অভিনয় তৃতীয় শ্রেণির শিল্প!

‘থিয়েটার ডিরেক্টরস ইউনিটি’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে মামুনুর রশীদ ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ। ছবি: প্রথম আলো
‘থিয়েটার ডিরেক্টরস ইউনিটি’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে মামুনুর রশীদ ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা থিয়েটারের ‘কেরামতমঙ্গল’ নাটকের প্রস্তুতি চলছিল তখন। কিন্তু মহড়াকক্ষে সময়মতো আসতে পারছিলেন না অভিনেতারা। টেলিভিশনে নাটক নিয়ে ব্যস্ত সুবর্ণা মুস্তাফা, হুমায়ুন ফরীদি, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়সহ সে সময়ের প্রায় সব অভিনয়শিল্পী। এতে বিরক্ত ছিলেন নির্দেশক নাসির উদ্দীন ইউসুফ। রেগে গিয়ে বলেছিলেন, ‘অভিনয় আসলে একটা তৃতীয় শ্রেণির শিল্প।’ ৩৪ বছর পর নিজের সেই বক্তব্যের জন্য আজ তাঁকে খোঁচা খেতে হলো।

আজ শুক্রবার ‘তিন প্রজন্মের নাট্যকার, নির্দেশক, নাট্যজন ও দর্শকের মুখোমুখি’ শীর্ষক আলাপনে অংশ নেন নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ। সকাল সাড়ে ১০টায় মহিলা সমিতির আইভি রহমান মিলনায়তনের এই আলাপনে নাটক, নাট্য আন্দোলন আর এর ভবিষ্যৎ গতিপথ নিয়ে কথা বলেন তাঁরা। অভিনয় কেন গুরুত্বপূর্ণ শিল্পমাধ্যম, সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মামুনুর রশীদের কৌতুকপূর্ণ খোঁচার শিকার হন নাসির উদ্দীন ইউসুফ।

নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘নাট্যকার যা লিখবেন, নির্দেশক সেটার অনুসরণে অভিনেতাকে প্রস্তুত করবেন, সেটার মতো করে নয়। অভিনেতা মঞ্চে যাবেন তৃতীয় চরিত্র নিয়ে। সেটি না হবে নাট্যকারের লেখা চরিত্র, না হবে নির্দেশকের নির্দেশিত চরিত্র। সেটি হবে তাঁর নিজের চরিত্র। একে বলে ক্রিয়েটিভ ট্রান্সলেশন অব টেক্সট, যেটি মুহূর্তে মিলিয়ে যাচ্ছে।’ তাঁর এ বক্তব্যের ভেতরে আকস্মিকভাবে প্রবেশ করেন মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘তোমার ভাবনায় একটা বিরাট পরিবর্তন এসেছে। তুমি ও সেলিম আল দীন আগে বলতে, অভিনয় একটি তৃতীয় শ্রেণির শিল্প। আজ বলছ অভিনয় একটি সার্বভৌম শিল্প। সেলিম আল দীন যখন কথাটা বলত, আমি বলতাম, অভিনয় পারো না বলে এমন কথা বলছ।’ মামুনুর আরও রশীদ বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের মনেও এই উটকো ধারণা ছিল। তিনি একদিন আমাকে বলেছিলেন, অভিনয় হচ্ছে পরজীবী শিল্প। আমি জানতে চাইলাম, “হারানো সুর” ছবিটা কার মনে আছে? তিনি বললেন, না তো, কার? আমি বললাম উত্তম-সুচিত্রার কথা মনে আছে? তিনি বললেন হ্যাঁ।’

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের নাট্যচর্চাকে পূর্ণতা দিয়েছেন যাঁরা, তাঁদের অন্যতম অগ্রপথিক মামুনুর রশীদ ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ। দেশের এ দুই অগ্রজ নাট্যজনের আলাপনে এসেছিলেন ঢাকার নাট্যাঙ্গনের বহু মানুষ। মঞ্চ নাটকের নির্দেশকদের সংগঠন ‘থিয়েটার ডিরেক্টরস ইউনিটি’ প্রথমবারের মতো এ আয়োজন করে। এতে উপস্থিত ছিলেন এনামুল হক, রামেন্দু মজুমদার, কেরামত মওলা, লাকি ইনাম, অধ্যাপক আবদুস সেলিম, কলকাতার বর্ষীয়ান নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী প্রমুখ। দর্শনীর বিনিময়ে এ আলাপন শুনতে এসেছিলেন বিভিন্ন প্রজন্মের নাট্যকার, অভিনেতা, নির্দেশক ও কলাকুশলী। আলাপন শেষে তাঁদের নানা প্রশ্নেরও জবাব দেন দুই নাট্যজন। তুলে ধরেন নিজেদের সৃজনশীল জীবনের নানা দিক।

আলাপের শুরুতে ৬০ দশকের নাট্য ও সংস্কৃতিচর্চা নিয়ে কথা বলেন মামুনুর রশীদ ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ। উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের নাট্য ও সাংস্কৃতিক চর্চার প্রসঙ্গ। এ আয়োজনের প্রশংসা করেন রামেন্দু মজুমদার বলেন, এ রকম আয়োজন নিয়মিত করা প্রয়োজন।