মুক্তি পাওয়া ছবির সংখ্যা কমেছে

এ বছর মুক্তি পাওয়া আলোচিত দুই ছবি পোড়ামন ২ ও স্বপ্নজাল–এর পোস্টার
এ বছর মুক্তি পাওয়া আলোচিত দুই ছবি পোড়ামন ২ ও স্বপ্নজাল–এর পোস্টার

গত ৯ মাসে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ২৬টি দেশি ছবি। আগামী তিন মাসে নতুন আরও ১০টি ছবি মুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। এমনটা হলে ২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা দাঁড়াবে ৩৬। যেখানে ২০১৫ সালে ৬৭টি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। ২০১৬-১৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল ৫৬টি ছবি।

অনেক দিন ধরেই ঢাকার চলচ্চিত্রের অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। প্রেক্ষাগৃহ কমার পাশাপাশি কমছে নতুন সিনেমা মুক্তির সংখ্যাও। গত তিন বছরে সিনেমার সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমেছে। ২০১৫ সালে মোট ৬৭টি সিনেমা মুক্তি পায়। এরপর ২০১৬-১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার সংখ্যা ছিল ৫৬। চলতি বছরে ৯ মাসে দেশীয় প্রযোজনায় নির্মিত মোট ২৬টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি থেকে জানা গেছে, আগামী তিন মাসে আর মাত্র ১০টি নতুন সিনেমা মুক্তি পেতে পারে। তাহলে ২০১৮ সালে মোট মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার সংখ্যা দাঁড়াবে ৩৬।

চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলা চলচ্চিত্রকে ঘিরে নানা সমস্যার কারণে কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে সিনেমা মুক্তির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ভালো কাহিনিকার না থাকা, গুণী নির্মাতার অভাব, বড় বড় প্রযোজকের লোকসান গুনতে গুনতে চলচ্চিত্র থেকে সরে পড়াসহ চলচ্চিত্রের নানা জটিলতাকে দায়ী করলেন প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। তিনি বলেন, ‘পাইরেসির কারণে লোকসান গুনতে গুনতে বড় প্রযোজকেরা আগেই সরে পড়েছেন। এখন যাঁরা বিচ্ছিন্নভাবে সিনেমা বানাচ্ছেন, বাজেট বাঁচাতে স্বল্প পরিসরে অনেক ক্ষেত্রে বেনামি পরিচালকদের দিয়ে মানহীন ছবি নির্মাণ করছেন। এসব দর্শক দেখছে না। তা ছাড়া নতুন শিল্পী তৈরি হচ্ছে না। পাশাপাশি আমাদের চলচ্চিত্রে একটি গোষ্ঠী নানা ধরনের জটিলতা তৈরি করে রেখেছে। তারা সহজভাবে নতুন ছবি তৈরির পথও বন্ধ করে রেখেছে।’ এই প্রযোজকের মতে, ‘এভাবে আর দু-এক বছর চলতে থাকলে সিনেমার অভাবে বাংলাদেশে সব প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে যাবে। দেশের জন্যও এটি একটি অশনিসংকেত!’

সিনেমার এই অবস্থার জন্য চলচ্চিত্রের একটি গোষ্ঠীকে দায়ী করলেন চিত্রনায়ক শাকিব খান। তিনি বলেন, ‘এখন প্রযোজক সিনেমা বানাতে ভয় পায়। কারণ চলচ্চিত্রের একটি গোষ্ঠী উন্নয়নের কথা বলে পুরো চলচ্চিত্রাঙ্গনে অস্থির পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে। তারা চলচ্চিত্রের উন্নয়নের কথা বলে যখন-তখন সিনেমার শুটিং বন্ধ করা, প্রিভিউ কমিটিতে ছবি আটকানোসহ নানা ধরনের জটিলতা তৈরি করে চলেছে। একজন প্রযোজক বড় বাজেটের সিনেমা নির্মাণ করতে গিয়ে পদে পদে আর বিপদে পড়তে চান না। এ জন্য কমে যাচ্ছে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও মুক্তি।’ বর্তমান সিনেমার এই হাল নিয়ে শাকিব খানের দুশ্চিন্তা-এভাবে চলতে থাকলে আগামী বছর মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার সংখ্যা ২০-এর ঘরে নামতে পারে।

এদিকে লোকসান করে করে এখনো বছরে এক-দুটি ছবি নির্মাণ করে যাচ্ছে চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হার্টবিট প্রোডাকশন। সিনেমা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তাপসী ফারুক প্রেক্ষাগৃহের সংকট, ছবির পাইরেসি, ভালো কাহিনিকার ও নির্মাতার অভাব আর শিল্পীদের অপেশাদার আচরণকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘এখনকার কাহিনিকারেরা ভারতের বিভিন্ন ভাষার চার-পাঁচটা ছবি থেকে গল্প নিয়ে একটি গল্প দাঁড় করতে গিয়ে জগাখিচুড়ি বানিয়ে ফেলেন। নতুন শিল্পী আসছেন না। যাঁরা আছেন তাঁদের আচরণ অপেশাদার। ছবিতে চুক্তির আগে এক চেহারা, চুক্তির পর শুটিং শুরু হলে আরেক চেহারা! আর পাইরেসির ভয় তো আছেই। সব মিলিয়ে ছবি নির্মাণ করতে এখন ভয় পান প্রযোজকেরা।’ নিজের প্রতিষ্ঠানের অবস্থার কথা বলতে গিয়ে এই প্রযোজক বলেন, ‘এ বছর দুটি ছবি নির্মাণ করে লোকসান গুনতে হয়েছে আমাদের।’