তিনি ছিলেন অপেরা 'ডিভা'

মোসারাত কাবালে
মোসারাত কাবালে

ব্রিটিশ কিংবদন্তি গায়ক ফ্রেডি মার্কারির সঙ্গে দ্বৈত গানে কণ্ঠ দেওয়ার পর থেকে তাঁর খ্যাতি পপ জগতেও বেড়ে গিয়েছিল। তবে মোসারাত কাবালের জগৎ ছিল অপেরা। যত দিন বেঁচে ছিলেন, অপেরা সংগীত ছিল তাঁর প্রেম। কাবালে ৮৫ বছর বয়সে ৬ অক্টোবর বিদায় নেন পার্থিব জগৎ থেকে। কিন্তু মৃত্যুর পরেও তিনি সেই অপেরা ‘ডিভা’ই আছেন।

মৃত্যুর পর সব স্প্যানিশ পত্রিকার মূল শিরোনাম হয়ে ওঠেন কাবালে। গণমাধ্যমগুলো তাঁকে বলেছে ‘প্রত্যেকের ডিভা’। স্পেনের রাজপরিবার একটি বক্তব্যে তাঁকে আখ্যা দিয়েছে ‘বৈশ্বিক সংস্কৃতির কিংবদন্তি’ হিসেবে। সেই বক্তব্যে আরও বলা হয়েছে, ‘তাঁর ব্যক্তিত্ব এবং অতুলনীয় কণ্ঠ সব সময় আমাদের সঙ্গ দেবে।’ ১৯৩৩ সালে মোসারাত কাবালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বার্সেলোনার এক শ্রমজীবী পরিবারে। ছোটকালেই তাঁর মেধার বিকাশ ঘটতে শুরু করেছিল। তাই দীক্ষা নেন অপেরা সংগীতে। ১৯৫৬ সাল থেকে অপেরাশিল্পী হিসেবে পরিচিতি তাঁর। ষাটের দশকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেন তিনি। সমালোচকেরা বলতে লাগলেন, কাবালে হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অপেরাশিল্পীদের একজন। ১৯৮৭ সালে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি কাবালেকে অনুরোধ করে ফ্রেডি মার্কারির সঙ্গে একটি গানের অ্যালবাম প্রকাশের জন্য। অনুরোধ রেখেছিলেন কাবালে। নিজের অপেরার দুনিয়া থেকে বের হয়ে ‘নন-ক্ল্যাসিক্যাল’ গান গেয়েছিলেন তিনি। তখন পপ সংগীতপ্রেমীরাও ভালোবেসে ফেলেন কাবালেকে। মোসারাত কাবালে ও ফ্রেডি মার্কারির গাওয়া ‘বার্সেলোনা’ শিরোনামের গানটি ১৯৯২ সালের অলিম্পিক গেমসের অফিশিয়াল থিম সং করা হয়।

স্প্যানিশ অপেরা সংগীতশিল্পী মোসারাত কাবালে শুধু গ্র্যামি পুরস্কারই নন, অর্জন করেছিলেন দেশি ও আন্তর্জাতিক অসংখ্য সম্মাননা। স্পেনের উনিভারসিদাদ ইন্টারন্যাশনাল মেনেদেজ পেলায়ো (মাদ্রিদে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়) এবং ইউনিভার্সিটি অব বার্সেলোনা থেকে পান সম্মানসূচক ডিগ্রি। ইতালির প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে পান গ্র্যান্ড ক্রস সম্মাননা। জার্মান সরকারও সম্মানিত করেছে তাঁর মেধাকে। ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মাননা লিজিওন অব অনার লাভ করেন। আরও কত পুরস্কার আছে তাঁর ঝোলায়। বয়স ৮০ হওয়া পর্যন্ত বিরামহীনভাবে গান গেয়ে গেছেন কাবালে। এরপর শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিরতি নিতে হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে বার্সেলোনার একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। পিত্তথলির সমস্যায় ভুগছিলেন। এই ‘বার্সেলোনা’ শিল্পীকে ৮ অক্টোবর তাঁর প্রিয় বার্সেলোনা শহরেই শায়িত করা হয়েছে; ঠিক বাবা-মায়ের কবরের পাশে। সেদিন সাধারণ ভক্তরা ছাড়াও স্পেনের রানি সোফিয়া আর প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের সঙ্গে অন্য নেতারা সম্মান জানাতে এসেছিলেন প্রিয় শিল্পীকে।

দ্য গার্ডিয়ান এই শিল্পীর সম্মানে কী লিখেছে জানেন? ‘যতই তাঁর গান স্বর্গীয় হোক না কেন, তাঁর হৃদয়টা থাকত একদম নিচের পৃথিবীতে।’ 

সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন
এপি, দ্য গার্ডিয়ান ও বিলবোর্ড ম্যাগাজিন অবলম্বনে