'আকাশের তারা দেখি আর বাবার অপেক্ষা করি'

বামরুনগ্রাদ হাসপাতালের আইসিইউতে আমজাদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
বামরুনগ্রাদ হাসপাতালের আইসিইউতে আমজাদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

‘এখন রাত হয়ে গেছে । হাসপাতালের জানালা দিয়ে আকাশের তারা দেখি। সময় কাটছে না। তোমার অপেক্ষায় আছি বাবা।’ বরেণ্য পরিচালক আমজাদ হোসেনকে নিয়ে কথাগুলো তাঁর ছেলে নির্মাতা সোহেল আরমানের। ব্যাংককের বামরুণগ্রাদ হাসপাতালের বারান্দায় বসে কথাগুলো ফেসবুকে লিখেছেন তিনি।

সম্প্রতি ঢাকার নিজ বাসায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আমজাদ হোসেনকে। হাসপাতালে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। শুরু থেকেই তাঁকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। এত দিন চিকিৎসার পর গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পরপরই তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। বামরুনগ্রাদ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে আমজাদ হোসেনকে। সেখানে তিনি প্রখ্যাত নিউরো সার্জন ডা. টিরা ট্যাংভিরিয়াপাইবুনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন।

চিকিৎসাসেবা নিয়ে বুধবার দিবাগত রাতে প্রথম আলোকে সোহেল আরমান বলেন, ‘পরম যত্ন আর সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা পাচ্ছেন বাবা। সন্তান হয়ে এটাই চেয়েছিলাম। বাবার নিশ্বাস যতক্ষণ থাকবে তিনি যেন সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসাসেবা পান—সেই চাওয়াটা পূর্ণ হয়েছে। বামরুনগ্রাদ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রর (আইসিইউ) এর আশেপাশে আমি আর বড় ভাইয়া তীর্থের কাকের মতো বসে আছি। ঘুমহীন দুই ভাই। কখন চিকিৎসক এসে বাবা সম্পর্কে আশার বাণী দেবেন। সন্ধ্যার দিকে এক মেডিকেল ছাত্রী বাবাকে দেখে এসে বললেন, বাবার হৃৎস্পন্দন নাকি ভালো। তার জোরেই নাকি বাবা এখনো অনেক গুরুতর ধকল সহ্য করতে পারছেন।’

বাবাকে নিয়ে ফেসবুকে সোহেল আরমান লিখেছেন,‘আমার বাবার হৃদয়তো অনেক শক্তিশালী হবেই । কারণ তার হৃদয় অনেক বড়। আকাশের চেয়েও বড়। এই হৃদয় দিয়েই সবাইকে অকৃপণভাবে মনপ্রাণ উজাড় করে ভালোবেসেছেন আর তার অনবদ্য শিল্পকর্মগুলো সৃষ্টি করেছেন। তাই বাবার হৃদয়টাই মৃত্যুর কাছে হার মানতে চাইছে না। এখনো খুব দূর থেকে হলেও আলো জ্বলছে।’

‘অভিনয়শিল্পী, বরেণ্য পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, কাহিনিকার ও গীতিকবি আমজাদ হোসেনের অসুস্থতার খবরে বিচলিত হয়েছেন। সুস্থতা কামনা করেছেন ও প্রতিনিয়ত যাঁরা খোঁজ-খবর নিচ্ছেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সোহেল আরমান। তিনি বলেন, ‘বাবা তোমাকেও সবাই ভালোবাসে ।অপেক্ষায় আছে। দোয়া পড়ছে। আশার আলো দেখছে। বাংলাদেশ থেকে এই বিদেশের মাটিতেও হাসপাতালের প্রতিটি মানুষ যারা চিকিৎসায় নিয়োজিত কেউ চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখছেন না। তাঁদের সবার কাছেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

বাংলাদেশের বরেণ্য এই নির্মাতার শারীরিক অসুস্থতার খবর শুনে হাসপাতালে ভর্তির তিন দিনের মাথায় তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । ব্যাংকক যাওয়ার আগে আমজাদ হোসেনের ছেলে সোহেল আরমানের হাতে চিকিৎসা বাবদ ২০ লাখ এবং এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া বাবদ ২২ লাখ টাকার চেক তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সোহেল আরমান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য থাকল হৃদয়ের গভীর থেকে কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা । আপনার জন্যই সফল হয়েছে বাবার জন্য বিদেশে সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করা। বাকিটা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা।’