'#মি টু' ঝড়ের কবলে অমিতাভ আর সালমান!

সালমান খান ও অমিতাভ বচ্চন
সালমান খান ও অমিতাভ বচ্চন

‘#মি টু’ ঝড় প্রবলভাবে আছড়ে পড়েছে বলিউডের বুকে। এত দিন পরিচালক, প্রযোজক, গায়ক ও অভিনেতারা এই ঝড়ের কবলে পড়েছিলেন। এবার বলিউডের রথী-মহারথীরা আক্রান্ত ‘#মি টু’ ঝড়ে। ‘#মি টু’ আন্দোলনে এবার এমন সব তারকার নাম উঠে এসেছে, যা শুনলে সত্যি হজম করতে অসুবিধা হবে। সাধারণ মানুষ এই সুপারস্টারদের নিয়ে ফ্যান্টাসির দুনিয়ায় বসবাস করেন। আজ তাঁদের জীবনের কালো কিছু অতীত প্রকাশ্যে এসে গেছে ‘#মি টু’র সৌজন্যে। এই আন্দোলন এবার মুখোশ খুলে দিয়েছে অমিতাভ বচ্চন, সালমান খান, ভূষণ কুমার, শত্রুঘ্ন সিনহাদের।

সালমান খান আর তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ এনেছেন ছোট পর্দার অভিনেত্রী ও ‘বিগ বস’-এর সাবেক প্রতিযোগী পূজা মিশ্র। এর পাশাপাশি আরবাজ খান, শত্রুঘ্ন সিনহার ওপর ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। এই অভিনেত্রীর আরও অভিযোগ, তাঁর বাবাকে পর্যন্ত প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। পূজা মিশ্র বলেছেন, ‘সুলতান’ ছবির কাজের সময় এই দুই পরিবার (সালমান ও শত্রুঘ্ন) আমাকে যৌন হেনস্তা করেছে।’ এই অভিনেত্রী তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে এ–সংক্রান্ত ভিডিও পোস্ট করেছেন। এর আগেও পূজা সালমান সম্পর্কে অনেক কথা বলেছেন।

‘#মি টু’ নিয়ে এত দিন নিজের মুখ বন্ধ রেখেছিলেন বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন। এমনকি ‘থাগস অব হিন্দোস্থান’ ছবির ট্রেলার লঞ্চের সময় ‘বিগ বি’ এ প্রসঙ্গ খুব সুন্দরভাবে এড়িয়ে গেছেন। তা নিয়ে তনুশ্রী দত্ত কটাক্ষ করেছিলেন তাঁকে। সম্প্রতি নিজের জন্মদিনে এক সাক্ষাৎকারে ‘#মি টু’ নিয়ে প্রথম মুখ খোলেন তিনি। বলিউডের এই বরেণ্য অভিনেতা বলেন, ‘কোনো নারীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার অধিকার কারও নেই। কর্মক্ষেত্রে এসব ঘটনা ঘটা একদম ঠিক নয়। এ ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে আওয়াজ তুলে আইনের সাহায্য নিয়ে দোষী ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া উচিত। আত্মসম্মান, মর্যাদা ও সামাজিকতার পাঠ শিশুদের পাঠ্যপুস্তকে রাখা প্রয়োজন।’

সাক্ষাৎকারটি অমিতাভ বচ্চন তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেন। একজন টুইটার ব্যবহারকারী তাঁর এই পোস্টকে টুইট করেন। আর এই ব্যবহারকারী টুইট করে লিখেছেন, ‘অমিতাভ বচ্চন “#মি টু”কে সমর্থন করেছেন।’ তাঁর এই টুইটকে রিটুইট করেন তারকাদের হেয়ার স্টাইলিশ এবং ‘বিগ বস’-এর সাবেক প্রতিযোগী স্বপ্না ভাবনানী। স্বপ্না বলেন, ‘এটা সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা। স্যার, “পিঙ্ক” ছবিতে এসেছেন এবং গেছেন। এবার আপনার প্রতিবাদী ইমেজ বদলে যাবে। আপনার সত্যি শিগগিরই সবার সামনে চলে আসবে। মনে হচ্ছে, এরপর শুধু নখ খাওয়া আপনার জন্য যথেষ্ট হবে না, আপনি নিজের পুরো হাতই চিবিয়ে খাবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে অমিতাভ বচ্চনকে নিয়ে যৌন উৎপীড়নের নানা ঘটনা শুনেছি। আশা করছি, এবার এই নির্যাতিত নারীরা প্রকাশ্যে আসবেন।’ স্বপ্নার এই টুইটের জবাবে অমিতাভ বচ্চনের কোনো প্রতিক্রিয়া এখনো সামনে আসেনি।

বলিউডের নামী প্রযোজক এবং টি সিরিজ কোম্পানির মালিক ভূষণ কুমারের নামও জড়িয়ে পড়ল ‘#মি টু’ অভিযানে। এক অভিনেত্রী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, ভূষণ কুমার তাঁকে তিনটি ছবিতে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আর এর পরিবর্তে এ প্রযোজক তাঁর সঙ্গে রাত্রিযাপন করতে চেয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে প্রয়াত গুলশান কুমারের ছেলে ভূষণ কুমার বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে।

বলিউডে ‘#মিটু’ আন্দোলন প্রথম শুরু করেন বলিউড অভিনেত্রী ও সাবেক ভারত সুন্দরী তনুশ্রী দত্ত। তিনি বলিউডের বরেণ্য অভিনেতা নানা পাটেকারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। এরপর একের পর এক মুখোশ খসে পড়েছে এই অভিযানে। অভিনেতা অলোক নাথ, পরিচালক সাজিদ খান, সুভাষ ঘাই, গায়ক কৈলাশ খের, আনু মালিক, অভিজিৎ ভট্টাচার্য, লেখক চেতন ভগতসহ আরও অনেকের নাম উঠে এসেছে এই আন্দোলনের হাত ধরে। সাজিদ খানের বিরুদ্ধে একাধিক যৌন হেনস্তার অভিযোগের পর অক্ষয় কুমার ‘হাউসফুল ফোর’ ছবির শুটিং বন্ধ রেখেছেন। এমনকি সাজিদের দিদি কোরিওগ্রাফার ফারহা খানও তাঁর পাশে নেই বলে জানিয়েছেন। বলিউড অভিনেত্রী বিপাশা বসুও সাজিদকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। এখন দেখা যাক ‘#মি টু’ ঝড়ে আর কত মুখোশ খসে পড়ে।