'আমি ভীষণ এনজয় করছি'

অবন্তী সিঁথি
অবন্তী সিঁথি

২০১৬ সালের শেষ দিকে ইউটিউবে একটা গান আপলোড করেন অবন্তী সিঁথি। কাপ ও ফয়েল পেপারকে বাদ্যযন্ত্র বানিয়ে কণ্ঠে তুলে নেন কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’। সে সময় গানটি ‘ভাইরাল’ হয়ে যায়। ১৭ সেপ্টেম্বর নিজের ফেসবুক পেজে গানটি শেয়ার দেন কুমার বিশ্বজিৎ। এটার কারণ এত দিনে পাঠকেরা জেনে গেছেন। ভারতের জি বাংলার জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘সারেগামাপা’য় বাংলাদেশের মেয়ে অবন্তী সিঁথির অসাধারণ পরিবেশনায় মুগ্ধ হয়েছেন দুই বাংলার দর্শক। সেই মুগ্ধতার রেশ ছড়িয়ে দিয়েছেন নিজেদের ফেসবুক দেয়ালে। কুমার বিশ্বজিৎও সেই মুগ্ধতার কথাই জানালেন। বললেন, ‘এটা অনেকটা ওয়ানম্যান শোর মতো। একাই গান গাওয়া থেকে শুরু করে বাদ্যযন্ত্র বাজানো। এটা একটা বিরল প্রতিভা। সিঁথি গান করে, হুইসেল বাজায়, কাপ বাজায়। এ কারণেই দ্রুত সবার মনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। বেশ পরিচিতি পেয়েছে। গায়কি অনেক ভালো। আমার মনে হয় পরিচিতিটা কাজে লাগিয়ে পেশাদারিভাবে মৌলিক গান করতে হবে।’

মুঠোফোনে কুমার বিশ্বজিতের পরামর্শ জানাতেই কলকাতা থেকে অবন্তী তাঁকে ধন্যবাদ জানান। বললেন, ‘তাঁদের পরামর্শ নিয়েই তো এগিয়ে যাব।’ অবন্তী সিঁথি এখন আছেন কলকাতায়। অংশ নিয়েছেন জি বাংলায় গানের প্রতিযোগিতা সারেগামাপাতে। গত শনিবার ছিল তাঁর পরিবেশনা। একটা চমকে দেওয়া পরিবেশনার পর সেই ভিডিও ক্লিপ অনেকেই ফেসবুকে শেয়ার করছেন। জানিয়েছেন অবন্তীর প্রতি ভালোবাসা। তাঁর পরিবেশনা দেখে প্রতিযোগিতার মূল বিচারক শ্রীকান্ত আচার্য, শান্তনু মৈত্র, কৌশিকী চক্রবর্তী, মোনালী ঠাকুর ছাড়া অন্য বিচারক পণ্ডিত তন্ময় বোস, রূপঙ্কর বাগচী, জয় সরকার ও শুভমিতা দাঁড়িয়ে সম্মান জানান। সেটাকে শ্রদ্ধা হিসেবেই নিয়েছেন। জানতে চাইলাম, সবাই যে আপনার পরিবেশনার ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করছে, কেমন লাগছে? হেসে বললেন, ‘ব্যাপারটি ভীষণ এনজয় করছি। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। আর একটি কথা হলো, যে মানুষগুলো আমাকে অনেকটা অবহেলা করতেন, গান নিয়ে আলাপ করতে গেলে এড়িয়ে চলতেন, অনেক কিছুই বোঝাতেন, তাঁরা যখন আমার পরিবেশনার ভিডিও শেয়ার করছেন, সেটা তো অবশ্যই আনন্দের।’ সেই আনন্দ নিয়েই নতুন প্রস্তুতি নিচ্ছেন অবন্তী। কী সেটা?

গোল্ডেন গিটার

প্রথম পরিবেশনাতেই গোল্ডেন গিটার জিতেছেন অবন্তী। কেমন সেই অনুভূতি? ‘আমি আসলে বাক্‌রুদ্ধ হয়ে গেছি। এটা আমার জীবনের সেরা অর্জন। প্রথম দিনই বিচারকেরা আমাকে এত ভালোবাসা দেবেন, ভাবতেই পারিনি।’

ভাবতে পারুন বা না পারুন, আপাতত সিঁথির ধ্যানজ্ঞান গান। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কারণও এটাই। বললেন, সারেগামাপা প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার মূল কারণ শেখার সুযোগ পাওয়া! দেশে ২০১২ সালে আয়োজিত ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগিতায় সেরা ১০-এ জায়গা হয়েছিল সিঁথির। শিখেছেন সেখানেও। তারপর পড়াশোনা আর গান নিয়েই ছিলেন এত দিন। শেখা শেষ হয়নি? অবন্তী মুঠোফোনের ওপাশ থেকে বললেন, ‘শেখার কি শেষ আছে? গান নিয়ে শেখার তো আরও শেষ নেই।’ আর শেখার এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছেন সিঁথিসহ বাকি প্রতিযোগিরা।

জানালেন তাঁদের নিয়মিত রুটিন। সকালে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠতে হয়। নাশতা সেরে সবার সঙ্গে বসতে হয় গানের ক্লাসে। তারপর মেন্টরদের কাছে বসে যান সবাই। তাঁদের সঙ্গে গান নিয়েই চলে পুরো দিনের ‘সেশন’। মাঝে খাওয়াদাওয়া বাদ দিলে পুরোটা সময় গানেই ডুবে থাকেন তাঁরা।

আগামী পর্বে যা দেখবেন

এখন অবধি সারেগামাপাতে ৩২ জন প্রতিযোগী টিকে আছেন। যেখানে বাংলাদেশের আছেন ৫ জন। তাঁরা হলেন অবন্তী সিঁথি, মেজবা বাপ্পী, আতিয়া আনিসা, মন্টি সিনহা ও মাইনুল ইসলাম নোবেল। এরই মধ্যে প্রত্যেকেই তাঁদের পরিবেশনা নিয়ে হাজির হয়েছেন। সেগুলো সমাদৃতও হয়েছে। বিচারকেরা বেশ প্রশংসা করছেন। সিঁথি বলেন, পরের পরিবেশনার জন্য তিনটা গান রেডি আছে। আছে বিশেষ পরিবেশনা। এরই মধ্যে শুটিংও হয়েছে বলে জানালেন তিনি। সারেগামাপা প্রচারিত হয় জি বাংলায় বাংলাদেশ সময় প্রতি শনি ও রোববার রাত ১০টায়।

বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা দারুণ করছেন
রথিজিৎ ভট্টাচার্য
মিউজিক ডিরেক্টর ও প্রধান মেন্টর
এবারের সারেগামাপাতে আমি দ্বিতীয় ধাপের অডিশনে ছিলাম। আমি দেখেছি সব প্রতিযোগী ভালো করছেন। বাংলাদেশের প্রতিযোগীদের মধ্যে বড় গুণ তাঁরা গানটা খুব ভালোবেসে করেন। তাঁদের সঙ্গে কলকাতার প্রতিযোগীদের বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। তাই যে কেউ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেন। সবার মধ্যেই সেই সম্ভাবনা রয়েছে। আমি প্রত্যেকের জন্য সেই শুভকামনা জানাই।

সিঁথির মৌলিক গান
তোমার জন্য
কথা: সুহৃদ সুফিয়ান
সুর ও সংগীতায়োজন: সজীব দাস

জলকণা
কথা
: ওয়ালিদ আহমেদ
সুর ও সংগীতায়োজন: সজীব দাস
শুভকামনা
কথা: সেউতি শতাব্দী
সুর: অবন্তী সিঁথি
সাউন্ড ডিজাইন: মীর মাসুম
সব কটি গান অবন্তী সিঁথির ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত।