গুরুর জন্য আফসোস

জানাজার আগে আইয়ুব বাচ্চুর ছেলে ও বাবা।  ছবি: জুয়েল শীল
জানাজার আগে আইয়ুব বাচ্চুর ছেলে ও বাবা। ছবি: জুয়েল শীল

কিংবদন্তি শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু গতকাল শনিবার নিজ শহরে ফিরলেন। শেষশয্যা নিয়েছেন চট্টগ্রামে, মায়ের কবরের পাশে। বাচ্চুর জন্য কান্নার রোল উঠেছে সর্বত্র। কেঁদেছেন সহশিল্পী, স্বজন, বন্ধু, ভক্ত—সবাই। আইয়ুব বাচ্চু মানে চিরতারুণ্য। আইয়ুব বাচ্চু মানে প্রেম। আইয়ুব বাচ্চু মানে বিরহ। আইয়ুব বাচ্চু মানে গানের গুরু। এমন সব শব্দ ও বাক্য মুখে মুখে ফিরেছে।

এই যেমন শিল্পী পার্থ বড়ুয়া বলেই ফেললেন, ‘বাচ্চু ভাই আমাদের অভিভাবক। আমরা একজন অভিভাবককে হারালাম। একজন মানুষ সবার প্রিয় হতে পারে না। কিন্তু বাচ্চু ভাই ছিলেন সব মানুষের প্রিয়।’

চট্টগ্রামের নগর থেকেই ব্যান্ড সোলসের সৃষ্টি। পরে আইয়ুব বাচ্চু আলাদা ব্যান্ড করলেও সম্পর্ক আগের মতোই ছিল। একসময় সোলসে আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে ড্রাম বাজাতেন সুব্রত বড়ুয়া রনি। গতকাল আইয়ুব বাচ্চুকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে সুব্রত বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশ একজন অসাধারণ শিল্পীকে হারিয়েছে। তাঁর গায়কি, তাঁর গিটারবাদন মনে রাখবে পুরো জাতি। এই ক্ষতি অপূরণীয়।

আইয়ুব বাচ্চু
আইয়ুব বাচ্চু

বাচ্চুর জানাজায় মানুষের ঢল নামে। নানা বয়সের মানুষ অংশ নেয়। একপর্যায়ে জানাজা মসজিদ প্রাঙ্গণ ছাপিয়ে পাশের সড়কে চলে যায়। বন্ধ হয়ে যায় সড়কটি। জানাজায় অংশ নিতে আসা ভক্তদের কারও কারও চোখের কোণ ভিজে যায়। ফুলে ফুলে ঢেকে যায় কফিনটি।

সরওয়ার হোসেন নামের এক যুবক বলেন, আইয়ুব বাচ্চুর গান তারুণ্যের প্রতীক। প্রেমের প্রতীক। এ দেশের তরুণ–তরুণীরা তাঁর গান শুনে প্রেম করেছেন। বিরহের সময়ও আইয়ুব বাচ্চুর গানকে সঙ্গী করেছেন। তিনি মরে গেলেও তাঁর গান বেঁচে থাকবে।

ব্যান্ড দল গঠনের শুরুতে আইয়ুব বাচ্চুর ঘনিষ্ঠতা ছিল জ্যাকব ডায়াস, মোহাম্মদ আলীদের সঙ্গে। জ্যাকব ডায়াস স্পাইডার ব্যান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। গিটার বাজাতেন। গতকাল জানাজার আগে জ্যাকব ডায়াস কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি বাচ্চুকে বলতাম, আমি মারা গেলে দেখতে আসিস। আজ সে নিজে আমাকে ফেলে চলে গেল। এখন থেকে বাচ্চুর ছবি থাকবে আমার বুকপকেটে।’

আইয়ুব বাচ্চুর আরেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু চিটাগং মিউজিক্যাল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী। বলেন, চট্টগ্রাম এলেই আড্ডা হতো তাঁদের। আর যেকোনো গান তুললে টিউনটি শোনাতেন আলীকে। মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘৪০ বছরের বন্ধুত্ব আমাদের। বাচ্চুর জন্য পুরো বাংলাদেশ কাঁদছে। অন্তরে যে জ্বালা, যে ব্যথা, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। তাঁকে কবর দিয়ে এলাম। কিন্তু মনে হচ্ছে, সে এখনো বেঁচে আছে। চট্টগ্রাম এলেই ফোন দিয়ে বলত, ভাবির হাতে রান্না করা খাবার নিয়ে হোটেলে যেতে। আর কোনো দিন এ কথা বলবে না বাচ্চু।’

গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম শহরের পূর্ব মাদারবাড়ি আইয়ুব বাচ্চুর নানার বাড়িতে ছেলে আহনাফ তাজোয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘সবার কাছে আমার একটাই চাওয়া, আপনারা আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন। তাঁর যেন বেহেশত নসিব হয়। আর তাঁকে নিয়ে কারও মনে কোনো ক্ষোভ থাকলে মাফ করে দেবেন।’ আহনাফ তাজোয়ার আরও বলেন, ‘আমার বাবা হয়তো আপনাদের জন্য সর্বোচ্চটা দিতে পারেননি। কিন্তু তিনি আপনাদের অফুরন্ত ভালোবাসা দিয়েছেন। তিনি অনেক করেছেন। আপনাদের কাছে শেষ কথা, আপনারা আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।’