শাপলা-সাকুরার মেলবন্ধন

জাপানের দুই শিল্পীর সংগীত পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো
জাপানের দুই শিল্পীর সংগীত পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো

আলো-ঝলমলে মঞ্চের পেছনের পর্দায় তখন ফুটে উঠেছিল জাপান ও বাংলাদেশের মানুষের বন্ধুত্বের নানা চিত্র। মঞ্চে গান। ‘একই বৃন্তে শাপলা আমি তুমি সাকুরা/ সুখে-দুঃখে মিলে আছি বন্ধু আমরা/ আমি লাল-সবুজের দেশ/ তুমি সূর্য উদয়ের দেশ’—দুই দেশের শিল্পীরা এক হয়ে গাইলেন গানটি। ঢাকাকেন্দ্রিক জাপানি ব্যান্ড ‘বাজনা বিট’ আর বাংলাদেশের শিল্পী সন্ধির যৌথ পরিবেশনা জাতীয় নাট্যশালার মিলনায়তনটিও যেন দুলছিল।

জাপানি শিল্পীদের কণ্ঠে বাংলাদেশের মানুষের গুণগান, এ দেশের প্রকৃতির গুণগান আর বাংলা ভাষায় গানের পরিবেশনায় জাপান ও বাংলাদেশের শিল্পীরা শুধু দুই দেশের সংস্কৃতি নয়, যেন দুই দেশের বন্ধুত্বের গভীরতাই তুলে ধরেছেন। এক মঞ্চে থেকে দুই দেশের শিল্পীরা দ্যুতি ছড়ানোর পাশাপাশি পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটান। আর মিলনায়তনের দর্শকও জাপানের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়।

অনুষ্ঠানের শিরোনাম ‘জাপান ফেস্ট ২০১৮’। ঢাকার জাপান দূতাবাস ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে গতকাল শনিবার বিকেলে জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় আলো-ঝলমলে এই আয়োজন। জাপান উৎসবের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোয়াসু ইজুমির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে জাপান অন্যতম অংশীদার। মুক্তিযুদ্ধের পরে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর জাপান সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক যে নতুন মাত্রা পেয়েছিল, বাংলাদেশ-জাপানের সেই মৈত্রী ও বন্ধুত্বের দৃঢ়তা সেভাবেই সামনে এগিয়ে যাবে।’

অনুষ্ঠানে ছিল বাংলাদেশ ও জাপানের শিল্পীদের যৌথ পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো
অনুষ্ঠানে ছিল বাংলাদেশ ও জাপানের শিল্পীদের যৌথ পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো

লিয়াকত আলী বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। জাপানের মানুষের দার্শনিক গভীরতা তাদের জীবনভাবনাকে উন্নত করেছে। তাদের এই সাংস্কৃতিক ভিত্তি বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে।’

জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোয়াসু ইজুমি বলেন, জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। জাপান ও বাংলাদেশের মানুষের সম্পর্ক দিন দিন আরও গভীর হচ্ছে।

‘আমি তোমার সঙ্গে সারা জীবন পথ চলতে চাই/ আমি বিভোর হয়ে তোমার প্রেমে পড়ে যাই’—জাপানের একজন শিল্পীর এই গানের পরিবেশনা যে স্থানীয় দর্শকদের মনে ধরেছে, তার প্রমাণ মুহুর্মুহু করতালি। অনুষ্ঠানে গানে গানে জাপানের ঋতুবৈচিত্র্য, ফুল, ফল, নদী ও বাংলাদেশের প্রকৃতির অপরূপ রূপের বর্ণনা করেন জাপানি শিল্পীরা। জাপানের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠানটি।

মিলনায়তনের বাইরে জাতীয় নাট্যশালা লবিতে ছিল জাপানের বনসাই ও বাংলাদেশ আর জাপানের সংস্কৃতি ও বন্ধুত্বের আলোকচিত্রের প্রদর্শনী।