বলা যায়, শরৎচন্দ্রের রাজলক্ষ্মীর ছায়া অবলম্বনে ছবিটা তৈরি করেছেন প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য। উপন্যাস বা এর ওপর ভিত্তি করে আগে নির্মিত ছবিগুলো ছিল একটা নির্দিষ্ট সময়ের। আমাদের রাজলক্ষ্মী এই সময়ের গল্প। এখানে রাজনৈতিক, আর্থিক নানা বিষয় আছে, একজন নারীর দীর্ঘ জার্নি আছে। আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট আছে। একটা গল্প যেভাবে শুরু হয়, যেভাবে শেষ হয়, এ ছবিতে সে রকম হয়নি।

‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ ছবির নায়ক ঋত্বিক চক্রবর্তী, জ্যোতিকা জ্যোতি ও প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য
‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ ছবির নায়ক ঋত্বিক চক্রবর্তী, জ্যোতিকা জ্যোতি ও প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য


প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তা বুঝতে পেরেছিলেন?
শুরুতে সে রকমই ভেবেছিলাম। কিন্তু চিত্রনাট্য পড়ে দেখি অন্য জিনিস। পাঁচবার চিত্রনাট্য পড়েছি। শুরুতে অনেক কিছু বুঝিনি। পরিচালকের সঙ্গে কয়েকবার শেয়ার করে পরে বুঝেছি। একবার ভাবলাম, সেই ইন্টারমিডিয়েটে ‘শ্রীকান্ত’ পড়েছিলাম। আবার নতুন করে পড়ব। শ্রীকান্তকে নিয়ে যে সিনেমাগুলো হয়েছে, সেগুলো দেখব। পরিচালককে বললাম সেটা। দাদা বললেন, ‘যেহেতু আমাদের চিত্রনাট্য পড়ে ফেলেছ, এখন আর অন্য কিছু পড়ো না বা দেখো না। আমি চাই, তুমি তোমার মতো করে করো।’ কথাটা শুনে প্রথমে মনে হলো, নিষেধ করল কেন! পরে বুঝলাম, কেন নিষেধ করেছিলেন। আমাদের টিমের লোকেরা সব সময় বলতেন, প্রদীপ্ত যা বলে, তা-ই করো। দেখলাম, এখানে তাঁর অন্য রকম একটা ইমেজ আছে, তাঁর ওপর সবার অগাধ আস্থা! তার কথাটাই সব সময় শোনার চেষ্টা করেছি। কারণ, আমি চেয়েছি, কাজটা যেন ভালোভাবে হয়। কেউ যাতে বলতে না পারে যে অযোগ্য একজনকে জোর করে রাজলক্ষ্মীর বানানো হয়েছে।

পরিচালক কী কী করতে বলেছেন?
অনেক কিছু। যেমন তিনি আমাকে ট্যাক্সি বাদ দিয়ে লাকাল বাসে যাতায়াত করতে বলেছিলেন। সিম্পলিসিটি তাঁর খুব পছন্দ। কলকাতার রাস্তায় প্রচুর হেঁটেছি। হাঁটতে ভালোই লাগত। যখন একা থাকতাম, মামা-মামি বা টিমের লোকজন যখন থাকত না, তখন চায়ের দোকানে বসে চা খেয়েছি। মানুষের সঙ্গে কথা বলতাম, তাঁদের কথাগুলো কানে নেওয়ার চেষ্টা করতাম, ভাষার ভঙ্গিটা রপ্ত করার জন্য। একটা জায়গায় ভাষার যে কত ভ্যারিয়েশন হতে পারে, সেখানে না থাকলে টের পেতাম না। কেউ হিন্দিতে কথা বলছে, কেউ আবার অন্য ভাষায়। বাংলা ভাষাটাই বলছে অনেক রকম করে। এগুলো ছিল আমার একরকম ওয়ার্কশপ। ছবিতে ক্ল্যাসিক্যাল নাচের বেশ কিছু মুভমেন্ট ছিল। সেসব শেখার জন্য পরিচালক আমার জন্য টিচার রেখেছিলেন।

এই যে হঠাৎ আবার কলকাতা গেলেন, শুধু সংবাদ সম্মেলনের জন্যই?
না, ডাবিংও ছিল। পরিচালক বলে দিয়েছিলেন, যেন ডাবিংয়ের অন্তত সপ্তাহখানেক আগে চলে আসি।

‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ ছবিতে শিল্পী সোহিনী চক্রবর্তীর কণ্ঠে ঠোঁট মিলিয়েছেন জ্যোতি
‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ ছবিতে শিল্পী সোহিনী চক্রবর্তীর কণ্ঠে ঠোঁট মিলিয়েছেন জ্যোতি


শুটিংয়ের সময় কোনো ঘটনা মনে আছে?
ওখানে কারও কিছু ভালো লাগলে ওরা বলে, ‘চমৎকার।’ আমি একবার বলে ফেললাম ‘জোস্‌’। কথাটা সবার খুব মনে ধরল। দেখলাম তাঁরাও বলতে শুরু করেছে। কোনো শট ভালো হলে বলত, জোস্‌ হয়েছে। এই যে সংবাদ সম্মেলনে এলাম, টিমের লোকেরা দেখে বলল জোস্‌ লাগছে। শুরুতে এই শব্দটার জন্য সবাই আমাকে খ্যাপাত।

যাওয়ার আগে ঢাকায় কী করছিলেন? এসে কী করবেন?
যাওয়ার আগে ‘মায়া’ ছবির শুটিং করলাম। দেশে ফিরে একটা শর্টফিল্ম আর একটা খণ্ড নাটকের শুটিং আছে। শর্টফিল্মের কাজটা রাতে শুটিং করতে হবে। গল্পটা খুব ভালো লেগেছে। আবার অবশ্য কলকাতায় ফিরতে হবে। কিছুদিন পর পোস্টার লঞ্চিং হবে। ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ করার পর বুঝেশুনে কাজ করতে হচ্ছে। সব কাজ করতে পারছি না। এর মধ্যে দেশে চার-পাঁচটা ডকু ছবি করেছি। সিনেমা করলাম দুটি।

কলকাতায় কোথায় থাকেন?
কলকাতায় আমার দুই মামা, দুই খালা থাকেন। যাদবপুর, দমদম আর কৃষ্ণনগরে। বেশির ভাগ সময় যাদবপুর আর দমদম থাকা হয়।

কী কী খেলেন? রাস্তার খাবার, ফলের রস খেয়েছেন?
আমাকে ডায়েট চার্ট ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কলকাতায় ডায়েট করতে বলা শাস্তি। অবশ্য আমার ওজন কমানোর দরকার ছিল। এখনো নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। এখানে খাবার এত সস্তা আর এত ভ্যারাইটির। অথচ ফল আর টকদই খেয়ে থাকতে হয়! ধরেন, ঢাকায় কিছু খেতে চাইলে কোনো একটা জায়গায় যেতে হয়, এখানে সে রকম না। রাস্তায় বের হলে খাবার আর খাবার। মিষ্টি আমার খুব পছন্দ। এখানে একটু পরপর মিষ্টির দোকান, রসগোল্লাগুলো খুবই ভালো। ঢাকায় আধা কেজির নিচে মিষ্টি কেনা যায় না। কিন্তু এখানে দুই পিস মিষ্টি কেনার প্রচলন আছে, চাইলে এক পিসও কেনা যায়। এখানে ভাঁড়ের চা খেতে আমার খুব ভালো লাগে। তাজা ফলের রস তো যেখানে-সেখানে পাওয়া যায়। পনির দিয়ে প্রচুর আইটেম পাওয়া যায়, পনির আমার খুব পছন্দের।

‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ ছবির কলাকুশলীরা
‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ ছবির কলাকুশলীরা


কলকাতায় সিনেমা দেখেছেন?
নিয়মিত। এখানকার দর্শক বেশ সিনেমাবোদ্ধা। সিনেমা দেখা তাঁদের নিয়মিত জীবনযাপনের অংশ। ছবি দেখে চমৎকার ভঙ্গিতে মত দেয়, আকস্মিকভাবে বলে দেয় না যে ছবি ‘ভালো হয়েছে’ বা ‘খারাপ হয়েছে’। আমাদের অনেক ছবি এখানকার দর্শকেরা পছন্দ করেছেন।

আমাদের কোন ছবিগুলো তাঁরা পছন্দ করেছেন?
‘অজ্ঞাতনামা’, ‘আয়নাবাজি’, ‘অনিল বাগচীর একদিন’। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, আমার দুটি ছবিও দেখেছে অনেকে। ‘হালদা’ নিয়ে অনেকে কথা বলেছে, যারা ‘স্বপ্নজাল’ দেখেছে খুব প্রশংসা করেছে। ‘টেলিভিশন’ ছবির গল্পটা পছন্দ করেছেন অনেক দর্শক। আমাদের নাটকের অনেক দর্শক আছেন এখানে। কলকাতায় ঢাকার চ্যানেলগুলো দেখা যায় না তাতে কী, ইউটিউব থেকে তাঁরা আমাদের নাটক দেখে এবং খুব পছন্দ করেন।

তাহলে বোঝা যাচ্ছে, পরিচালক আপনার ওপর খুশি?
তাই তো মনে হচ্ছে। জিজ্ঞেস করেছিলাম, রাজলক্ষ্মী হিসেবে আমাকে না নিলে কাকে নিতেন। তিনি বললেন, আমার মাথায় আসছে না। শুধু ডিরেক্টর না, আমার কাজে সবাই খুব খুশি। আমাকে তাঁরা পুরো প্রোডাকশন প্রক্রিয়াটির সঙ্গে রেখেছিলেন। সেটাও এনজয় করেছি। কো-অ্যাক্টররা, বিশেষ করে ঋত্বিক, অপরাজিতা দিদিরা খুব হেল্প করেছেন।