কুস্তিগির হতে চেয়ে হয়েছেন গায়ক

পূরণচন্দ্র ওয়াদালি। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি হোটেল থেকে তোলা। ছবি: সুমন ইউসুফ
পূরণচন্দ্র ওয়াদালি। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি হোটেল থেকে তোলা। ছবি: সুমন ইউসুফ

হতে চেয়েছিলেন কুস্তিগির। পূরণচন্দ্র ওয়াদালি হয়েছেন শিল্পী। বাবা ঠাকুর দাস ওয়াদালি জোর করে ২০ বছরের পূরণচন্দ্রকে গানের জগতে ঠেলে দেন। আজ বাবার কাছে তিনি পরম কৃতজ্ঞ। কেননা এই সংগীত তাঁকে দিয়েছে বহু মানুষের ভালোবাসা। পাঞ্জাবি ছাড়া আর কোনো ভাষায় কথা বলতে পারেন না তিনি, অথচ বহু ভাষার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন। এটি সম্ভব হয়েছে শুধু সংগীতের মতো এক সর্বজনীন হৃদয়গ্রাহী ভাষা রপ্ত করার কারণেই।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে ছিল ওয়াদালি ব্রাদার্সের পরিবেশনা। দুই ভাই পূরণচন্দ্র ওয়াদালি ও পেয়ারেলাল ওয়াদালির দলটির নাম ও সুনাম আছে ঠিক আগের মতোই। নেই কেবল পেয়ারেলাল ওয়াদালি। এ বছরের মার্চে পরলোকে পাড়ি জমান তিনি। বড় ভাই পূরণচন্দ্রের কাছেই গান শিখেছিলেন তিনি। গতকাল ছেলে লখিন্দর ওয়াদালিকে নিয়ে মঞ্চে ওঠেন পূরণচন্দ্র। বহু মঞ্চে বাবা ও চাচাকে গাইতে দেখে গান করতে শুরু করেন তরুণ লখিন্দর। বাবার সঙ্গে গলা মিলিয়ে তিনিও গাইলেন কাল ঢাকার মাঠে।

গতকাল মঞ্চে বসে দর্শকদের ওপর চোখ বুলিয়ে মুচকি হাসেন পূরণচন্দ্র ওয়াদালি। এরপর হয়তো ঠিক করে নেন কী কী গান করবেন। দর্শকদের উদ্দেশে দু-একটি কথা বলে তাঁদের মন বোঝার চেষ্টা করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তাই জানেন এরা কী শুনতে পছন্দ করবে। আমরা তো কেবল শ্রোতার জন্যই করি না, ভালোবাসার জন্য, ঈশ্বর, সম্পর্ক, মানবতার জন্যও গান করি।’

ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবে গতকাল শেষ পরিবেশনায় ছিলেন পূরণচন্দ্র ওয়াদালি। ছবি: সাইফুল ইসলাম
ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবে গতকাল শেষ পরিবেশনায় ছিলেন পূরণচন্দ্র ওয়াদালি। ছবি: সাইফুল ইসলাম

নিজেদের অঞ্চলের বেশ কিছু গান করে ওয়াদালি ব্রাদার্স। ‘দামাদাম মাস্ত কালান্দার’ গানটি গাওয়ার আগে বলে নেন, এই গান অনেকে অনেক রকম করে গেয়েছে। দেখেন আমাদেরটা কেমন লাগে। গতকাল ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবের প্রথম দিনের শেষ পরিবেশনায় তাঁরা মুগ্ধ করেছেন দর্শক-শ্রোতাদের। পাঞ্জাবের অমৃতসরের এ শিল্পীদের গানের কথা বুঝতে না পারলেও সুর, তাল ও আধ্যাত্মিকতা স্পর্শ করেছিল দর্শক-শ্রোতাদের।

সংগীতের মধ্য দিয়ে কীভাবে জীবন বদলে গেছে, গতকাল সকালে সে কথাই বলছিলেন পূরণচন্দ্র। সকালে একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে খানিকটা সময় কথা বলেন তিনি। এ সময় দোভাষী হিসেবে ছিলেন তাঁর দলের ছেলেরাই। তিনি বলেন, কথায় আছে না, যেখানে শরীর পৌঁছাতে পারে না, সেখানে মন পড়ে থাকে। এটা আমাদের ক্ষেত্রে হয়, যখন আমরা গান করি। সংগীত মানুষের হৃদয় ও আত্মাকে বদলে দিতে পারে। আমরা যখন মঞ্চে গান করি, তখন একজন সাধারণ দিনমজুর থেকে শুরু করে দেশের প্রধানমন্ত্রীও শুনতে আসে। এটা আমাদের এক বিরাট সার্থকতা।’

গানের ক্ষেত্রে কোনো ঘরানায় আটকে থাকতে আগ্রহী নয় ওয়াদালি ব্রাদার্স। পূরণচন্দ্র ওয়াদালি মনে করেন গারবানী, কাফি, গজল, ভজন সব গানই আলাদা আলাদাভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মানুষ এর সবই পছন্দ করেন। পাশ্চাত্যের বাদ্যযন্ত্র বা সুরযন্ত্র ছাড়াই, চেনা কোনো ভাষা ছাড়াই কেবল সুরের হাত ধরে তাঁরা পৌঁছে যান প্রথম দিনের উৎসবের শেষ পর্যায়ে। শ্রোতাদের কেবল মনে হয়, এত জলদি শেষ হয়ে গেল? আরও খানিকটা সময় শুনতে পেলে ভালো হতো না?