'দেবী' চার-পাঁচটা গান আর মারামারির ছবি নয়

সিডনিতে ‘দেবী’ ছবির প্রদর্শনীতে জয়া আহসান
সিডনিতে ‘দেবী’ ছবির প্রদর্শনীতে জয়া আহসান

অস্ট্রেলিয়ায় মুক্তির পর থেকেই প্রতিদিন হাউসফুল যাচ্ছে ‘দেবী’। এমনকি সিডনিতে দশম শোর দিনেও টিকিট না পেয়ে অনেকেই ফিরে গেছেন। আর হবেই–বা না কেন! ‘দেবী’র রানু যে এখন নিজেই অবস্থান করছেন সিডনিতে। সিডনির বিভিন্ন সিনেমা হলে উপস্থিত হচ্ছেন তিনি। গত শুক্রবার সিডনিতে এক নৈশভোজে দর্শকদের সঙ্গে মিলিত হন জয়া আহসান। ‘দেবী’র সাফল্য আর তাঁর সিডনি সফর নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশ আর ভারতের বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এই নায়িকা।

দেশের পাশাপাশি বিদেশেও ‘দেবী’ সফল। কেমন লাগছে?
‘দেবী’র সাফল্য আমার কিংবা আমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘সি তে সিনেমা’র সাফল্যও মনে করছি না। এই সাফল্য বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের। বাংলাদেশের বাইরে ২০টি দেশে দেখানো হচ্ছে ‘দেবী’। নিউজিল্যান্ড, কদিন বাদে যাবে সুইডেনে প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র হিসেবে। এই সাফল্য তো ইতিহাসের অংশ, তাই না! দেশের বাইরে অনেক দেশেই প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র হিসেবে মুক্তি পাচ্ছে ‘দেবী’।

সিডনিতে মায়ের সঙ্গে জয়া আহসান
সিডনিতে মায়ের সঙ্গে জয়া আহসান

প্রবাসী দর্শকদের কাছে ‘দেবী’র চাহিদা কেমন মনে হচ্ছে?
বাংলাদেশের মতোই অন্যান্য দেশেও ‘দেবী’ মুক্তি পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার সিনেমা হলে হলিউড ও বলিউডের ছবির সঙ্গে পাল্লা দিয়েই চলছে ‘দেবী’। আর যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশে এর আগে কোনো বাংলা সিনেমার এত শো হয়নি। ছবি দেখতে দর্শক পরিপাটি পাঞ্জাবি আর শাড়ি পরে হলে আসছেন। আবার একই পরিবারের সবাই একই রকম সাজ সেজে আসছেন। প্রবাসে এই যে বাংলা সংস্কৃতিকে উদ্‌যাপন, দেখেই মনটা ভরে যায়।

‘দেবী’ আর ‘আয়নাবাজি’র মতো সিনেমাগুলো যদি ব্যবসাসফল হয়, তাহলে ভালো মানের ও কাহিনি নিয়ে ছবি প্রযোজনা করার সংকট কিসের?
একজন প্রযোজক, পরিচালক কিংবা অভিনেতা যদি নিজের অবস্থান থেকে সরে গিয়ে ছবি বানায়, সেটা একটা বড় ভুল বলে আমি মনে করি। ‘দেবী’ ছবি বানাতে গিয়ে আমি কিন্তু তেমনটা করিনি। আমি চাইলেই এমন ছবি করতে পারতাম, যেখানে চার–পাঁচটা গান আছে, মারামারি আছে, একটা প্রণয়ের মাধ্যমে সমাপ্তি আছে। তেমন কিছু করিনি, যেটা অনেক পরিচালক, প্রযোজক করে থাকেন। আর সংকট সেখানেই।

নারী দর্শকেরা বরাবরই আপনার চিরযৌবনা রূপের রহস্য জানতে চায়। এই ভক্তদের জন্য বিশেষ কোনো টিপস?
আমি কোনো টিপস জানি বলে মনে হয় না। তবে একটা কথা বিশ্বাস করি, মানুষ বাইরের সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য অনেক কিছু করে। আমি বলব, মনের সৌন্দর্যের জন্য কী করছেন? সেটা করা খুব জরুরি। মন সুন্দর হলে সেটা বাইরেও ফুটে উঠবে।

সিডনিতে জয়া আহসান
সিডনিতে জয়া আহসান

‘দেবী’ ছবিতে সরকারি অনুদানও রয়েছে। সরকারি অনুদানের খুব কম ব্যবসাসফল আর ভালো মানের ছবি রয়েছে। এর কারণ কী?
বাংলাদেশে যদি কোনো বড় প্রযোজক থেকে থাকে, সেটা বাংলাদেশ সরকার। আমাদের সরকার যে সহজ শর্তে চলচ্চিত্রে অর্থায়ন করে, এটা যদি কোনো প্রযোজক বুদ্ধি দিয়ে কাজে লাগাতে পারে, তবে অবশ্যই সুন্দর একটা ছবি তৈরি করা যাবে। ভালো একটা ছবি তৈরি করতে সরকারের দেওয়া অর্থ অনেক বড় সহায়তা করে। আর সরকার এত সুন্দর করে অর্থ দেয় যে আমার মনে হয়, কোনো প্রযোজকও এত সহজে অর্থ দেয় না। এখন কেউ যদি সরকারের এই সুবিধা অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যবহার করে, তবে ফলাফল তো খারাপ হবেই। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা এই সুন্দর সুযোগ ভালোভাবে কাজে লাগতে পারি না।

শেষ কথা …
‘দেবী’ সিনেমার ঘোরেই আছি এখন। নতুন কোনো সিনেমার কাজ করছি না আপাতত। তবে আমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সি-তে সিনেমা থেকে নতুন ছবি তৈরির পরিকল্পনা চলছে। ব্যাটে–বলে মিলে গেলেই নতুন কাজ শুরু করব। সি-তে সিনেমা থেকে নিয়মিত ভালো ছবি দর্শকদের দিতে পারব বলে প্রত্যাশা করছি। আর একটা বড় ধন্যবাদ দিতে চাই অস্ট্রেলিয়ায় ‘দেবী’ ছবির পরিবেশক বঙ্গজ ফিল্মস ও এর প্রধান তানিম মান্নানকে। তাঁরা চমৎকারভাবে সবকিছু ব্যবস্থাপনা করছেন। তাঁদের পেশাদারত্বে আমি মুগ্ধ।