মিসির আলি আসছেন

দেবী ছবির পোস্টার
দেবী ছবির পোস্টার
হুমায়ূন আহমেদের দেবী উপন্যাস অবলম্বনে আসছে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দেবী। আগামীকাল শুক্রবার সারা দেশে মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি। চলচ্চিত্র–দর্শকের সামনে প্রথমবারের মতো আসছে উপন্যাসের মিসির আলি, রানু, নীলু, আনিস, সাবেত। কী আছে পর্দার দেবীতে? ছবি দেখার আগে সেসব জানার চেষ্টা করেছেন মাসুম আলী

এ কথা সবারই জানা, দেবীর কেন্দ্রীয় চরিত্র মিসির আলি। কেমন মিসির আলি? বইয়ের পাতায় লোকটার মাথায় অবিন্যস্ত চুল, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। কিন্তু দৃষ্টি এত প্রখর যে তাকালে মনে হবে সামনে যিনি আছেন, তাঁর ভেতরটা পড়তে পারছেন। ইনিই মিসির আলি। এই মিসির আলির স্রষ্টা হ‌ুমায়ূন আহমেদ। কিন্তু আমরা আগামীকাল থেকে যে মিসির আলিকে বড় পর্দায় দেখব, সেই মিসির আলি পরিচালক অনম বিশ্বাসের।

এ খবরও নিশ্চয়ই বেশির ভাগ মানুষ জেনে গেছেন, নতুন মিসির আলি হয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী। মনপুরা, মনের মানুষ, আয়নাবাজির চঞ্চল চৌধুরী। ছোট বা বড় পর্দায় অভিনয়গুণে তিনি নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন বারবার। নিজেকে ভেঙেছেন, গড়েছেন। সম্প্রতি প্রথম আলো কার্যালয়ে এসেছিলেন তিনি, প্রযোজক জয়া আহসান ও পরিচালক অনম বিশ্বাস। বইয়ের পাতা থেকে পর্দায় মিসির আলিকে নিয়ে আসার এ যাত্রা কতটুকু চ্যালেঞ্জিং ছিল চঞ্চলের জন্য? কেমন ছিল মিসির আলি হয়ে ওঠার অভিজ্ঞতা? খুব কঠিন?

কঠিন পরীক্ষায় চঞ্চল

কঠিন যে ছিল, চঞ্চল চৌধুরীর কথায়ই তা বোঝা গেল। এমনকি নিজের চুলও নাকি কিছু খোয়া গেছে! বললেন, ‘চুল প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। কারণ এখানে সবকিছু সত্যিকারের করতে চেয়েছি। এ জন্য চুলে রং–ও করতে হয়েছে।’ চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘মিসির আলি চরিত্রে অভিনয় করা বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল দুটি কারণে। এক. আয়নাবাজির পর দর্শকদের বাড়তি একটা প্রত্যাশার চাপ ছিল। আর দুই. মিসির আলি বহুল পঠিত একটা উপন্যাসের চরিত্র। সাধারণ চিত্রনাট্যের চরিত্র হলে এত চিন্তা করতাম না। মিসির আলি এত জনপ্রিয় যে প্রত্যেক পাঠক তথা দর্শকের ভেতরে একজন মিসির আলি বাস করেন। পাঠক নিজের মনে ইমেজ তৈরি করেন। সবার ইমেজ তো সমান নয়। সেটা মেলানো কঠিন ছিল। দর্শক উপন্যাসে কীভাবে পড়েছেন, আর পর্দায় কীভাবে দেখছেন, সেটা কিন্তু ভাববেন। ফলে চরিত্রটি অনেক গবেষণা করে তৈরি করতে চেষ্টা করেছি আমরা। সিনেমার ক্ষেত্রে বইয়ের চরিত্র ১০০ শতাংশ আনা সম্ভব হয় না নানা কারণে…।’ চঞ্চলের বিশ্বাস, মিসির আলি চরিত্রটি দর্শক পছন্দ করবেন।

যথার্থ মিসির আলি হয়ে ওঠার জন্য বারবার ট্রায়াল দিতে হয়েছে চঞ্চল চৌধুরীকে। কয়েক শবার চশমা বদলাতে হয়েছে। শার্ট না পাঞ্জাবি—চরিত্রের কোন পোশাক হবে, কীভাবে হাঁটবে, কথা বলবে—এগুলো নিয়ে দিনের পর দিন ভাবতে হয়েছে।

চঞ্চল এবার মিসির আলি
চঞ্চল এবার মিসির আলি


জয়ার ধ্যানে–জ্ঞানে দেবী
এখন জয়া আহসানেরও ধ্যানে-জ্ঞানে দেবীরবিচরণ। উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র রানু। এই ভূমিকায় অভিনয় করছেন জয়া আহসান। তা ছাড়া জয়ার প্রযোজনা সংস্থা ‘সি-তে সিনেমা’র প্রথম প্রয়াস দেবী।প্রথম প্রযোজনা হিসেবে মিসির আলিকে বেছে নিলেন কেন? জয়া স্মিত হেসে বললেন, ‘হিমু বা মিসির আলি খুবই আইকনিক চরিত্র। আমাদের মনের, প্রাণের কাছের। খুব শক্তিশালী চরিত্র। আমার মনে হয়, চঞ্চল যথাযথ অভিনয় করতে পেরেছেন। প্রথম ঝলক (ফার্স্ট লুক) এবং ট্রেলারের পরই দারুণ সাড়া পেয়েছি। আমারও রানু চরিত্রটা করার খুব ইচ্ছে ছিল। ছোট থেকে ইচ্ছে ছিল, আহা এই ক্যারেক্টারটা যদি করা যায়…! আর কেউ করছিলেন না। সাহস নিয়ে করে ফেললাম।’

‘আমার কিন্তু প্রযোজক হিসেবে উচিত ছিল বাণিজ্যিক ছবি, যেটা থেকে পয়সা আসে, সেটা করা। কিন্তু আমি যে জীবনটা বিশ্বাস করি, যে ছবির সঙ্গে আমি থাকতে চেয়েছি, আমি স্ট্রাগল করেছি, চেষ্টা করেছি সে ধরনের কাজ করতে। আমরা একদম সেরা কাজটাই দর্শককে দিতে চেয়েছি, তাই টাকার সঙ্গে আপস করার কথাটা ভাবিনি খুব একটা। একবার তো পুরো এডিটিং ফেলে দিয়ে নতুন করে করিয়েছি। দেখুন, এই ছবিটার সঙ্গে এমন দুজন মানুষের নাম জড়িয়ে আছে—হুমায়ূন আহমেদ স্যার আর মিসির আলি, আমি চেয়েছি মানুষ যাতে ভালো একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে হল থেকে বেরোতে পারে।’ যোগ করলেন জয়া আহসান।

প্রথম আলোর আমন্ত্রণে এসেছিলেন চঞ্চল চৌধুরী ও জয়া আহসান। ছবি: কবির হোসেন
প্রথম আলোর আমন্ত্রণে এসেছিলেন চঞ্চল চৌধুরী ও জয়া আহসান। ছবি: কবির হোসেন

উপন্যােসর রানু, চলচ্চিেত্রর রানু
রানুর চরিত্রটাই তো একটু জটিল, একই সঙ্গে দুজন মানুষ বাস করছে তার ভেতর। তবে জয়ার ভাষ্য, হুমায়ূন আহমেদের রানু থেকে অনম বিশ্বাসের রানু একটু আলাদা, চরিত্রটা একটু অন্যভাবে অ্যাডাপ্ট করা। যেটা হয়েছে, সেটা অরিজিনাল রানুর কাছাকাছিই, কারণ একটা সিনেমাটিক পারসেপশন মাথায় রাখতে হয়েছে। ‘একদম সাহিত্যের মতো করে তো সিনেমা হবে না। চরিত্রটিতে অভিনয়ের সময় পরিচালক সব সময়ই একটা মিউজিক বাজাতেন, যেন সেটার আবহে অভিনয় করতে পারি। ছবিটি দেখার পর মনে হয়েছে, এটা কি সত্যিই আমি করেছি! আমি দৃঢ়ভাবে আশ্বস্ত করছি, চলচ্চিত্রটি দর্শকদের সন্তুষ্ট করবে। এর মধ্যে তাঁরা তাঁদের রানুকে পাবেন।’

জয়া আহসানের সঙ্গে অভিনয় করেছেন পরিচালক অনিমেষ আইচও
জয়া আহসানের সঙ্গে অভিনয় করেছেন পরিচালক অনিমেষ আইচও



কেন দেবী দেখবে দর্শক
প্রযোজক জয়া আহসানের কাছে জানতে চাই, আচ্ছা দেবী উপন্যাসটা তো অনেকেই পড়েছেন, তাঁরা সিনেমা হলে কী প্রত্যাশা নিয়ে যাবেন? তাঁরা তো গল্পের বিষয়বস্তুটা জানেন। তাহলে দর্শক কতটুকু নেবে বড় পর্দায় দেবী? বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতে জবাব দিলেন জয়া আহসান, ‘আমি পরিষ্কার করে দিই, আমরা কিন্তু হুবহু উপন্যাসের মতো করে দেবী বানাইনি। আমি এটা একদম স্পষ্ট করে দিতে চাই। কিছু জায়গা আছে, বইয়ে পড়তে যেমন ভালো লাগছে, ভিজ্যুয়ালি সেটা করতে গেলে ভালো লাগবে না একদমই, বরং হাস্যকর হয়ে ওঠার চান্স আছে। সে জন্যই আমাদের কাছাকাছি রকমের অন্য একটা আবহে যেতে হয়েছে। সেটা সব জায়গায় বইয়ের দেবীরসঙ্গে পুরোপুরি মিলবে না, কিন্তু এটা বলতে পারি যে দর্শকের কাছে সেটা অবাস্তব মনে হবে না।’

জয়া প্রশংসা করেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের। সরকারি অনুদানের বরাদ্দের টাকা সময়মতো পাওয়া গেছে। বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে জয়া বলেন, ‘বাংলাদেশে ধীরে ধীরে চিন্তাশীল চলচ্চিত্র নির্মাণের জায়গা তৈরি হচ্ছে। আমি আশাবাদী, এ রকম চলচ্চিত্র একসময় সারা বিশ্বের বাঙালিদের হৃদয় জয় করবে।’