কলকাতায় বাজার হারাচ্ছেন বাংলাদেশি শিল্পীরা?

শাকিব খান ও শুভশ্রী অভিনীত চালবাজ ছবিটি যৌথ প্রযোজনার নীতিমালায় তৈরি হলেও এটি মুক্তি পায় ভারত থেকে আমদানি করা ছবি হিসেবে
শাকিব খান ও শুভশ্রী অভিনীত চালবাজ ছবিটি যৌথ প্রযোজনার নীতিমালায় তৈরি হলেও এটি মুক্তি পায় ভারত থেকে আমদানি করা ছবি হিসেবে

কয়েক বছর ধরে নুসরাত ফারিয়া, মাহিয়া মাহি, বিদ্যা সিনহা মিম নিয়মিত কলকাতার ছবিতে কাজ করে এলেও বর্তমানে সেখানে তাঁদের কোনো কাজ নেই। বেশ দাপটের সঙ্গেই পরপর কলকাতার তিন ছবিতে অভিনয় করেছেন শাকিব খান। গত সেপ্টেম্বরে তাঁর সর্বশেষ ছবি নাকাব দুই বাংলায় মুক্তি পায়। এরপর কলকাতার নতুন কোনো ছবিতে এখনো চুক্তিবদ্ধ হননি ঢাকাই ছবির এই নায়ক। তাহলে কি কলকাতার বাজার হারাচ্ছেন বাংলাদেশি শিল্পীরা?

নিয়মিতভাবে বাংলাদেশে আমদানি করা ছবি মুক্তি শুরুর পর থেকে গত ৮ বছরে প্রায় ২৫টি ভারতীয় বাংলা ছবি মুক্তি পেয়েছে এ দেশে। এর মধ্যে আছে খোকা বাবু, খোকা ৪২০, যুদ্ধ শিশু, অভিমান, বেলা শেষে, হরিপদ ব্যান্ডওয়ালা, কেলোর কীর্তি, তোমাকে চাই, জিও পাগলা, জোর, ওয়ান, পিয়া রে, চালবাজ, ভাইজান এল রে, সুলতান দ্য সেভিয়র, ইন্সপেক্টর নটি কে, পোস্ত, ফিদা, ইয়েতি অভিযান, ককপিট, বলো দুগ্গা মাই কি, নাকাব, চালবাজ। ভবিষ্যতে মুক্তি পাওয়ার কথা বিসর্জন ও ভিলেন ছবি দুটি।

আমদানিকারকদের কথা, আমদানি করা ছবিগুলোর বেশির ভাগই মুক্তির দু-এক দিনের মাথায় মুখ থুবড়ে পড়েছে। তবে গত এক বছরে বেশ কয়েকটি কলকাতার ছবি কিছুটা দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশেষ করে এদেশীয় নায়ক-নায়িকা অভিনীত ছবিগুলো কিছুটা ব্যবসাসফল হয়েছে বলে জানালেন আমদানিকারকেরা। এর মধ্যে আছে ফারিয়ার ইন্সপেক্টর নটি কে, মিম-ফেরদৌসের ইয়েতি অভিযান, মিমের সুলতান দ্য সেভিয়র, শাকিবের ভাইজান এল রে।

গত মে মাসে একজন প্রযোজকের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ রায় দেন, যৌথ প্রযোজনার ও আমদানি করা ছবি কোনো উৎসব উপলক্ষে মুক্তি দেওয়া যাবে না। এতে আমদানিতে আনা এদেশীয় শিল্পী অভিনীত কলকাতার ছবিগুলোতে প্রভাব পড়েছে। উৎসবে মুক্তি দিতে না পারায় এ বছর মুক্তি পাওয়া শাকিব খানের ছবি চালবাজ ও সর্বশেষ নাকাব ভালো ব্যবসা করতে পারেনি।

ইন্সপেক্টর নটি কে ছবিতে বাংলাদেশের নুসরাত ফারিয়ার সঙ্গে ভারতের জিৎ
ইন্সপেক্টর নটি কে ছবিতে বাংলাদেশের নুসরাত ফারিয়ার সঙ্গে ভারতের জিৎ

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এন ইউ আহম্মদ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া বলেন, ‘কলকাতার প্রযোজকদের বাংলাদেশ থেকে শিল্পী নেওয়ার মূল কারণই হলো, ছবিটা এখানে চললে কিছু টাকা আসবে। এসব ছবির বাজেটও বড়। সে জন্য উত্সবগুলো ধরার চেষ্টা থাকে। এখন যদি উৎসবে বড় ছবি চালানোর সুযোগ না থাকে, তাহলে কলকাতার প্রযোজকেরা এ দেশের শিল্পীদের নিয়ে ছবি করতে আগ্রহী হবেন না।’

তবে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, ‘দেশীয় চলচ্চিত্রের স্বার্থে এ ধরনের নিয়মকানুন করা হয়েছে। আর দেশীয় চলচ্চিত্রের জন্যই আমরা শিল্পী। এরপর বাড়তি হিসেবে দেশের বাইরের ছবিতে কাজ করব। আমদানিতে আমাদের শিল্পী আছে কি না, সেটা বড় ব্যাপার না। আসল কথা, ছবিটি কলকাতার।’

বিষয়টি নিয়ে সুলতান দ্য সেভিয়র ও ইয়েতি অভিযান-এর অভিনেত্রী বাংলাদেশের বিদ্যা সিনহা মিম বলেন, দুই দেশ থেকে শিল্পী নিয়ে কাজ করার কারণ, যাতে দুই দেশেই ছবিটি চলে। বড় বাজেটের ছবিগুলো উত্সবের দিনে মুক্তির পরিকল্পনা থাকে প্রযোজকদের। কিন্তু বাংলাদেশে নতুন নিয়মে সেই সুযোগ নেই। সুতরাং কলকাতার প্রযোজকদের বাংলাদেশি শিল্পী নিয়ে তো লাভ নেই।

এদিকে যৌথ প্রযোজনার ছবির নতুন নীতিমালা তৈরি হওয়ার পর গত ১০ মাসে একটি ছবিও নির্মিত হয়নি। দুটি চিত্রনাট্য জমা পড়েছিল। কিন্তু প্রেম আমার ২ ও বালিঘর এখন আর যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হচ্ছে না।