নাটক ও টেলিছবির পার্থক্য কী?

স্বপ্নগুলো তোমায় খোঁজে নাটকে অভিনয় করেছেন রিচি সোলায়মান ও সজল
স্বপ্নগুলো তোমায় খোঁজে নাটকে অভিনয় করেছেন রিচি সোলায়মান ও সজল

এই সপ্তাহে একই দিনে দুটি প্রথম সারির টিভি চ্যানেলে দুটি টেলিছবি দেখার সুযোগ হলো। ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে মাছরাঙা টিভিতে চয়নিকা চৌধুরীর পরিচালনায় প্রচারিত হলো টেলিছবি স্বপ্নগুলো তোমায় খোঁজে। অভিনয়ে রিচি সোলায়মান, সজল প্রমুখ। টেলিছবির গল্পে দেখানো হয়, সজল ভালোবাসে রিচিকে। কিন্তু রিচি সেটা মোটেই গ্রহণ করে না। কারণ রিচির ধারণা, সজল বিপথগামী, মাদক নেয় এবং তাঁর ভাই কাফির হত্যাকারী। রিচির এই ধারণা ভাঙার জন্য সজল তার খালাতো ছোট বোনের সঙ্গে বিয়ের ভান করে। শেষে যখন রিচিকে জানানো হয় কাফিই প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ড্রাগ নিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে মারা যায়, তখন সজলকে গ্রহণ করে। এই হলো গল্প।

এককথায় বলব, পরিচ্ছন্ন নির্মাণ কিন্তু দুর্বল গল্প। রিচির ভুল ভাঙানোর জন্য তো নতুন কিছুর প্রয়োজন হলো না। শেষে যে সত্যটি জানানো হলো, তা আগে বললেই তো আর এত ভণিতা বা অভিনয়ের দরকার হতো না। এ ছাড়া রিচির কাছে সজলের গ্রহণযোগ্যতা তৈরির জন্য খালাতো ছোট বোনের সঙ্গে বিয়ের যে ভান দেখানো হয়েছে, তা অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। রিচির প্রতি সজলের যে দুর্বার ও অদম্য ভালোবাসা কেন, কারণটা জানালে আরও ভালো হতো। আর অভিনয়ের কথা বলব, রিচির অভিনয় ছিল স্বাভাবিক আর সজলের মাঝে মাঝে অস্বাভাবিক।

একই দিন রাত ১১টায় এটিএন বাংলায় প্রচারিত হলো টেলিছবি শাওন রহস্য। রচনা ও পরিচালনা শৌর্য দীপ্ত সূর্য। অভিনয় করেছেন আল মামুন, প্রভা, ইন্তেখাব দিনার প্রমুখ। প্রভার বন্ধু শাওন হঠাৎ মারা যান। কিন্তু শাওনের মৃত্যুটা হত্যা না দুর্ঘটনা, সেই রহস্য উদ্‌ঘাটন টেলিছবিটির গল্প। প্রভার বাগ্‌দত্তা আদেল বিয়ের জন্য তাড়াহুড়ো করে, কিন্তু প্রভা গোয়েন্দা দিনারের সঙ্গে জড়িয়ে যায় শাওনের মৃত্যুরহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য। শেষে সবাইকে চমকে দিয়ে দিনার প্রমাণ করে, প্রভার বাগ্‌দত্তা আদেলই শাওনের হত্যাকারী।

রহস্যগল্প হিসেবে টেলিছবির গল্পটি খুবই দুর্বল মনে হয়েছে। প্রভার বাগ্‌দত্তা আদেলই শাওনের হত্যাকারী প্রমাণ করে লেখক ও নির্মাতা চমক দেখিয়েছেন ভাবলেও কিন্তু একটুও চমকানোর মতো কিছু হয়নি; বরং আদেলের সঙ্গে প্রভার বিয়ে নিয়ে কথোপকথনের সময়ই দর্শক বুঝে ফেলেছেন, আদেলই হবেন শাওনের হত্যাকারী। রহস্যের তেমন কোনো জটও সৃষ্টি করতে পারেননি নির্মাতা। চিত্রনাট্য, সংলাপ এবং অভিনয়ও ছিল খুবই সাদামাটা। শব্দধারণ ছিল ত্রুটিপূর্ণ ও নিম্নমানের, ফলে মাঝে মাঝেই বিরক্তিকর মনে হয়েছে। দুটি টেলিছবি দেখার পর মনে হয়েছে, ইদানীং নাটককেই টেলিছবির নামে গেলাচ্ছেন নির্মাতা ও টিভি চ্যানেলগুলো। কেননা উল্লিখিত দুটি টেলিছবিতেই নাটকের সঙ্গে তেমন বিশেষ কোনো পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারেননি তাঁরা, না সময়ের দিক থেকে, না কাহিনি ও চিত্রনাট্যের দিক থেকে। আসলে এই দুটির পার্থক্য কী, এটা বোধগম্য হলো না।

এবার তাহলে একটি নাটক নিয়ে কথা বলা যাক। ৭ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় শামসুল আলমের প্রযোজনায় জিটিভিতে প্রচারিত হলো বিশেষ নাটক কৃষ্ণপক্ষ। এতে অভিনয় করেছেন মুনিরা মিঠু, শ্যামল মাওলা, ইশানা প্রমুখ। নাটকের গল্প—শ্যামলের অসুস্থ প্রেমিকা ইশানা হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে। বাইরে উদ্বিগ্ন শ্যামল ও ইশানার মা প্রহর গুনছেন আর ফ্ল্যাশব্যাকে দেখাচ্ছেন কীভাবে ইশানার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ, প্রেম ইত্যাদি। এরই মাঝে আরেক প্রতিকূলতা দেখা দিল, সব জেনেশুনেও শ্যামলের মা ও বোন তাঁকে অন্যত্র বিয়ে দেবেন। শ্যামল ফাঁদে পা-ও দিয়েছিলেন। তারপর চক্রান্তের শেষ মুহূর্তে শ্যামল আবার দিশেহারা হয়ে ছুটে এলেন ইশানার কাছে।

গল্পের পটভূমি ভালো হলেও বুনন ভালো হয়নি। মা ও বোনের আকুতি লেখক ও নির্মাতা যুক্তিসংগত করে তুলতে পারেননি বলে সেটা অমানবিক ও চক্রান্ত মনে হয়েছে। গল্পের সঙ্গে কিছুটা বেমানান ও বেখাপ্পাও মনে হয়েছে। অন্যদিকে নির্মাণেও বাস্তবতা ও বিশ্বস্ততার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। লাইফ সাপোর্ট নিয়ে যে মেয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে, তার ঠোঁটে দেওয়া হয়েছে জ্বলজ্বলে লিপস্টিক, চোখে কাজল! এই হলো আমাদের বর্তমান টিভি নাটকের হালচাল।

৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে সুমির উপস্থাপনায় এনটিভিতে সরাসরি প্রচারিত হলো সংগীতানুষ্ঠান ‘আজ সকালের গান’। এ দিন শিল্পী ছিলেন রুমানা ইসলাম। তিনি পরপর প্রায় দুই ঘণ্টা গান করেছেন। গানের ফাঁকে ফাঁকে শুনিয়েছেন গান নিয়ে তাঁর বেড়ে ওঠার গল্প। তাঁর বাবা বিখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী খান আতাউর রহমানের সান্নিধ্য এবং প্রত্যক্ষ অনুপ্রেরণার কথা। তাঁর বাবা কীভাবে তাঁর জন্য গান রচনা করতেন, সুর দিতেন, এসবই আবেগমাখা কণ্ঠে একে একে বর্ণনা করেছেন শিল্পী। তাঁর উল্লেখযোগ্য পরিবেশনার মধ্যে ছিল ‘মন মাঝি তোর বইঠা নে রে’, ‘জীবন সে তো পদ্ম পাতায় শিশির বিন্দু’, ‘যদি আর দেখা নাই হয়’ ইত্যাদি। এই শেষের গানটিই ছিল বাবার সঙ্গে গাওয়া শিল্পীর শেষ গান। বলাবাহুল্য গানের ফাঁকে এসব স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে পুরো অনুষ্ঠানই হয়ে উঠেছিল বেশ উপভোগ্য।

৮ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা ৫ মিনিটে বাংলাভিশনে প্রচারিত হলো সেলিব্রেটি শো ‘আমার আমি’। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাভিশনে নিয়মিত প্রচারিত হয়ে আসছে অনুষ্ঠানটি। এ দিন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী মিথিলা, অতিথি ছিলেন সংগীতশিল্পী অর্ণব। এর আগে দীর্ঘদিন অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন মুনমুন। তার আগে করেছেন অপি করিম। এভাবেই পালাবদলের খেয়ায় এবার যুক্ত হয়েছেন মিথিলা। এ দিনের অতিথি শিল্পী অর্ণবের সঙ্গে উপস্থাপক মিথিলার আছে পূর্ব সখ্য। তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের অনেক বিষয়ই উঠে এসেছে দুজনের কথোপকথনের মাঝে। হয়তো সেটা একটু বেশিই এসেছে, যে কারণে শিল্পী অর্ণবের আরও অনেক অজানা দিক দর্শকের কাছে অজানাই রয়ে গেল। শেষে বলব, নতুন উপস্থাপক হিসেবে এ অনুষ্ঠানে মিথিলার অগ্রযাত্রা সফল হোক। বৈচিত্র্যময় ও নতুন মাত্রা যুক্ত হোক ‘আমার আমি’র—এ প্রত্যাশা রইল।