অমিতাভ বলবেন শারমিনের গল্প

নিঃশব্দতার শহর স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবির দৃশ্যে ‘শারমিন’ চরিত্রের খুদে অভিনয়শিল্পী ঋদ্ধি
নিঃশব্দতার শহর স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবির দৃশ্যে ‘শারমিন’ চরিত্রের খুদে অভিনয়শিল্পী ঋদ্ধি

রোববার সকালে উঠেই চোখ যায় পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে। লিখেছেন, ‘বহুদিন পর আবার ফিকশন। আইফ্লিক্সের জন্য নির্মাণ করছি। আমার প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নিঃশব্দতার শহর। সাত–আট বছর যাবৎ গল্পটা পেটে নিয়ে ঘুরছি।’ আয়নাবাজি নির্মাতার প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। যোগাযোগ করে হাজির হই উত্তরার শুটিং স্পটে।

একটি ফ্ল্যাটবাড়িতে শুটিং। দরজার ওপাশ থেকে শব্দ আসে—‘কোয়াইট’, ‘রোলিং’, ‘অ্যাকশন’। মানে, শুটিং শুরু হয়ে গেছে। একটু পর ভেতরে যাই। ছোট একটি মেয়েকে দৃশ্য বোঝাচ্ছেন পরিচালক। সবাই তাকে শারমিন বলে ডাকছে। শারমিনের অনেক কাজ এই বাসায়—কারও চিরুনি এনে দেয়, কারও জুতা পলিশ করে তো কারও হাই হিল জুতা এনে দেয়। দৃশ্য বোঝানো শেষ। অ্যাকশন বলতেই শুটিং শুরু। হঠাৎ কলবেল বাজে। পরিচালককে বলতে হয়, ‘কাট’। একজন জানান, ময়লা নেওয়ার লোক এসেছে। সবার চেহারায় বিরক্তি। পরিচালক কিছুটা ভেবে নেন। সহকারী পরিচালকদের বলেন, ‘ময়লা কি নিয়ে গেছে? না নিলে ময়লার ঝুড়ি শারমিনকে দাও।’ সহকারী পরিচালকেরা পরস্পর তাকান। চিত্রনাট্যে এটা ছিল নাকি! হয়তো না। তাৎক্ষণিক ইম্প্রোভাইজেশন। এমন সৃজনশীলতায় শুটিং এগোয়। শুটিংয়ের ফাঁকে চলে আলাপ।

শিঙাড়া দেওয়া হয়েছে, সঙ্গে আছে দুধ–চা। শিঙাড়ায় কামড় বসিয়ে পরিচালক বলেন, ‘গল্পটা অনেক বছর ধরে পেটে নিয়ে বসে আছি। আমাদের বাসায় শারমিন নামে একটি মেয়ে থাকত। অসম্ভব ট্যালেন্টেড। অথচ ওর জীবনটা ছিল শুধু আদেশ পালনের। এতটুকু দম ফেলবার ফুরসত নাই। ওকে নিয়েই বানাচ্ছি। এ বাড়িটা আমার মায়ের। ও এখানে ছিল। তাই এখানেই শুটিং করছি। একজন শিশু গৃহপরিচারিকার ঢাকায় বড় হওয়া প্রতিটি সকালের গল্প এটি।’

অমিতাভ রেজা চৌধুরী
অমিতাভ রেজা চৌধুরী

এক জোনের দৃশ্য ধারণ শেষ। অন্য জোনের দৃশ্যসজ্জা শুরু। তিড়িংবিড়িং করে ঘুরে বেড়াচ্ছে শারমিন। ওর সঙ্গে কথা হয়। বয়সে ঢের ছোট। কিন্তু এরই মধ্যে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনচিত্র আর টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছে। বলি, ‘অভিনয় করে কেমন লাগছে শারমিন?’ ও বলল, ‘আমি শারমিন না, ঋদ্ধি। বেশ ভালো লাগছে।’

ওর নাম আসলে ঋদ্ধি। খুদে অভিনয়শিল্পী। ডাক আসে, ‘শারমিন শট প্রস্তুত, আসো।’ ঋদ্ধি ওই দিনের জন্য যেন শারমিন হয়ে ওঠে। শুটিং জোনে ছুট লাগায়। শুটিং চলে। বিরতিতে জেনে নিই বাকি কাজের খবর। আইফ্লিক্সের জন্য তিনটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের কাজ করছেন অমিতাভ। একটি সামাজিক, একটি ভালোবাসা, আরেকটি রাজনৈতিক গল্প নিয়ে। অন্য দুটির নাম বন্ধু ও ভালোবাসা ভাড়া হবে। খুব শিগগির ওই দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের কাজও শুরু হবে।

‘আয়নাবাজি অরিজিনাল’ প্রকল্পে মার্চ মাসের শুটিং–এর পর অমিতাভ বানান ঢাকা মেট্রো নামের একটি ওয়েব সিরিজ। ফের ফিকশনে ফেরা। সহকারীরা এসে জানান, ‘দৃশ্য প্রস্তুত।’ অমিতাভ বসেন পরিচালকের চেয়ারে। আবার শুরু হয় শারমিনের গল্প নিয়ে দৃশ্য ধারণ।