আমি জানি ঘৃণা করা সহজ, ভালোবাসা কঠিন

সু–অভিনেতার থেকে সুসন্তান হিসেবে বেশি পরিচিত অর্জুন কাপুর। সৎমা শ্রীদেবী মারা যাওয়ার পর যোগ্য সন্তান হিসেবে বাবা বনি কাপুরের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। মাহারা দুই সৎবোন জাহ্নবী ও খুশিকে বুকে আগলে রেখেছেন এই বলিউড তারকা। তবে তিনি মানুষটাই এ রকম। মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর অভিনীত ছবি নমস্তে ইংল্যান্ড ছবি মুক্তির আগে হোটেল নভোটেলে বলিউড তারকা অর্জুন কাপুরের মুখোমুখি প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য

প্রশ্ন: ‘নমস্তে ইংল্যান্ড’ ছবির জোরদার প্রচারণা করছেন। প্রচারণা একটা ছবিকে হিট করাতে পারে?

অর্জুন: প্রচারণা ছবি হিট করায় কি না, আমার জানা নেই। আমরা প্রথম প্রজন্ম, যারা এভাবে নিজেদের ছবির প্রচার করছি। এখন আমাদের অনেক কিছুই করতে হয়। অনেকটা অন্ধকারে তির ছোড়ার মতো। যদি সঠিক নিশানায় লেগে যায়, তাহলে কেল্লাফতে। তেবর ছবির সময় আমি টানা ৪০ দিন ধরে দুটো রাজ্যের ১৮টার মতো শহরে প্রচারণা করেছিলাম। নমস্তে ইংল্যান্ড ছবির জন্যও আমাদের জোরদার প্রচারণা চলছে। আহমেদাবাদের একটা মলে গিয়ে দেখি মানুষের ভিড়। সেখানে তারা আমাকে আর পরিণীতিকে দেখতে টিকিট কেটে আসেনি। কিন্তু সেখানে এই জনতা দেখেছে পর্দার বাইরে আমাদের অন্য এক ব্যক্তিত্ব। আজ প্রচারণার হাত ধরে সাধারণ মানুষের কাছাকাছি আমরা আসতে পারছি। তাদের সঙ্গে কোথাও নিজেদের যুক্ত করতে পারছি। রিয়েলিটি শো-তেও আমরা প্রচারণা করতে যাই। আমি বলছি না প্রচারণা একটা ছবিকে একদম ‘এ’ গ্রেডের ছবি বানিয়ে দেবে, কিন্তু আমাকে অন্যভাবে সাহায্য করে। আজ আপনাকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছি, এটাও প্রচারণার একটা অংশ। আপনার এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে লোকে আমার কাছে পৌঁছাতে পারবে। আমার কোন চরিত্র, কোন ছবির সঙ্গে মানুষ নিজেকে রিলেট করবে বা তাদের প্রভাবিত করবে, তা আমার জানা নেই। আমাকে আজই একজন বললেন যে তিনি আমাকে গুন্ডে ছবির ‘বালা’ হিসেবে চেনেন। অনেক মহিলা আবার কি অ্যান্ড কা ছবির ‘কবির বানসাল’-এর মতো তাঁদের স্বামীদের থেকে আশা করেন।

প্রশ্ন: আপনাকে আপনার অভিনীত কোন চরিত্র বেশি প্রভাবিত করে?

অর্জুন: ইশকজাদে ছবির সময় আমি একদম নতুন ছিলাম। এই ছবিটা আমার চোখ খুলে দেয়। আমি প্রথম ভারতের কোনো ছোট শহরে গিয়ে একলা রাত কাটাই। প্রথম ‘হিন্দোস্থান’-এ গিয়েছিলাম বলে মনে হয়েছিল। এই ছবি দিয়েই নিজের দেশকে জানতে পেরেছি। নিজেকে এই দেশের সঙ্গে যুক্ত করতে পেরেছি। মুম্বাইয়ের জুহু স্কিমের কাচে মোড়া এসি ঘরে বসে নিজের দেশকে চেনা যায় না। দেশের মানুষকে বিনোদন দিতে হলে সবার আগে দেশকে জানতে হবে। দেশের অলিগলিকে জানতে হবে। তাই আজ দেশের অলিগলির কাহিনি নিয়ে ছবি বানানো হচ্ছে। আমরা এখন বুঝতে পেরেছি, দর্শক কী চায়। ইশকজাদে আমাকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। প্রথমে আমি খুব নার্ভাস ছিলাম। পরে মনে হয়েছিল আমি এই ধরনের চরিত্র করতেই চেয়েছিলাম। কি অ্যান্ড কা ছবির গল্প আমার হৃদয়ের খুব কাছের। এই ছবির চিন্তাভাবনা আমার মনকে ছুঁয়ে যায়। আমি মনে করি ভারতীয় গৃহবধূরা আসল হিরো। তাঁদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হয় না। আজ থেকে তিন-চার বছর আগে আমি ছবিটা করি। তখন নারী-পুরুষের সমতা নিয়ে এত কিছু ছিল না। আমি তখনই ভাবতাম, ছেলেদেরই কেন রোজগারের দায়িত্ব নিতে হবে? আর মেয়েরা কেন বাড়ির কাজ করতে বাধ্য, ছবিটি ঘিরে বাল্কির (পরিচালক) দর্শন আমাকে মুগ্ধ করেছে।

.
.

প্রশ্ন: ‘ইশকজাদে’ ছবির ‘পরমা’ থেকে ‘নমস্তে ইংল্যান্ড’-এর ‘পরম’ অবধি এই যাত্রায় আপনি নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে কতটা খুশি?

অর্জুন: (সশব্দে হেসে) হা হা হা। ভালো বলেছেন। ইংরেজিতে স্রেফ একটা বর্ণের অদলবদল। কিন্তু আমার ক্যারিয়ারে অনেক বদল এসেছে। তবে আমি মোটেও তাতে সন্তুষ্ট নই। আর আমি অসন্তুষ্টও নই। আমি এই দুইয়ের দোলাচলে দুলছি। আমি খুবই বাস্তববাদী এক মানুষ। আর আমি অল্পে খুশি হতে পারি না। আমি ক্যারিয়ার নিয়ে খুব একটা খুশিও নই। কঠিন কঠিন কাজ করতে ভালোবাসি। এক বিলিয়ন মানুষের মধ্যে মাত্র ১০ থেকে ১২ শতাংশ মানুষের কাছে আমার গ্রহণযোগ্যতা। আমি আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই। তবে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে একটা কাজ পাওয়া বড় কথা ছিল। ধীরে ধীরে একটা জায়গায় পৌঁছাচ্ছি। এখন যা আয় করি, তা দিয়ে সভ্য–ভদ্র জীবনযাপন করতে পারি। তবে আমাকে আরও অনেক অনেক কাজ করতে হবে। বললাম না, সন্তুষ্ট-অসন্তুষ্ট এই দুইয়ের মাঝে আমি বাস করি। তাই আমি সন্তুষ্ট হলেও আমার মধ্যে প্রচুর খিদে আছে।

প্রশ্ন: আপনি কি প্রতিযোগিতায় বিশ্বাস রাখেন?

অর্জুন: আমি উচ্চাকাঙ্ক্ষী। তবে আমি কমপিটিটিভ নই। যাদের নিজেদের কাজের প্রতি আস্থা থাকে না, তারা অন্যকে ছোট করতে ভালোবাসে। অন্যরা কী করছে, সে বিষয়ে তীক্ষ্ণ নজর থাকে। তার মানে এই নয় যে আমার আশপাশের মানুষ সম্পর্কে আমি সচেতন নই। তাঁরা কী ছবি করছেন, তা নিয়ে আমি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল থাকি। আমি জানি আমাকে অনেক দিন এই রেসে থাকতে হবে। সবার সময় আসে। শুধু নিজের কাজ করে যাও। আমি কখনোই ভাবব না যে শুধুই আমার ছবি ১০০ কোটির ব্যবসা করবে। অন্যদের ছবি ভালো ব্যবসা করলে আমার তা সহ্য হবে না, এমনটা নয়। ইদানীং এমন অনেক ছবি দেখেছি, যা আমার মনে রীতিমতো দাগ কেটেছে।

প্রশ্ন: ইদানীং এমন কোনো অভিনেতার কোনো ছবি দেখেছেন, যা আপনার মনে দাগ কেটেছে?

অর্জুন: (একটু ভেবে) স্ত্রী আমার ভালো লেগেছে। বরুণ ভালো কাজ করছে। আমি ওর সুই ধাগা ছবিটা দেখিনি। তবে বরুণের অক্টোবর দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। ছবিটা আমার অসাধারণ লাগেনি। তবে বরুণকে দারুণ লেগেছে। ভাবা যায়, বরুণ জুড়ওয়া-র মতো ছবিও করেছে!

প্রশ্ন: ব্যক্তিগত জীবনে আপনি স্বামী হিসেবে কেমন হবেন? ‘কি অ্যান্ড কা’র কবিরকে কোথাও এ ক্ষেত্রে ফলো করবেন?

অর্জুন: আমি জানি যে আমি কী রকম স্বামী হব। তবে আমি খুবই আবেগপ্রবণ। আমার আবেগকে সবার সামনে প্রকাশ করতে ভালোবাসি না। তবে এটুকু বলতে পারি, আমি স্বামী হিসেবে দারুণ হব। আমি সবার ভালোবাসা পেতে ভালোবাসি। আমি চাইব আমার সঙ্গে তাঁর আবেগের সম্পর্ক গড়ে উঠবে। আমাকে সে জানবে, বুঝবে।

প্রশ্ন: পরিবারের বিপদের সময় আপনি যেভাবে সামলেছেন, তা এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?

অর্জুন: আমি আপনাদের কাছ থেকে এখন এসব শুনছি। আমার যা করা উচিত ছিল, আমি তা–ই করেছি। আমি বরাবরই আমার তিন বোন সোনম, রিহা, আংশুলার প্রতি দায়িত্ববান ছিলাম। আমার বাবার প্রতিও তা–ই ছিলাম। সবার তখন আমার মতো শক্ত কাঁধের প্রয়োজন ছিল। আমি জানি ঘৃণা করা সহজ, কিন্তু ভালোবাসা কঠিন। আজ একটা ঘটনায় এটা প্রকাশ্যে এসে গেছে। আমি সবাইকে দেখিয়ে এটা করতে চাইনি। আপনাদের চোখে নতুন অর্জুন ধরা দিয়েছে। কিন্তু আমি যা ছিলাম, তখন তা–ই করেছি। আমার পরিবার আমার শক্তি। আমি জীবনে অনেক কিছু দেখেছি। আমার বেড়ে ওঠাটা মোটেও সহজ ছিল না। এই নয় যে আমি অনেক কষ্ট করেছি। আমি মা–বাবাকে আলাদা হতে দেখেছি, আমার মা আমাকে ছেড়ে চিরতরে চলে গেছেন। আর এই সব ঘটনায় দেখেছি যে আপনার পাশে সে রকম কেউ না থাকলে আপনি ক্রমেই ভেঙে পড়বেন। আর ভেঙে পড়া সবচেয়ে সহজ। আমি মনে করি, পরিবারের ছোট সদস্য যেমন বড়দের সম্মান দেয়, তেমনি বড়দেরও উচিত ছোটদের মতামতকে যথাযথ মর্যাদা দেওয়ার। আমি একটা কথাই বলতে চাই, ভালোবাসা দিয়ে সব জয় করা যায়।