ভক্ত যখন জীবনসঙ্গী

>তারকাদের কত রঙেরই না ভক্ত থাকে। কেউ উন্মাদ ভক্ত আবার কেউ বা রসিক ভক্ত। তারকারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে উদ্ভাসিত-উজ্জ্বল নক্ষত্র, তা ভক্তরা আছে বলেই। সাধারণত তারকারা ব্যক্তিজীবনে ভক্তদের অনেকটা এড়িয়ে চলেন। সেই সমীকরণকে অনেক তারকা আবার ভেঙে ফেলেন। জীবনসঙ্গী হিসেবে ভক্তকেই বেছে নেন অনেকে। আজ পড়ুন এমনই কয়েকজন তারকার কথা।

কিশোর বয়সের প্রেম: টম ক্রুজ

স্কুল পড়ার সময়ে কেটি হোমস সুদর্শন নায়ক টম ক্রুজের ভিউকার্ড বইয়ের ভাঁজে লুকিয়ে রাখতেন। টমকে নাকি ছোটবেলার নায়ক হিসেবেই ভেবে ভেবে অনেক স্বপ্ন বুনতেন কেটি। সুদর্শন টমের কোটি কোটি ভক্তদের একজন ছিলেন কেটি। কলেজ শেষে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন পড়ার সুযোগ পান তখনো টমের ঘোরে বিভোর ছিলেন তিনি। পড়াশোনা বাদ দিয়ে মডেলিং দুনিয়াতে পা রাখলে কেটি টমকে কাছে পাওয়ার সুযোগ পান। ২০০৫ সালে ভক্ত হিসেবে টমের সঙ্গে পরিচিত হন কেটি, যদিও তখন কেটি নিজেই হলিউডে বেশ পরিচিত মুখ। এপ্রিল মাসে পরিচয়ের পরেই জুন মাসেই ছিল তাঁদের প্রণয়।

ব্যবসায়ী ভক্ত অ্যানের জীবনসঙ্গী

মার্কিন নাগরিক অ্যাডাম শুলম্যান বেশ ব্যস্ত একজন ব্যবসায়ী। সারাক্ষণ ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও তরুণ অভিনয়শিল্পী অ্যান হ্যাথাওয়ের দারুণ ভক্ত ছিলেন অ্যাডাম। অ্যাডামের অ্যানের প্রতি আগ্রহ দেখে এক বন্ধু অ্যানের সঙ্গে অ্যাডামের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই বন্ধুর অছিলায় অ্যান আর অ্যাডামের মধ্যে দারুণ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। বন্ধুত্ব কখন যে প্রেমে রূপ নেয় তা কেউই টের পায়নি। অ্যাডাম অ্যানেকে বিয়ে প্রস্তাব দিয়ে বসলে অ্যানে কি আর না করেন!

অ্যানে ও অ্যাডামের বিয়ে হয় ২০১২ সালে। দারুণ আছেন অ্যান-অ্যাডাম দম্পতি। অ্যাডামের ব্যবসায়িক যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন স্ত্রীর সিনেমার প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানে দেখা যায় তাঁকে। অ্যানের দারুণ ভক্ত হিসেবে সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন অ্যাডাম।

ভক্ত নিকোলাসের জীবনসঙ্গী

তারকাখ্যাতিকে একপাশে রেখে অভিনয়শিল্পী নিকোলাস কেজ লুকিয়ে লুকিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। স্বাধীন জীবন উপভোগ করার নেশা কার না দারুণ লাগে। সেই নিকোলাস লুকিয়ে লুকিয়ে লস অ্যাঞ্জেলস শহরের এক কোরিয়ান রেস্তোরাঁতে খেতে যেতেন। সেই রেস্তোরাঁতে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় অ্যালিস কিমের। কিম তারকা নিকোলাসের ভক্ত ছিলেন বলেই সত্যিকারের নিকোলাসের সঙ্গে সময় কাটাতে শুরু করেন। একসময় নিকোলাস কিমের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। অনেক দিনের পরিচয়কে নিকোলাস ২০০৪ সালে প্রণয়ে পরিণত করেন।

জুলিয়ার ভক্তই এখন বড় সমালোচক

অভিনেত্রী জুলিয়া রবার্টসের জীবনসঙ্গী একসময় ছিলেন তাঁর বড় ভক্ত। চিত্রগ্রাহক ড্যানি মোডের সঙ্গে জুলিয়ার প্রথম পরিচয় হয় দ্য মেক্সিকান নামের একটি সিনেমার শুটিং সেটে। প্রথম দেখাতেই জুলিয়ার ভক্ত হয়ে যান ড্যানি। জুলিয়ার অভিনয় দক্ষতা আর তারকা ঝলকে মুগ্ধ হয়ে যান। সেই ড্যানি ২০০২ সালে বিয়ে করেন জুলিয়াকে। বিয়ের পরে নাকি ড্যানি জুলিয়ার সবচেয়ে বড় সমালোচক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এমনকি সিনেমা ফ্লপ হলে নাকি ড্যানির কড়া সমালোচনা থেকে রেহাই পান না জুলিয়া।

ব্যাটম্যানের ভক্ত যিনি

২০০৮ সালে সুপার হিরো কেন্দ্রিক সিনেমা দ্য ডার্ক নাইট-এ ব্যাটম্যান চরিত্রে অভিনয় করেন ক্রিস্টিয়ান বেল। কিশোর বয়স থেকে বিয়ের প্রতি একধরনের আতঙ্ক ছিল বেলের। ২০০০ সালে বেলের সঙ্গে এক শুটিং স্পটে পরিচয় হয় সিবি ব্লাজিকের। সিবিও সিনেমা দুনিয়ার মানুষ, সহকারী হিসেবে বিভিন্ন সিনেমায় কাজ করেন। এক বন্ধুর মাধ্যমে সিবির সঙ্গে পরিচয় হয় বেলের। পরিচয়ের কয়েক দিন পরেই বেলের বিয়ে আতঙ্ক কাটিয়ে দেন সিবি, আর ২০০০ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝিতে লাসভেগাসে বিয়ে করেন দুজনে।

সিবি নাকি বেলের সবচেয়ে বড় ভক্ত, আবার সবচেয়ে বড় সমালোচক। ২০১১ সালে ক্রিটিক চয়েস পুরস্কার গ্রহণের সময় বেল বলেন, ‘আমার স্ত্রী শক্তিশালী একজন মানুষ। তার কারণেই আমি সিনেমায় অনুপ্রেরণা পাই। আমার যেসব দিক খারাপ, সেসবের জন্য সিবি আমাকে অনেক বকুনি দেয়।’

ম্যাটের ভক্ত এখন মিসেস ম্যাট

হলিউডের অভিনেতা ম্যাট ডেমন তাঁর এক আর্জেন্টাইন ভক্তকে বিয়ে করেন। ২০০৩ সালে স্টাক অন ইউ সিনেমার শুটিংয়ের ব্যস্ততা আর চাপ কাটাতে ম্যাট সন্ধ্যাবেলা এক রেস্তোরাঁয় সময় কাটাতেন বন্ধুদের নিয়ে। সেখানেই পরিচয় হয় আর্জেন্টিনার লুইসিয়ানার সঙ্গে। এয়ার হোস্টেসের চাকরি ছেড়ে লুইসিয়ানা তখন সবে রেস্তোরাঁতে কাজ শুরু করেছেন। তাঁর সঙ্গে প্রথম পরিচয়ে তেমন কথা বলেননি ম্যাট। কিন্তু পরের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দুজনের ভক্ত-তারকা সম্পর্ক আরও গভীর হয়। লুকোচুরি করে চুটিয়ে প্রেম করা শুরু করেন তাঁরা। পাপারাজ্জিরা প্রথম প্রেমের কথা ফাঁস করলেও কেউ বিশ্বাস করতে চাননি।

২০০৫ সালে ম্যাট একসময় লুইসিয়ানাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসেন। ভক্ত লুইসিয়ানা স্বপ্নের তারকার কাছ থেকে এমন প্রস্তাব পেয়ে প্রথমে একটু ভড়কে যান। কয়েক দিন সময় নিয়ে তিনি বিয়ের পক্ষে মত দেন। দুজনেই বেশ ছোট আকারে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনে বিয়ে করেন। লুইসিয়ানা সব সময়ই নিজেকে ম্যাটের ভক্ত বলে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন।

গ্রন্থনা: জাহিদ হোসাইন খান, সূত্র: পপসুগার