ভালোবাসি বাংলা গানকে: শাফকাত

শাফকাত আমানাত আলী। ছবি: আবদুস সালাম
শাফকাত আমানাত আলী। ছবি: আবদুস সালাম

সংগীতে তাঁর পারিবারিক ইতিহাসটা বেশ বড়। ধ্রুপদি সংগীতে পাতিয়ালা ঘরানার নবম পুরুষ তিনি। পাকিস্তানি সংগীতশিল্পী শাফকাত আমানাত আলীকে ভেবেছিলাম বেশ রাশভারী হবেন। কিন্তু গত শুক্রবার বিকেলের আড্ডায় তাঁকে মনে হলো কাছেরই কেউ।

রাজধানীর একটি হোটেলের লবিতে আড্ডা। বিকেলের মৃদু আলোয় বসেছেন সাংবাদিকদের মুখোমুখি। এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব উপলক্ষে এসেছেন। গাইবেন লোক ও সুফি গান। যদিও আমরা তাঁকে চিনি কাভি আল বিদা না কেহনা সিনেমার ‘মিতওয়া’ গান দিয়ে। কথা শুরু হয়। কালো ট্রাউজার আর সোয়েটারে ঘরোয়া বেশ। কথা বললেন তাঁর সংগীতজীবন, বাংলাদেশ ও বাংলা গান নিয়ে।

এখানকার অমায়িক দর্শকদের খবর আগেই পেয়েছেন শাফকাত। বললেন, ‘প্রথম দিনের শো দেখেছি। অসাধারণ দর্শক। তাঁরা গান শুনছেন, নাচছেন। খুবই রোমাঞ্চকর।’ চার বছর বয়সে শাফকাতের গানে হাতেখড়ি। ধ্রুপদি সংগীতে আছে পারিবারিকভাবে বড় ঐতিহ্য। বাবা উচ্চাঙ্গসংগীতের গুরু ওস্তাদ আমানাত আলী খান। চাচা ওস্তাদ ফতেহ আলী খানও সংগীতশিল্পী। তবে ধ্রুপদি সংগীতের বাইরেও নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন শাফকাত। গড়েছেন রক ব্যান্ড ফুজুন। করেছেন পাকিস্তানি ও বলিউড সিনেমায় প্লেব্যাক সংগীত। তাঁর গাওয়া ‘মিতওয়া’, ‘বিন তেরে’, ‘তুহি মেরা’ গানগুলো সবার মুখে মুখে। এ ছাড়া ‘আঁখোকে সাগার’, ‘মোরা সাইয়া’ অন্যতম। উৎসবে কি শুধু লোকজ ও সুফি গান গাওয়ারই ইচ্ছা? শাফকাত হেসে ওঠেন। বলেন, ‘অবশ্যই ফোক আর সুফি গান গাওয়ার চেষ্টা করব। কিন্তু শ্রোতাদের তো আমার অন্য গানও পছন্দ। তাঁরা হয়তো সেই গানও শুনতে চাইবেন। তাই অন্য গানও থাকবে।’

এতক্ষণে পাঠক জেনে গেছেন, কোন গানগুলো উৎসবে গেয়েছেন তিনি। গতকাল রাতে হয়ে গেছে তাঁর পরিবেশনা।

লোক ও সুফিসংগীত গাইতে নানা দেশের উৎসবে গান করেছেন শাফকাত। পরিচিত হয়েছেন বিভিন্ন দেশের ফোকসংগীতের সঙ্গে। লোকসংগীতের কোন উপাদানগুলো তাঁকে বেশি প্রভাবিত করে? শাফকাত বললেন স্পেনের ফ্লামেঙ্কোর কথা। কথার পিঠে কথা চলে। ঘুরেফিরে আসে সেই বাংলাদেশই। এবারই প্রথম নয়। এর আগেও বাংলাদেশে এসেছিলেন। বাংলাদেশের লোকসংগীত নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে তাঁর। দুটি বাংলা গানও গুনগুন করে গেয়ে উঠলেন তিনি, ‘কেউ কোনো দিন আমারে তো কথা দিল না’, ‘ভালোবাসি বলে বন্ধু’।

ধ্রুপদি সংগীত থেকে শুরু করে কীভাবে আগ্রহী হলেন রক গানে? উত্তরে বলেন, ‘আমি সব সময়ই চেয়েছি ক্ল্যাসিক্যাল ও আধুনিক—এই দুই ঘরানাকে মিলিয়ে কিছু একটা তৈরি করতে। ওই জায়গা থেকেই আমাদের ব্যান্ডটা গড়েছিলাম। আমরা অনেক গানও করি। এসব গান রাগাশ্রয়ী যেমন, তেমনি হার্ড রকের ফিউশনও আছে।’

বিদায় নেওয়ার সময় বাংলা গান নিয়ে তাঁর একটা কথা বাজতে থাকে মনে। ‘বাংলা গানে রয়েছে লোকসংগীতের বিশাল সম্ভার। ভালোবাসি আমি বাংলা গানকে।’