টিভি নাটকের মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ানো জরুরি

‘গানওয়ালা’ অনুষ্ঠানে গান শুনিয়েছেন অটমনাল মুন
‘গানওয়ালা’ অনুষ্ঠানে গান শুনিয়েছেন অটমনাল মুন

১৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে চ্যানেল আইয়ে সরাসরি প্রচারিত হলো তাদের নিয়মিত গানের অনুষ্ঠান ‘সকাল কাটুক গানে গানে’। এ দিনের অনুষ্ঠানে শিল্পী ছিলেন তানভীর আলম সজীব।

শিল্পী সজীব সংগীতচর্চার পাশাপাশি একটি চ্যানেলে সংগীতানুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেন। সে অনুষ্ঠানটি যথেষ্ট জনপ্রিয় হলেও তাঁর নিজের বক্তব্য—তিনি উপস্থাপনার চেয়ে গান পরিবেশনেই বেশি স্বচ্ছন্দ। এ অনুষ্ঠানে তিনি একটানা ১ ঘণ্টারও অধিক গান পরিবেশন করেন। অধিকাংশই করেন রাগাশ্রয়ী গান। তাঁর উল্লেখযোগ্য পরিবেশনার মধ্যে ছিল ‘এ কী অসীম পিয়াসা’, ‘যেন ডাকে রাতের আকাশ’, ‘হে গোবিন্দ রাখো চরণে’ ইত্যাদি। তাঁর সুরেলা কণ্ঠ ও আন্তরিক উপস্থাপনা পুরো অনুষ্ঠানে যেন সুরের আবহ সৃষ্টি করেছিল। তাঁর বাণী উচ্চারণের বিশেষত্ব ছিল সুরের সঙ্গে জড়ানো। বাণীর এ অস্পষ্ট উচ্চারণ শিল্পীর কাছে বিশেষ শৈলী মনে হলেও গানের বাণী মনে হয়েছে অস্পষ্ট ও ধোঁয়াশাপূর্ণ।

১৬ সেপ্টেম্বর রাত ১১টায় নাগরিক টিভিতে সরাসরি প্রচারিত হলো সংগীতানুষ্ঠান ‘গানওয়ালা’। এখানে উপস্থাপক ছিলেন তানভীর আলম সজীব, আর শিল্পী ছিলেন অটমনাল মুন। উপস্থাপক ও শিল্পী দুজন মিলেই মাতিয়ে রেখেছিলেন প্রায় ২ ঘণ্টার এ অনুষ্ঠান।

শিল্পী অটমনাল মুনকে সচরাচর দেখা যায় না টিভিতে। এ অনুষ্ঠানে তাঁর উল্লেখযোগ্য পরিবেশনার মধ্যে ছিল ‘তুমি আমার মন খারাপ রে’, ‘আজ ইচ্ছে করে’, ‘সবখানে বাবা সবখানে বাবা’ ইত্যাদি। তাঁর গানের নির্বাচন দেখেই বোঝা গেছে তিনি একটু ভিন্নধারার গান পছন্দ করেন। যেমন তাঁর অধিকাংশ গানের বাণীতেই ছিল গল্পের ছোঁয়া। তাঁর কণ্ঠ সুরেলা এবং একটু হালকা প্রকৃতির। আর তিনি অধিকাংশ গানই করেছেন উঁচু পর্দায়, যে কারণে কণ্ঠের গভীরতা ও মাধুর্য যেন কিছুটা খর্ব হয়েছে।

১৩ সেপ্টেম্বর রাত ১১টায় মাছরাঙা টিভিতে কৌশিক শংকর দাশের উপস্থাপনায় সরাসরি প্রচারিত হলো সাপ্তাহিক সংগীতানুষ্ঠান ‘তোমায় গান শোনাব’। এ দিন শিল্পী ছিলেন ফকির শাহাবুদ্দিন। অনুষ্ঠানটি পরিবেশিত হয়েছে বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম স্মরণে। যে কারণে এ দিন শিল্পী শাহাবুদ্দিনের প্রায় সব গানই ছিল শাহ আবদুল করিম রচিত ও সুরারোপিত। দর্শকদের অনেক অনুরোধই তাঁকে উপেক্ষা করতে হয়েছে এই বিশেষ উদ্দেশ্যের কারণে। তাঁর উল্লেখযোগ্য পরিবেশনার মধ্যে ছিল ‘আগের বাহাদুরি তোমার গেল কই’, ‘দিবানিশি ভাবি যারে তারে যদি পাই না’, ‘আমি কুলহারা কলঙ্কিনী’ ইত্যাদি।

ভালোবাসায় বিসর্গ নাটকে অভিনয় করেছেন মীর সাব্বির ও সুমাইয়া শিমু
ভালোবাসায় বিসর্গ নাটকে অভিনয় করেছেন মীর সাব্বির ও সুমাইয়া শিমু

শিল্পী শাহাবুদ্দিনের পরিবেশনার ধরনটি বেশ সুস্পষ্ট। তাঁর কণ্ঠ, সুর ও বাণী যেন তালের সঙ্গে খেলা করে। তালের সঙ্গে সংগত করে তাঁর শরীরও। সব মিলিয়ে পরিবেশনা ও উপস্থাপনার যে আবহটি তিনি সৃষ্টি করেন, তা একান্তই তাঁর নিজস্ব এবং দর্শকের জন্য নিঃসন্দেহে তা উপভোগ্য। তাঁর কণ্ঠ যে খুব মিষ্টি তাও নয়, বরং কণ্ঠ কিছুটা ভাঙা ও বসা বসাই মনে হয়। তবু কোথায় যেন একটা মাধুর্য খুঁজে পাওয়া যায়, যা দর্শক-শ্রোতাদের ভীষণভাবে টানে। সার্বিক বিচারে বলা যায়, সরাসরি প্রচারিত তিনটি গানের অনুষ্ঠানই ছিল বেশ উপভোগ্য ও বৈচিত্র্যময়।

এবারে সৌন্দর্যচর্চাবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘সৌন্দর্য কথা’। ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় নোভার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হলো বাংলাভিশনে। এ দিনের অতিথি ছিলেন অভিনেত্রী সীমান্ত। ঈদের পরে এ দিনই ছিল প্রথম পর্ব, যে কারণে শুরুতেই আলোচনা হলো স্বাস্থ্য নিয়ে, খাদ্যাভ্যাস নিয়ে। এরপর দুজনের আলোচনায় উঠে এল প্রাত্যহিক ফ্যাশন ও সৌন্দর্যচর্চা। দুজনই দর্শকের উদ্দেশ্যে একটি বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, তা হলো সুস্থতা। সুস্থতাই সৌন্দর্যের ভিত্তি। কাজেই প্রথমে সুস্থ থাকতে হবে তারপর সৌন্দর্যচর্চা করতে হবে। এ দিন বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়েছে চুলের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য নিয়ে। পাশাপাশি এ সম্পর্কে একজন রূপবিশারদের মতামত এবং একটি হেয়ারপ্যাকও উপস্থাপন করা হয়েছে অনুষ্ঠানে। সব মিলিয়ে অনুষ্ঠানটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণই বলা যায়। তবে, যে কথা আমরা আগেও বলেছি, ‘সৌন্দর্য কথা’য় কেবল মেয়েদের সৌন্দর্য নিয়েই আলোচনা করা হয়, মেয়ে তারকাদের ডাকা হয়, এটি আমাদের কাছে মনে হয় অনুষ্ঠানের অপূর্ণতা। সৌন্দর্য কথায় ছেলেদের সৌন্দর্যচর্চা নিয়েও কথা থাকা উচিত এবং ছেলেদেরও অতিথি হিসেবে ডাকা উচিত।

১৩ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা ১০ মিনিটে ইফতেখার ইফতির পরিচালনায় আরটিভিতে প্রচারিত হলো সাপ্তাহিক নাটক ভালোবাসায় বিসর্গ। প্রযোজনা সুব্রত পাল এবং অভিনয় সুমাইয়া শিমু, মীর সাব্বির প্রমুখ। নাটকের গল্পটি হলো, সাব্বির ব্যবসার ব্যস্ততা ও জটিলতার কারণে অবজ্ঞা ও অবহেলা করে শিমুকে। একপর্যায়ে শিমু ক্ষোভে ও অভিমানে বড় ভাইয়ের বাসায় চলে যায়। এরপর সাব্বিরের কারখানা আগুনে পুড়ে গেলে শিমু আবার ফিরে আসে। এবার শুরু হয় দারিদ্র্য ও হতাশার সঙ্গে সংগ্রাম। সাব্বির ব্যর্থ হলেও এবার শিমু তার ব্যাংকার বন্ধুর সহায়তায় লোন নিয়ে সফল ব্যবসায়ী হয়ে ওঠে। এ পরাজয় মেনে নিতে না পেরে সাব্বির অভিমানে চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, আবার পরক্ষণেই বোন ও বন্ধুর অনুরোধে শিমুর পাশে ফিরে আসে।

নাটকটির নির্মাণ পরিচ্ছন্ন কিন্তু গল্পটি দুর্বল ও সেকেলে মনে হয়েছে। চিত্রনাট্য অপরিপক্বতার কারণে নাটকে প্রদর্শিত ঘটনাগুলো মনে হয়েছে আরোপিত। আর সংলাপ কখনো কখনো মনে হয়েছে বক্তৃতার মতো। সব মিলিয়ে ওই একই দশা, টিভি নাটক কিছুতেই যেন মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না।