গান করে পেয়েছিলেন বেহালার টাকা

আবদুল হাই দেওয়ান
আবদুল হাই দেওয়ান

লোকশিল্পী আবদুল হাই দেওয়ানের বেহালা ছিল না। তবে ওস্তাদের কাছে এ বাদ্যযন্ত্র বাজানোর প্রাথমিক জ্ঞান নিয়েছিলেন তিনি। রাজধানীর হাইকোর্ট মাজারে গান গেয়ে এক ভক্তের কাছ থেকে পাওয়া উপহারের টাকায় বেহালা কিনেছিলেন তিনি। সেই থেকে তাঁর গানের শক্তি একটু বেড়ে যায়। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আর্মি স্টেডিয়ামে ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবে গান করবেন এই শিল্পী। 

আবদুল হাই দেওয়ানের জন্ম নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পেচাইল গ্রামে। জন্ম নেওয়ার পর তাঁর কান্না শুনেই মামা বাউল শিল্পী খসরু দেওয়ান বলেছিলেন, ভাগনে একদিন শিল্পী হবে। শৈশব থেকেই রাত জেগে আসরে বসে লোকগান শুনতেন তিনি। তাঁদের গ্রামে একবার গান করতে যান কৃষ্ণনগরের মাতাল কবি রাজ্জাক দেওয়ান। তাঁর শিষ্য হন আবদুল হাই দেওয়ান। ওস্তাদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে গান করে বেড়াতেন তিনি। ওস্তাদ ক্লান্ত হলে তাঁকে গাইতে হতো। এভাবেই হয় তাঁর শুরু।

কৃষক পরিবারের সন্তান আবদুল হাই দেওয়ান শৈশব থেকে আড়বাঁশি বাজানো শেখেন। পরে শুরু করেন গান এবং বেহালা বাজানো। প্রথম আলোকে তিনি বলেন তাঁর বেহালা কেনার গল্প, ‘সুরেশ্বরের মুরিদ ছিলাম। হাইকোর্ট মাজারে একবার আসর হবে, সবাই বলল আবদুল হাই ভালো গায়। তাকেই সুরেশ্বরের আসরে গান করতে দেওয়া হোক। তখন আমার বেহালা ছিল না। খালি হাতে গেলাম গান করতে। অন্য আর দশজন শিল্পীর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলাম। সবাই আমার গানের খুব প্রশংসা করল। খুশি হয়ে সুরেশ্বরের এক বৃদ্ধ ভক্ত কিছু টাকা দিয়ে বলল একটা বেহালা কিনে নিই যেন। সেই থেকে নিজের বেহালা দিয়ে গান শুরু করি।’

লোকসংগীত উৎসবে কী গান করবেন? তিনি জানান লালনগীতি, মাতাল রাজ্জাক দেওয়ানের গান, খালেক দেওয়ানের গান গাইবেন। নিজের গান কেন করেন না? তাঁর অকপট উত্তর, ‘লোকে বড় সাধকদের গান শুনতে চায়।’ নিজের গানের সংখ্যা বাড়েনি এই লোকশিল্পীর। তবে স্ত্রীর মৃত্যুর পর ভীষণ কষ্টে তিনি বেঁধেছিলেন একটা গান—‘আল্লা তুই বড় ভালা, কারও গলায় দিলি ফাঁসি কারও গলায় মালা’।

গান ছাড়া জীবনে আর কিছুই করা হয়নি আবদুল হাই দেওয়ানের। তাই ওস্তাদ তাঁর জান-প্রাণ। তবে আরেক লোকশিল্পী আরিফ দেওয়ানের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতার কথা জানালেন তিনি। অনেক দিকনির্দেশনা দিয়ে স্নেহের ঋণে বেঁধেছেন তিনি আবদুল হাই দেওয়ানকে।

আবদুল হাই দেওয়ান মূলত পালাগানের শিল্পী। মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, ফরিদপুর, বরিশালসহ দেশের প্রায় সব জায়গায় গান করার ডাক পান তিনি। একসময় কেবল শীত মৌসুমেই গান করার ডাক আসত তাঁর। এখন সারা বছরই ভালো ভালো অনুষ্ঠানে গান করেন তিনি। বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিসহ সরকারি নানা অনুষ্ঠানে গান করে যাচ্ছেন এই লোকশিল্পী। বলছিলেন, ‘মানুষ আমাকে ভালোবাসে। সব জায়গা থেকে ডাক পাই। ওস্তাদের দোয়ায় আমি ভালো আছি।’