শিল্পীরা বলছেন প্রতারণা, পরিচালকের অস্বীকার

‘লিডার’ ছবির পোস্টারে মৌসুমী। ছবি: সংগৃহীত
‘লিডার’ ছবির পোস্টারে মৌসুমী। ছবি: সংগৃহীত

নায়ক ওমর সানি ও নায়িকা মৌসুমী বলছেন ছবির শুটিং পুরোপুরি শেষ হয়নি। হয়নি ডাবিংয়ের কাজও। এভাবে ছবি মুক্তি দিয়ে ‘প্রতারণা’ করেছেন পরিচালক দিলশাদুল হক শিমুল।

তবে নায়ক-নায়িকার এসব দাবি মানতে নারাজ পরিচালক। তাঁর মতে, এটা তথাকথিত ফর্মুলা ফিল্ম না। তিনি বললেন, ‘আমি আমার মতো করে একটা গল্প বলার চেষ্টা করেছি। সেই হিসেবে ছবির পুরো কাজ শেষ করেই সেটি মুক্তি দিয়েছি। আমরা যদি এখনো পুরোনো ধ্যানধারণা নিয়ে পড়ে থাকি, তাহলে কেমন করে হবে! ডাবিং করলে অনেক কিছুই মেলানো যাবে না। তাই দৃশ্য ও সংলাপ ন্যাচারাল রাখতে ডাবিং করিনি।’

বাংলাদেশি সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক ওমর সানি ও নায়িকা মৌসুমী অভিনীত ‘লিডার’ ছবিটি বরিশালের একটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে আজ ১৬ নভেম্বর। সিনেমাটিতে একজন নেত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন মৌসুমী। এতে একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ওমর সানি। কিন্তু মুক্তির আগেই ছবিটির নির্মাতা দিলশাদুল হকের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ এনে ছবিটিকে বয়কট করার ঘোষণা দিলেন প্রধান দুই শিল্পী ওমর সানি ও মৌসুমী। ছবিটি নিয়ে কথা বলতে ফেসবুক লাইভে আসেন ওমর সানি।

ফেসবুক লাইভে ওমর সানি বলেন, ‘এই ছবিতে যখন আমি আর মৌসুমী অভিনয় করতে রাজি হই তখন গল্পটি ভালো লেগেছিল। একজন পরিচালক একটি ছবিকে কীভাবে নষ্ট করতে পারেন, তার বাস্তব প্রমাণ পেলাম। এই ছবিতে আমি আর মৌসুমী কোনো ডাবিং করিনি। এই ছবির ৬০ ভাগ শুটিং এখনো বাকি আছে। পরিচালক শিমুল এই “প্রতারণা” কেন করল, জানি না। সে আমাদের সঙ্গে, দর্শকদের সঙ্গে, একটি গল্পের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এটা করার দরকার ছিল না।’

দর্শকদের কাছে অভিযোগ জানিয়ে ওমর সানি বলেন, ‘আমি একজন সচেতন মানুষ, চলচ্চিত্রপ্রেমী, তাই আপনাদের জানাতে বাধ্য হলাম। পরে আপনারাই বলবেন ভালো হয়নি। আমি ও মৌসুমী ছবিটি বর্জন করছি। একটা ছবি মুক্তি পেলে সেই ছবির শিল্পীদের জন্য সবচেয়ে বড় খুশির খবর। কিন্তু আমি খুশি হতে পারছি না। আমি প্রযোজক সমিতিকে চিঠি দিয়েছি, তাদের উত্তর পাইনি এখনো। দর্শক, আপনাদের জানালাম। বিচার আপনারাই করবেন।’

ফেসবুক লাইভে ওমর সানি আরও বলেন, ‘পরিচালক ছবিটা শেষ করতে পারতেন। শুটিংয়ে অনেক নয়েজ থাকে, ডাবিংয়ে সেটা আমরা ঠিক করি। সেই সুযোগটুকু পেলাম না। এক বছর আগে পরিচালক সমিতিতে আমি অভিযোগ করেছিলাম, সেন্সর বোর্ড ও শিল্পী সমিতিতে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার আমাকে ডেকেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে বসেছিলাম। তাঁরা বলেছিলেন বাকি অংশের শুটিং করতে হবে, ডাবিং করতে হবে। পরিচালক কিছুই করেননি। এখন শুনছি ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। একটা ভালো ছবিকে মেরে ফেরার অধিকার কার আছে? একটা অসমাপ্ত ছবি কীভাবে মুক্তি পায়? পরিচালক হয়ে এই কাজটি তিনি কীভাবে করলেন?’

ওমর সানির এসব বক্তব্য মানতে নারাজ পরিচালক দিলশাদুল হক শিমুল। তিনি বলেন, ‘আমি আসলে বুঝতে পারছি না, কেন তিনি এমনটা করছেন। হলিউড ও বলিউডে কিছু ছবিতে লাইভ সাউন্ড রেকর্ডিং হয়। আমরা যখন ছবিটি শুটিংয়ের পরিকল্পনা করি, তখন লাইভ সাউন্ড রেকর্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিই। বিষয়টি অভিনয়শিল্পীরা কিন্তু জানেনও।’

আপনার বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ, ছবির পুরো শুটিং শেষ না করেই মুক্তি দিয়েছেন। শিমুল বলেন, ‘পুরো শুটিং বলতে তিনি কী বোঝাতে চান? আমার ছবি, পরিচালক হিসেবে আমি জানি, কী দরকার আর কী দরকার নেই। আমার যতটুকু দরকার ছিল ঠিক ততটুকুই কাজ করেছি আমি। আমি এমনিতেই চিত্রনাট্যে যা ছিল, তা ভাঙতে চেয়েছি। এটাও অভিনয়শিল্পীরা জানেন। গল্পটা ঠিক রেখে আমি ইম্প্রোভাইজ করে শুটিং করতে চেয়েছি। এই ছবির শুটিং করতে আমি গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর গিয়েছি। প্রাকৃতিক নানা বিষয় ফুটিয়ে তুলতেই এসব জায়গায় গিয়েছি। নয়তো এফডিসির ভেতরে সেট বানিয়ে বা ঢাকার পাশের কোনো এলাকায় শুটিং করে নিতে পারতাম। আমার সব পরিকল্পনার কথা তাঁরা জানেন। এরপরও যদি তাঁরা এসব কথা বলেন, আমার কিছু বলার নাই।’

শিমুল আরও বলেন, ‘সানি ভাই ছবিতে একটি গান চেয়েছিলেন। পরে সেটা আমি করতে পারিনি। গল্পে গানের চাহিদা আছে বলে মনে হয়নি। এখন গান না থাকার কারণে কি তিনি বলছেন, ছবির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। পরিচালক আমি, আমি জানি গল্পের শেষ কোথায়, কতটুকু শুটিং দরকার।’

আজ শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে ‘হাসিনা: আ ডটার’স টেল’ ডকুড্রামা। এর ব্যাপারে নির্মাতার আগ্রহ রয়েছে বলেই নিজের ছবিটি প্রথম সপ্তাহে একটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দিয়েছেন। পরের সপ্তাহে বড় পরিসরে মুক্তি দেওয়ার কথা ভেবেছেন তিনি।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত ‘লিডার’ ছবিতে ফেরদৌস, মৌসুমী, ওমর সানি ছাড়া আরও অভিনয় করেছেন নিঝুম রুবিনা, আহমেদ শরীফ, শহীদুল আলম সাচ্চু, সোহেল খান প্রমুখ।