ফ্রি নাট্যোৎসবে কেউ কেউ ক্ষিপ্ত!

আইডিএলসি নাট্যোৎসবের লোগো
আইডিএলসি নাট্যোৎসবের লোগো

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আজ মঙ্গলবার শুরু হয়েছে পাঁচ দিনের নাট্যোৎসব। উৎসবের আয়োজন করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড। অনলাইন থেকে বিনা মূল্যে নাটকের টিকিট সংগ্রহ করে উৎসবে নাটক উপভোগ করা যাবে। নাটকের মতো শ্রমসাধ্য মাধ্যমকে এভাবে বিনা মূল্যে প্রদর্শনীর ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন তরুণ নাট্যকর্মীরা। অনেকে এর তীব্র নিন্দাও জানিয়েছেন।

নাট্যকার শুভাশীষ সিনহা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘থিয়েটার বিনা পয়সায় কোটি টাকার শ্রম দেওয়া শিল্প। একে মাগনা দেখাবেন না।’ পাভেল রহমান লিখেছেন, ‘দর্শনীর বিনিময়ে নাট্যচর্চার ৪৬ বছর পর ফ্রি টিকিটে নাট্যোৎসব! বড়ই দুঃখজনক পদক্ষেপ। নিন্দা জানাই।’

অনেকে বলেছেন, বিনা মূল্যে নাটক দেখার এ উৎসব যদি জাতীয় নাট্যশালার বাইরের কোনো ভেন্যুতে হতো, তাহলে আয়োজকদের সাধুবাদ জানানো যেত। জাতীয় নাট্যশালা স্বাধীনতা-পরবর্তী চার দশকের নাট্য আন্দোলনের ফসল। নামমাত্র অর্থে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে নাট্যশালা ভাড়া দেওয়ার একরকম নিন্দাই জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, নাটককে নিজেদের বিজ্ঞাপনের কাজে ব্যবহার করছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিনা মূল্যের এ নাট্য উৎসবের নিন্দা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নাট্যকর্মী বলেন, কিছু মানুষ আছেন যাঁরা সবকিছুর সমালোচনা করে থাকেন। ঢাকায় পৃথিবীর সব থেকে বড় শাস্ত্রীয় সংগীত উৎসব হয়। সেটি বিনা মূল্যেই উপভোগ করেন দর্শকেরা। ঢাকায় লোকসংগীত উৎসব হয়, পৃথিবীর নানা দেশ থেকে শিল্পীরা এখানে এসে গান করেন, সেই উৎসবটিও শ্রোতারা বিনা মূল্যেই উপভোগ করেন। বিনা মূল্যে নাট্য উৎসবের আয়োজন করলে সমস্যা কী?

আয়োজক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মঞ্চনাটক শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং চিরতরুণ মনের নানা রঙে সাজানো সমাজ ও সভ্যতার এক বাস্তব প্রতিচ্ছবি। এই উপলব্ধি থেকে বাংলাদেশের মঞ্চনাটকে তরুণদের সম্পৃক্ত করে নতুন প্রাণসঞ্চারের লক্ষ্যে আমাদের প্রত্যাশা এই আয়োজন নিঃসন্দেহে মঞ্চনাটকের প্রতি তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করবে ও এ দেশের মঞ্চনাটকে নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের আরও অনুপ্রাণিত করবে।

ফেসবুকে খ্যাপা বিডি নামের একটি আইডি থেকে এ উৎসবের নিন্দা জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘দনিয়া পাঠাগার, নজরুল ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়াম, পুরান ঢাকার জহির রায়হান মিলনায়তন, পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এ নাট্যোৎসবটি হতে পারত কিংবা ঢাকার বাইরের কোনো জেলা শহরে। ফ্রি-নাট্যোৎসবের নামে জাতীয় নাট্যশালায় টিকিট কেটে নাটক দেখার নিয়মিত চর্চাকে নষ্ট করার জন্য এই নাট্যোৎসব আয়োজকদের অগ্রিম ধন্যবাদ জানাই।’

পাঁচ দিনের এ উৎসবে দেখা যাবে প্রাঙ্গণে মোরের ‘হাছনজানের রাজা’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের ‘দ্য লোয়ার ডেপথ্স’, ঢাকা পদাতিকের ‘ট্রায়াল অব সূর্যসেন’, পালাকারের ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’, বটতলার ‘ক্র্যাচের কর্নেল’, ঢাকা থিয়েটারের ‘পঞ্চনারী আখ্যান’, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ‘দ্য আলকেমিস্ট’, থিয়েটারের ‘মুক্তি’, প্রাচ্যনাটের ‘সার্কাস সার্কাস’ ও নাগরিকের ‘ওপেন কাপল’। ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করে বিনা মূল্যে এ উৎসবের টিকিট সংগ্রহ করা যাবে।