এটি হবে বাংলাদেশকে দেওয়া একটি উপহার

কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে বসছে নাচের আন্তর্জাতিক এক আসর। ওয়ার্ল্ড ড্যান্স অ্যালায়েন্স এশিয়া প্যাসিফিকের বার্ষিক সাধারণ সভা উপলক্ষে এশিয়া অঞ্চলের ১৫টি দেশ থেকে এ আসরে যোগ দিতে আসছেন দুই শতাধিক নৃত্যশিল্পী, গবেষক ও কোরিওগ্রাফার। ২০১৯ সালের ২২ থেকে ২৫ নভেম্বর সমুদ্রসৈকত এবং এর সংলগ্ন স্থানে হবে সভা। বাংলাদেশে এ আয়োজনটি করছে ওয়ার্ল্ড ড্যান্স অ্যালায়েন্স এশিয়া প্যাসিফিকের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার নৃত্যযোগ। এ আয়োজনের নানা দিক নিয়ে কথা বললেন নৃত্যযোগের সভাপতি লুবনা মারিয়াম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাসেল মাহ্‌মুদ

ওয়ার্ল্ড ড্যান্স অ্যালায়েন্স কারা? বাংলাদেশে কী করতে যাচ্ছে তারা?

লুবনা মারিয়াম, ছবি: খালেদ সরকার
লুবনা মারিয়াম, ছবি: খালেদ সরকার

আন্তর্জাতিক একটা নাচের সংগঠন। ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে আলাদাভাবে কাজ করে তারা। তবে এশিয়া প্যাসিফিকের দলটি সব থেকে সক্রিয়। নৃত্য নিয়ে এরা চার ধরনের কাজ করে। সৃজন ও উপস্থাপন, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, গবেষণাপত্র প্রস্তুত ও উন্নয়ন সহযোগিতা। নভেম্বরে কক্সবাজারে হবে এশিয়া প্যাসিফিকের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)।

সে সময় কী কী হবে?
বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) মানে শুধু সভা, তা নয়। শিল্পী ও পণ্ডিতেরা সারা দিন নাচ নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা বিষয়ে বক্তৃতা এবং কর্মশালা করবেন কক্সবাজারের ইনানিসংলগ্ন পেঁচারদ্বীপ বিচের মারমেইড রিসোর্টে। সন্ধ্যার পর লাবনী বিচে হবে নৃত্য পরিবেশনা। ৪ দিনে ৪০টির মতো পরিবেশনা থাকবে। আসছে এশিয়ার ১৫টি দেশের ড্যান্স কোম্পানি, ডব্লিউডিএ-এর কর্মকর্তারা, যাঁদের বেশির ভাগই নিজ নিজ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্য বিভাগের প্রধান।

আয়োজনটি কক্সবাজারের সৈকতে কেন?
এজিএম হয় ঘরের ভেতরে। অর্থাৎ হোটেল বা অডিটোরিয়াম বা শিল্পকলার মতো জায়গায়। আমরা ব্যতিক্রম করলাম। এটা হবে তাঁদের জন্য একটি দারুণ অভিজ্ঞতা। এই সুযোগে আমরাও দেশটাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে পারব। একটি আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের এজিএমে সাংস্কৃতিক পর্যটনের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। ৭৫ মাইল দীর্ঘ সৈকত, সার্ফিং, প্যারাসেলিং, ফানুস উৎসব, রাখাইন নৃত্য, বিশ্বের সুন্দরতম কোরাল দ্বীপ, ঘুড়ি উৎসব, বার্মিজ-বুদ্ধ-বাঙালি সংস্কৃতির সহাবস্থান বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ভাবমূর্তিকে বিশ্বের সামনে উজ্জ্বল করবে।

বাংলাদেশের নৃত্যশিল্পীরা কীভাবে যুক্ত হবেন?
আমাদের প্রত্যাশা দেশের শিল্পী ও নৃত্যগবেষকেরা অংশ নিন। কিন্তু ধারণাপত্র এবং পরিবেশনাগুলোকে আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। একরকম অলিম্পিকের মতো। oceandancefestival.com ওয়েবসাইট থেকে ফরম ডাউনলোড করে ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পূরণ করে পাঠাতে হবে। সঙ্গে উপস্থাপনের জন্য নৃত্যবিষয়ক ধারণাপত্র এবং পরিবেশনার ডিভিডি। ডব্লিউডিএ-এর বিচারকদের কাছে গৃহীত হলেই সেটি উপস্থাপন করা যাবে।

অভিজ্ঞতা না থাকলে প্রকল্প বাদ পড়ার আশঙ্কা আছে না?
বাংলাদেশ যেহেতু আয়োজক, আমরা চাই দেশের প্রস্তাবগুলো নির্বাচিত হোক। আমরা সহযোগিতা করব। আগামী মাস থেকে কর্মশালা করানো হবে। তাইওয়ান ও ভারত থেকে বিশেষজ্ঞরা আসবেন। তাঁরাই দেখিয়ে দেবেন, কীভাবে ধারণাপত্র এবং পরিবেশনা প্রস্তুত করে পাঠালে সেগুলোর মান ঠিক থাকবে। আমরা শাস্ত্রীয় এবং লোকনৃত্যে ভালো করছি, কিন্তু সমসাময়িকে পিছিয়ে আছি। ডব্লিউডিএ সমসাময়িক নাচকে তুলে ধরতে চায়। তারা বিশ্বাস করে, নাচ এক জায়গায় স্থিত থাকে না, প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু পরিবর্তন আসে।

যাঁরা বাদ পড়বেন তাঁদের জন্য কোনো ব্যবস্থা করা যেত না?

মূল আয়োজন সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত চলবে ‘ওশান ড্যান্স ফেস্টিভ্যাল’। এটা সবার জন্য উন্মুক্ত। এতে কারা পরিবেশন করবে সেটা কেবল নৃত্যযোগ নির্বাচন করবে। এই এজিএম সফল হলে প্রতি বছর ‘ওশান ড্যান্স ফেস্টিভ্যাল’ করব। ঠিক খাজুরাহো নৃত্য উৎসবের মতো। এটি হবে নৃত্যযোগের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে দেওয়া একটি উপহার, যেমন বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসব।

শিল্পীদের খরচ দেবে কে?

সবাই নিজের টাকায় আসবেন। বিদেশিদের জন্য ৩০০ ডলার এবং দেশের শিল্পী ও শিক্ষার্থীদের জন্য ১৫০ ডলার নিবন্ধন ফি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ১০০ জন আগ্রহী শিল্পীকে এই অর্থ দেবে। নৃত্যযোগের একটি কমিটি তাঁদের বাছাই করবে। যাঁরা অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে সেমিনার ও কর্মশালায় যুক্ত থাকবেন, তাঁদেরই আগ্রহী ধরে নেওয়া হবে।

এই আয়োজনের মাধ্যমে দেশের নৃত্যচর্চায় কী যুক্ত হবে?

নাচটা শুধু শরীরের ব্যাপার নয়, মস্তিষ্কেরও। আকরাম খান বিশ্বের সব থেকে নন্দিত নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার। তিনি কিন্তু সেরা নৃত্যশিল্পী নন, বরং সব থেকে মেধাবী নৃত্যশিল্পী। মস্তিষ্ক খাটাতে পারলে আমরাও আন্তর্জাতিক মঞ্চের উপযোগী হয়ে উঠব। এ আয়োজনের মাধ্যমে সারা বিশ্ব কী দেখতে চাইছে, জানতে চাইছে, চর্চা করছে সেসবের সঙ্গে আমরা একাত্ম হতে ও শিখতে পারব।

বিদেশি অতিথিদের জন্য বিশেষ কী কী ব্যবস্থা করছেন?

কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলগুলোতে ছাড়ের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের সহায়তা করছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, পর্যটন মন্ত্রণালয়, পর্যটনবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ফারুক খান সাহেব, কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, টুরিজম বোর্ড, বিটিভি এবং স্থানীয় প্রশাসন। অনুষ্ঠানের যাবতীয় আপডেট পেতে একটা মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। উৎসবের জন্য রিকশা পেইন্টিং করা ৪০টা চাঁদের গাড়ি সারা দিন সেখানে ফ্রি সেবা দেবে।