ইদানীং কাজ করা কঠিন হয়ে গেছে: রওনক হাসান
>রওনক হাসান টিভির জন্য প্রথম নাটক লিখেছেন ২০০৪ সালে। পরের বছর তিনি শুরু করেন অভিনয়। ঠিক পরের বছর, ২০০৬ সালে নাম লেখান পরিচালকের খাতায়। কিছু খণ্ড নাটক ও টেলিফিল্ম পরিচালনা করেছেন তিনি। তবে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের কর্মী রওনকের জনপ্রিয়তা তৈরি হয় অভিনেতা হিসেবে। সম্প্রতি ধারাবাহিক নাটক পরিচালনা শুরু করেছেন। নাটকের নাম ‘বিবাহ হবে’। কমেডি ধারাবাহিক। শখ থেকে পেশাদার পরিচালক হয়ে ওঠার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করলেন এই অভিনেতা।
খণ্ড নাটক ও টেলিছবি সহজ, নাকি ধারাবাহিক?
ধারাবাহিকে অনেক লোড নিতে হয়। সততার সঙ্গে যদি কাজ করতে হয়, তাহলে অনেক বেশি মনোযোগ দিতে হয়। টেস্ট ম্যাচের মতো ধৈর্য নিয়ে করতে হয়, চাপ টি-টোয়েন্টির মতো।
আপনার এই ধারাবাহিকে জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম অভিনয় করছেন। তাঁকে নিয়ে পরিচালনা করতে কেমন লাগছে?
অসাধারণ অভিজ্ঞতা। সহশিল্পী হিসেবে আমরা বহু নাটকে অভিনয় করেছি এবং প্রায় প্রতিটি নাটক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। শেষ করলাম ‘দাদার দেশের জামাই’ এবং ‘দাদার দেশের ডাক্তার’ নাটক দুটি। আমরা একে অন্যকে সহশিল্পী হিসেবে পেলে খুব খুশি হই, কারণ আমাদের টিউনিংটা চমৎকার। প্রথমবার তাঁর পরিচালক হিসেবে দেখলাম, এখানে অভিজ্ঞতাও অন্য রকম। দেখা যাচ্ছে, মোশাররফ ভাইকে নিয়ে সিকোয়েন্সের বাইরে কিছু একটা ভেবেছি, তাঁকে সেটা বললেই তিনি বলবেন, ‘আমিও এই কথাই ভাবছিলাম রে। তোকে বলব ভাবছিলাম।’ আবার তিনি এসে কখনো কখনো বলেন, ‘রওনক, এ রকম করলে কেমন হয়?’ দেখা যায়, আমি ওভাবেই ভাবছিলাম। তিনি অবিশ্বাস্য আনন্দ নিয়ে কাজ করছেন আমার নাটকে। রাত ১২টা বেজে গেলেও মোশাররফ করিম ভাই বলছেন, ‘আরও কিছু দৃশ্য করে লোডটা কমিয়ে রাখবি নাকি?’
ফেসবুকে আপনাদের ছবি দেখে মনে হচ্ছে সেটে খুব আনন্দ করছেন সবাই?
সাত দিন গেছে, কাউকে কপাল কুঁচকাতে দেখিনি, বিরক্ত হতে দেখিনি। সবাই খুব আনন্দ করছি, গানবাজনা করছি, মজা করছি, রাতে নিজ হাতে বারবিকিউ করছি। অধিকাংশ নাটকের সেটে সবাইকে কপাল কুঁচকে রাখতে দেখেছি। আমরা পরিশ্রম বেশি করে, খরচ দুই টাকা বেশি করি, যাতে সবার মুখে হাসি থাকে। এমনও হয়েছে, আমি বকাবকি করছি, কিন্তু কেউ কিছু মনে করছে না।
ধারাবাহিক নির্মাণের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
গল্পটা নিয়ে ভেবেছি এক বছর। শুটিংয়ের আগে কীভাবে করব, কেন করব, এসব নিয়ে তিন মাস পরিকল্পনা করেছি।
অভিনেতা রওনক হাসানকে দর্শক হারাতে যাচ্ছে?
অভিনয় ছাড়া আমি বাঁচব না। পরিচালনায় আসার একটা উদ্দেশ্য আছে। পেশাদার অভিনেতা হিসেবে আমি সব সময়ই চুজি ছিলাম। কখনোই স্রোতে গা ভাসাইনি। সে জন্য আমার অনেক কাজ লোকে মনে রেখেছে। ‘নোয়াশাল’ ধারাবাহিক নাটকের কথা পাঁচ বছর ধরে মানুষের মুখে মুখে। এ রকম অনেক চরিত্র পেয়েছি পরে, কিন্তু করিনি। আজেবাজে নাটকে আমি অভিনয় করতে চাই না। মোট কথা, অতৃপ্তি ও ক্লান্তি থেকে আমি পরিচালনায় এসেছি। ক্রমাগত কাজ করে যাওয়ার মাঝে একটু বিরতি নিতে চেয়েছি। মাসে ২৫ দিন নয়, ১০ থেকে ১২ দিন অভিনয় করব, যার সঙ্গে কাজ করতে আরাম লাগে, এ রকম পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করব। চিনি না, জানি না, এমন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে হয়। সেটে গিয়ে দেখি সব ব্লান্ডার। ইদানীং যা অবস্থা হয়েছে, তাতে কাজ করা কঠিন হয়ে গেছে। আগে ভালো ভালো স্ক্রিপ্ট পেয়েছি। কোনটা ফেলে কোনটা করব, সেটা ছিল দেখার ব্যাপার। আর এখন দেখতে হয় কোন স্ক্রিপ্ট কম খারাপ। এত দিন অভিনয় করার পর অনিশ্চয়তা, বিশৃঙ্খলাপূর্ণ কাজ করতে ভালো লাগে না।
এখন আপনি পরিচালনা করছেন। এত দিন যাঁরা আপনাকে পরিচালনা করেছেন, তাঁদের ত্রুটিগুলো চোখে পড়ছে?
আমি যখন পেশাদার অভিনেতা, তখন পরিচালক যা বলবে, আমি তা-ই করতে বাধ্য। অনেক বয়সী পরিচালকের কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় বলেছি, ভাই, এটা কেন এভাবে করব, যুক্তিটা কী? তিনি বলেছেন, ‘আমি চাই সে জন্য করবেন।’ আমি করেছি। আমি অ্যাক্টর, আমি সব পারি। কিন্তু যখন আমি যুক্তিটা জেনে অভিনয় করি, তখন বিশ্বাস করে অভিনয় করি। ফলে মানুষও সেই অভিনয়টা বিশ্বাস করে। যখন পরিচালকের নির্দেশ মেনে না জেনে কাজ করি, সেটা লোকের চোখে ধরা পড়ে। আমি তাই বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে চাই। যদি আপত্তিকর, অশ্লীল, সমাজের জন্য অস্বস্তিকর না হলে আমি কাজটা করব।
গুরু মানবেন কোন পরিচালকদের?
অভিনেতা হিসেবে শিহাব শাহীনের সঙ্গে কাজ করে আনন্দ পাই। এ ছাড়া সুমন আনোয়ার, গিয়াসউদ্দিন সেলিম, অনিমেষ আইচ, সালাহউদ্দিন লাভলু, অভিনেতা মাহফুজ আহমেদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে।
সিনেমা করবেন?
সম্প্রতি ২০ মিনিটের একটা ছোট ছবির কাজ শুরু করেছি। আরও এক দিনের শুটিং বাকি আছে। এইটা বানানো হলে বুঝব যে আমি আদৌ পারব কি না।
এখন যাঁরা নতুন অভিনয়শিল্পী, তাঁদের কাজ কেমন লাগছে?
ইন্ডাস্ট্রি এত বড় হয়ে গেছে, অনেককে চিনিই না। দেখা যাবে অনেক বড় সেলিব্রিটি, কিন্তু আমি চিনি না। একসময় সবাই সবাইকে চিনতাম। একটা বিষয় খেয়াল করি, এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অনেক মেধাবী। তবে পেশাদার শিল্পী হতে হলে যা করতে হয়, সেটা করার সময় তাঁদের নেই। নতুন একটা কাজ করতে হলে যেভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়, সেটা নিয়ে ভাবতে হয়, সেই সময় দিতে চায় না তাঁরা। মনে করে, সেটে গিয়ে কিছু একটা করে দিলেই হয়ে যাবে। প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সময় দিতে হবে। দেশে ভালো পরিচালকের সংখ্যা এমনিতেই কম। ভালো ডিরেক্টরের সঙ্গে কাজ না করলে, সেই কাজ ফলপ্রসূ হবে না।