ভাই-বন্ধু সাইমন ও বাপ্পী

>

১৯ অক্টোবর মুক্তি পেয়েছে বাপ্পী চৌধুরী অভিনীত নায়ক। কাল মুক্তি পাচ্ছে সাইমন সাদিক অভিনীত মাতাল। মুক্তির আগে–পিছে এই দুই ছবির দুই নায়ক প্রথমবার একসঙ্গে আড্ডায় বসেছেন। চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা এবং একে অপরের পছন্দ-অপছন্দসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন সাইমন ও বাপ্পী।

সাইমন সাদিক ও বাপ্পী চৌধুরী। ছবি সুমন ইউসুফ
সাইমন সাদিক ও বাপ্পী চৌধুরী। ছবি সুমন ইউসুফ

ভক্ত-দর্শকেরা কীভাবে নেবেন, সেই ভয়ে নায়কদের নিজের প্রতি সচেতনতা এতটাই যে মাথার চুলটাও পরিপাটি থাকা চাই। টুপি ছাড়া ছবিই তুলবেন না সাইমন। টুপি খুলতে চিত্রগ্রাহকের আবদারেও কাজ হলো না। সাইমন বারবার বলছিলেন, ‘ভাই, অনেক দিন মাথার চুল কাটানো হয়নি। দেখতে ভালো লাগবে না।’ গত সোমবার দুপুরের পর ছবি তোলা হচ্ছিল এই অভিনেতার। কথা ছিল, নায়ক বাপ্পী চৌধুরীরও ছবি তোলা হবে। দুজন একসঙ্গেই দাঁড়াবেন ক্যামেরার সামনে। কিন্তু সাইমন আগেই পৌঁছে যাওয়ায় তাঁর একক ছবি তোলা হচ্ছিল এফডিসির ঝরনা স্পটের আঙিনায়।

বাপ্পী আসতে আসতে বরং কয়েকটি তথ্য জেনে নেওয়া যাক। ২০১২ সালে খুব কাছাকাছি সময়ে সাইমন ও বাপ্পীর চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু। জুলাই মাসে জ্বি হুজুর ছবি দিয়ে সাইমন সাদিকের অভিষেক আর অক্টোবর মাসে বাপ্পী চৌধুরীর অভিষেক ভালোবাসার রং চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। সম্ভবত চলচ্চিত্রের অভিষেকে চার মাসের ‘বড়’ হওয়ার কারণে সাইমনকে ভাই ডাকেন বাপ্পী। চলচ্চিত্রে দীর্ঘ ছয় বছরের পথচলায় সাইমন ২০টির মতো আর বাপ্পী ৩০টির মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন। দুজনেরই বেশ কিছু ছবি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। কিন্তু এই দীর্ঘ যাত্রায় একসঙ্গে কোনো ছবিতে অভিনয় করেননি। এমনকি তাঁদের দুজনের একসঙ্গে কোনো ফটোসেশনও করা যায়নি। এর আগে দুজনকে একই ছবিতে অভিনয়ের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে সিনেমাপাড়ায় শোনা যায়। বিষয়টি মাথায় নিয়েই দুজনকে একই ফ্রেমে বসানোর সিদ্ধান্ত হয়।

বাপ্পী অভিনীত নায়ক ছবিটি মুক্তি পেয়েছে ১৯ অক্টোবর আর ২৬ অক্টোবর মুক্তি পাবে সাইমন অভিনীত মাতাল। এ উপলক্ষ ধরেই দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। দুজনই সানন্দে রাজি হন।

এরই মধ্যে বাপ্পী এসে হাজির। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ভেতরে বসা সাইমনকে দেখে বাপ্পী রসিকতা শুরু করে দিলেন। বলেন, ‘সাইমন ভাইয়ের হাতের পেশি তো সেই-ই হচ্ছে! ব্যায়াম মনে হয় ঠিকঠাকই হচ্ছে।’ হাসতে হাসতে সাইমন বলেন, ‘তুমি ও আমি তো একই জিমে ব্যায়াম করি। মজা নিচ্ছ মনে হচ্ছে!’ দুজনই হেসে ফেলেন।

ততক্ষণে ছবি তোলা শেষ হয়। শিল্পী সমিতির রুমে দুজন প্রথম আলোর মুখোমুখি বসেন। শুরুতেই জানতে চাইলাম দুজনের কবে, কীভাবে প্রথম দেখা হয়েছিল? সাইমন বলেন, ‘দিনটি মনে নেই। ২০১২ সালে কোনো এক সন্ধ্যায় জাজ মাল্টিমিডিয়ার কার্যালয়ে আমাদের দুজনের প্রথম দেখা। যখন ভালোবাসার রং–এর শুটিং করছিলেন বাপ্পী, তখন আমার প্রথম ছবি জ্বি হুজুর–এর কাজ শেষের পথে।’ সাইমনের কথা শেষ না হতেই বাপ্পী বললেন, ‘নারায়ণগঞ্জের রানীমহল হলে সাইমন ভাইয়ের জ্বি হুজুর ছবির প্রথম শো দেখেছিলাম।’

সেই পরিচয় থেকে আজ ভাই-বন্ধুর মতো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে দুজনের মধ্যে। মুক্তির পর দুজনেই দুজনের ছবির নিয়মিত দর্শক। খাস জমিন চলচ্চিত্র ছাড়া সাইমনের সব কটি ছবিই হলে গিয়ে দেখেছেন বাপ্পী। পোড়ামন, ব্ল্যাক মানি, মায়াবিনী সাইমন অভিনীত বাপ্পীর প্রিয় ছবি। অন্যদিকে বাপ্পী অভিনীত ভালোবাসার রং, অনেক সাধের ময়না, অন্যরকম ভালোবাসা, সুইটহার্ট, সুলতানা বিবিয়ানা ছবিগুলো সাইমনের পছন্দের তালিকায় আছে।

দুজনই চলচ্চিত্রের নায়ক। এ সময়ে তাঁদের প্রিয় নায়ক কে? দুজনেরই এক জবাব, শাকিব খান। তবে সাইমন বলেন, ‘প্রিয় নায়ক শাকিব খান। আর পছন্দের নায়ক বাপ্পী।’ এবার দুজন দুজনকে মূল্যায়ন করতে বলা হলে সাইমন বলেন, ‘বাপ্পীর মধ্যে আন্তরিকতা বেশি। ও একজন সুদর্শন হিরো।’ ‘সাইমন ভাই ভালো মানুষ। সব বিষয়কেই ইতিবাচকভাবে দেখতে চান’, সাইমনকে নিয়ে বললেন বাপ্পী।

একে অপরকে প্রশংসায় ভাসালেও চলচ্চিত্রপাড়ায় গুঞ্জন আছে, সাইমন ও বাপ্পীর মধ্যে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তবে বিষয়টি মানতে নারাজ বাপ্পী। তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই।’ একই কথা বললেন সাইমনও। তিনি বলেন, ‘সিনেমার কাজই তো কমে গেছে। কাকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবব! এখন শুধু নিজেকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবি।’

কিন্তু দর্শক, পরিচালকের কাছে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও দুজনকে এক ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় না। সিনেমাপাড়ায় শোনা যায়, সাইমন চাইলেও বাপ্পীর অনীহা আছে। বিষয়টি স্বীকার করলেন না বাপ্পী। বলেন, ‘অনেক সাধের ময়না, দবির সাহেবের সংসার ছবিতে আমাদের দুজনের কাজ করার কথা ছিল, হয়নি। তবে যেকোনো সময় হতেই পারে।’

বিরতি ছাড়াই আড্ডা চলছে। কথায় কথায় উঠে এল এখনো স্বপ্নের চরিত্রে কাজ করা হয়নি দুজনের। দুজনকে প্রশ্ন করি—কী সেই চরিত্র? সাইমন বলেন, ‘একজন দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ চরিত্রে কাজ করার স্বপ্ন দেখি।’ তবে বাপ্পীর স্বপ্নের চরিত্র ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘আর্মি অফিসার ও ক্রিকেটার চরিত্রে কাজ করতে চাই।’

গরম কফি আসে আড্ডার টেবিলে। চলচ্চিত্রের বর্তমান দুরবস্থায় আসি। এ ব্যাপারে দুজনকে মূল্যায়ন করতে বলা হলে বাপ্পী দেবী ছবির প্রচারণাকে উদাহরণ হিসেবে টেনে এনে বলেন, ‘প্রচারণাই ছবির প্রাণ। এ কারণেই দেবী এগিয়েছে। এখন নায়ক-নায়িকানির্ভর করে বসে থাকলে সিনেমা চলবে না। ছবির খবর মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে।’

দিন দিন সিনেমা কমে গেলেও বিষয়টিকে একটু ভিন্নভাবে তুলে ধরলেন সাইমন। বলেন, ‘উত্থান-পতন থাকবে। এরই মধ্যে সরকার চলচ্চিত্রের দিকে নজর দিয়েছে। আমি আশাবাদী।’

সময় গড়ায়। কিন্তু সাইমন–বাপ্পীর দুজনের নিজেদের মধ্যকার কথা যেন ফুরোই না। চলতে থাকে তাঁদের আড্ডা।