জয়া কাঁদলেন কেন?

‘দেবী’ ছবির সংবাদ সম্মেলনে জয়া আহসান, শবনম ফারিয়া, অনম বিশ্বাস ও চঞ্চল চৌধুরী
‘দেবী’ ছবির সংবাদ সম্মেলনে জয়া আহসান, শবনম ফারিয়া, অনম বিশ্বাস ও চঞ্চল চৌধুরী

আর মাত্র তিন দিন। এরপর দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে ‘দেবী’। হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় উপন্যাস ‘দেবী’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছে ছবিটি। পরিচালনা করেছেন অনম বিশ্বাস। এই ছবির অন্যতম প্রযোজক জয়া আহসান। ছবিটি তৈরির জন্য সরকারের অনুদান পেয়েছেন তিনি। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা ক্লাবে ছবিটির মুক্তি উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এখানে উপস্থাপক রুম্মান রশীদ খান জানালেন, যখন ছবির শুটিং শেষ হয়েছে, পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ চলছিল, তখন জয়া আহসান খুব কেঁদেছেন, আবার তাঁর দলের সবার সঙ্গে চিৎকার করেছেন। কিন্তু কেন এমনটা করেছেন, সেই রহস্য আর উন্মোচন করেননি তিনি। অনুষ্ঠান শেষে জয়া ব্যস্ত হয়ে পড়েন আমন্ত্রিত অতিথিদের দেখভাল করতে।

এরই ফাঁকে কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, ছবির পোস্ট প্রোডাকশনের সময় কান্না আর চিৎকারের কারণ কী ছিল? জয়া আহসান বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমার মায়ের শরীরে একটা বড় অস্ত্রোপচার হয়। সেটা ছিল “দেবী” ছবির পোস্ট প্রোডাকশনের সময়। শুরু থেকেই সিদ্ধান্ত ছিল, মায়ের অস্ত্রোপচার দেশের বাইরে হবে। সেভাবেই ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু ছবি মুক্তির দিন ঠিক হয়ে যাওয়ার কারণে মাকে আর বাইরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি, ঢাকার একটি হাসপাতালেই মায়ের অস্ত্রোপচার করা হয়। একদিকে মা, অন্যদিকে আমার প্রযোজনায় নির্মিত প্রথম সিনেমা। তাও আবার হুমায়ূন আহমেদের মতো কিংবদন্তি লেখকের জনপ্রিয় উপন্যাস নিয়ে। “দেবী”র পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ ছেড়ে মাকে নিয়ে যদি দেশের বাইরে অস্ত্রোপচার করতে চলে যাই, তাহলে ছবির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বড় সিদ্ধান্তের ব্যাপার। উভয়সংকট যাকে বলে। কিছুই ম্যানেজ করতে পারছিলাম না। এদিকে “দেবী” ওই সময় মুক্তি দেওয়া সম্ভব হলো না। একপর্যায়ে “দেবী” টিমের সবার সঙ্গে খুব চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করি। ওই সময় কান্নাকাটিও করেছি।’

‘দেবী’ সিনেমার পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ হয়েছে ঢাকা আর কলকাতায়। পোস্ট প্রোডাকশনের পুরো বিষয়টি জয়া নিজে তদারকি করেছেন। বললেন, ‘পোস্ট প্রোডাকশন কাজগুলো আমি কাছ থেকে দেখাশোনা করেছি। আবার আমাকে ছাড়াও চলছিল না। উভয়সংকটে পড়ে আপসেট হয়ে যাই। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। মনে হয়েছিল, যদি মাকে নিয়ে বাইরে চলে যাই, তাহলে ছবির ক্ষতি হবে। এসব ভেবে চিৎকার করেছি।’

অনুষ্ঠানে কেক কেটেছেন ‘দেবী’র শিল্পী ও কলাকুশলীরা
অনুষ্ঠানে কেক কেটেছেন ‘দেবী’র শিল্পী ও কলাকুশলীরা

১৯ অক্টোবর দেশের ২৫টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে ‘দেবী’। ছবির পরিবেশনার দায়িত্বে আছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। বাংলাদেশ ও ভারতের বাংলা ছবির জনপ্রিয় তারকা জয়া আহসান এই ছবির প্রযোজক। ছবিটি তৈরি করেছে তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সি-তে সিনেমা। জয়া বললেন, ‘এটি আমার প্রথম প্রযোজনা। তাই একটু ভয়ে আছি।’

‘দেবী’ ছবিতে ‘মিসির আলি’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। এ ছাড়া রানু চরিত্রে জয়া আহসান, নিলু চরিত্রে শবনম ফারিয়া, আনিস চরিত্রে অনিমেষ আইচ আর আহমেদ সাবেত চরিত্রে দেখা যাবে ইরেশ যাকেরকে। কদিন আগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড থেকে ছবিটি কোনো কর্তন ছাড়াই ছাড়পত্র পেয়েছে।

হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় চরিত্র ‘মিসির আলি’কে নিয়ে উপন্যাস ‘দেবী’। এবারই প্রথম এই চরিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘যাঁরা হুমায়ূন আহমেদকে পছন্দ করেন, তাঁরা মিসির আলিকেও পছন্দ করেন। এই প্রথম বড় পর্দায় আসছে ‘মিসির আলি’। প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি মুক্তি পাবে। আপনারা সবাই “দেবী”দেখতে আসবেন। আমার কাছে আপনাদের যেমন চাওয়া বড় বড় কাজ, আপনাদের কাছেও আমার অনেক চাওয়া আছে। আমাদের কাজগুলো আপনারা এসে দেখবেন। শিল্প কিন্তু এমনি এমনি বাঁচে না, শিল্প বাঁচে পৃষ্ঠপোষকতায়। দর্শক, আপনারা হচ্ছেন আমাদের শিল্পের পৃষ্ঠপোষক। তাই আপনাদের অনুরোধ করব, আপনারা হলে এসে “দেবী” দেখবেন।’

চঞ্চল চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমরা একটি খারাপ সময়ে দাঁড়িয়ে আছি। সম্পর্কগুলো ভেঙে যাচ্ছে। দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। পাশের মানুষগুলোকে ভালোবাসতে হবে; পাশের মানুষ যেন দূরে সরে না যায়। সবাইকে ভালোবাসতে হবে, দেশকে ভালোবাসতে হবে, আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে যা করলে পরিবারের মঙ্গল হয়, দেশের মঙ্গল হয়, সেটাই করতে হবে।’