ছোট মানুষটির বড় দুঃখ

পিটার ডিঙ্কলেজ
পিটার ডিঙ্কলেজ

দীর্ঘদিনের সঙ্গীকে ছেড়ে যেতে কেমন লাগে? ‘গেম অব থ্রোনস’ শেষ হওয়ার পর পিটার ডিঙ্কলেজের সে রকমই লেগেছে। সিরিজটির শুটিং শেষে লোকটার বুকের ভেতরে মোচড় দিয়ে উঠেছিল। রূপকথার জগৎ থেকে বাস্তব দুনিয়ায় ফিরে যাওয়ার কষ্টে, তা নয়। বরং ক্যামেরা বন্ধ হওয়ার পর একটা বিশাল পরিবারের সঙ্গে একাত্ম হয়ে থাকতেন তিনি। তাঁদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কষ্টটা কম নয়।

আগামী বছর, অর্থাৎ ২০১৯ সালে শেষ হচ্ছে ‘গেম অব থ্রোনস’ সিরিজ। ২০১১ সালে শুরু হওয়া দীর্ঘ এ সিরিজ ভক্তদের কাছে ছিল ‘নেশা’র মতো। সিরিজের ‘টাইরন লনেস্টার’ চরিত্রের অভিনেতা পিটারের কষ্টটা তাঁরাই খানিকটা বুঝতে পারবেন। এমি অ্যাওয়ার্ড নিতে গিয়ে সেই কষ্টের কথা কিছুটা বলেছেন পিটার। তাঁর কাছে, ‘এটা “গেম অব থ্রোনস” নামের একটা টিভি অনুষ্ঠান ছেড়ে আসা নয়, একটা পরিবারকে ছেড়ে আসা।’

এমির মঞ্চে পিটার ডিঙ্কলেজ
এমির মঞ্চে পিটার ডিঙ্কলেজ

পিটার বলেছেন, ‘বাড়ি থেকে অনেক দূরে শুটিং করতাম। বাড়ি নিউইয়র্কে, শুটিং করি ইউরোপে। শুটিং হতো আয়ারল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশে। সেখানে একটা বিরাট পরিবার গড়ে উঠেছিল। কাজের ফাঁকে সপ্তাহ শেষে বাড়ি যেতে পারতাম না। জায়গাটা ছেড়ে আসা মানে কেবল একটা টিভি অনুষ্ঠান ছেড়ে আসা না, একটা পরিবারকে ছেড়ে আসার মতো।’ সহশিল্পীদের সঙ্গে বন্ধুত্বটা কেমন ছিল, সেটা টের পাওয়া গিয়েছিল সেই রাতেই। পদক হাতে নিয়ে সহশিল্পী নিকোলাই কোস্টার ওয়াল্ডুকে ‘আরেক মায়ের পেটের ভাই’য়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি।

পিটারের চৌদ্দগোষ্ঠীতে কেউ বামন ছিল না। তবে মাত্র ৪ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার এ মানুষটিকে কখনোই ‘বিশেষ শিশু’ হিসেবে বিবেচনা করেননি তাঁর মা-বাবা। নানা ঘাত-প্রতিঘাত আর উপেক্ষা সহ্য করে পড়ালেখা করতে হয়েছে পিটারকে। তারপর অভিনেতা হিসেবে কাজ জুটানোটাও সহজ ছিল না। কাজ জুটেছিল বটে, কিন্তু খ্যাতি এনে দিয়েছে ‘গেম অব থ্রোনস’। সিরিজটি শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিবছরই শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রের অভিনেতা হিসেবে মনোনয়ন পান তিনি। পুরস্কার জিতেছিলেন ২০১১ সালে, ২০১৫ সালে এবং তৃতীয়বারের মতো পেলেন এ বছর। সামনের বছর আরও একবার পুরস্কার জেতার সুযোগ রইল তাঁর। এই যে আট বছর ধরে টানা সেরা অভিনেতার মনোনয়ন, তিনবার এমি অ্যাওয়ার্ড পাওয়া, আরও কত কত পুরস্কার, এসব সহজে আসেনি। কীভাবে এল? কী তাঁর সাফল্যের মূল সূত্র, যুক্তরাষ্ট্রের ভারমন্ট অঙ্গরাজ্যে নিজের কলেজ বেনিংটনে এক বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন।

‘গেম অব থ্রোনস’ সিরিজে টাইরন লনেস্টার চরিত্রে পিটার ডিঙ্কলেজ
‘গেম অব থ্রোনস’ সিরিজে টাইরন লনেস্টার চরিত্রে পিটার ডিঙ্কলেজ

পিটার ডিঙ্কলেজের বড় দুঃখ, বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছিল তাঁর। সেই ২৯ বছর বয়সে গিয়ে তিনি ঠিক করেছিলেন, অভিনেতা হিসেবে যে চাকরিই পান না কেন, সেটাই মন দিয়ে করবেন। চরিত্রটা যেমনই হোক, টাকা-পয়সা যা দেয়, দিক। প্রায় ৬ বছর ধরে ‘ডেটা প্রসেসিং’-এর একটা চাকরি করেছেন। সেটা ছেড়ে দেওয়ার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। কী করে খাবেন? পরে ‘ইমপারফেক্ট লাভ’ নামে একটা নাটকে অল্প বেতনের চাকরি নিয়েছিলেন তিনি।

২০১২ সালে নিজের কলেজের ছোট ভাইদের পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন, ‘জীবনের সঙ্গে মিলিত হও। সঠিক সময়ের অপেক্ষা কোরো না, কারণ সেই সময় কখনোই আসে না। সঠিক সময় ইতিমধ্যে চলে গেছে। তবে সেটা আবারও ফিরবে, যদি তুমি সক্রিয় হও, সেটাই নিয়ম। আমার মতো বসে বসে সময়ের জন্য অপেক্ষা কোরো না। বয়স ২৯ হওয়ার আগেই নিজের লক্ষ্য ঠিক করে নিয়ো। কেউ এসে জিজ্ঞেস করবে তুমি প্রস্তুত কি না, সেই অপেক্ষা কোরো না। বরং সবাই বলতে পারে যে তুমি প্রস্তুত নও। তুমি বরং দেখিয়ে দাও, করে ফেলো। বেকেট কী বলেছেন? কতবার চেষ্টা করেছ, কতবার ব্যর্থ হয়েছ, সেটা ব্যাপার না। আবার চেষ্টা করো, আবারও ব্যর্থ হও। ব্যর্থতা বরং ভালো। তবে মানুষের প্রতি সদয় থেকো, অন্ধজনে আলো দিয়ো।’ বিজনেস ইনসাইডার, উইন্টার ইজ কামিং, ইন্ডিওয়্যার, ম্যাক্সিম