টোকিওতে স্বপ্নদলের স্বপ্নপূরণ

টোকিও মেট্রোপলিটন থিয়েটার মঞ্চে স্বপ্নদলের ত্রিংশ শতাব্দী। ছবি: সুকাসা আওকি, ফেস্টিভ্যাল টোকিও ২০১৮।
টোকিও মেট্রোপলিটন থিয়েটার মঞ্চে স্বপ্নদলের ত্রিংশ শতাব্দী। ছবি: সুকাসা আওকি, ফেস্টিভ্যাল টোকিও ২০১৮।

‘ফেস্টিভ্যাল টোকিও’ হচ্ছে মঞ্চ উপস্থাপনা ও ছায়াছবির বার্ষিক এক আয়োজন। প্রতিবছর শরৎকালে জাপানের রাজধানী টোকিওতে সপ্তাহব্যাপী এটি অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর ছিল উৎসবের দশম আয়োজন। বিদেশি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয়ের জন্য এখানে বিদেশি দলগুলোকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। এবারই প্রথম বাংলাদেশের একটি নাট্যদলকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এখানে। নাটকের সেই দলটি হচ্ছে ‘স্বপ্নদল’। তারা টোকিওতে মঞ্চায়ন করেছে বাদল সরকার রচিত ত্রিংশ শতাব্দী। নানা কারণে টোকিওতে ত্রিংশ শতাব্দীর মঞ্চায়ন দলের জন্য হয়ে উঠেছিল যেন স্বপ্নপূরণের এক মঞ্চ উপস্থাপনা।

নভেম্বর মাসের ৩ ও ৫ তারিখ ছিল স্বপ্নদলের নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য নির্ধারিত দিন। জাহিদ রিপনের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের দলটি টোকিওর অন্যতম প্রধান নগরকেন্দ্র ইকেবুকুরোতে অবস্থিত মেট্রোপলিটন থিয়েটার হলে নাটকটি মঞ্চায়ন করে। হলটিতে আসনসংখ্যা ছিল ২৫০।

প্রথম দিনের মঞ্চ উপস্থাপনার আগে আসনসংখ্যা পূরণ হবে কি না, এ–ই ছিল শঙ্কা। বাংলা ভাষার একটি নাটক কতটাই–বা আলোড়িত করতে পারবে জাপানি দর্শকদের? ফলে যেন দুরু দুরু বক্ষে মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। এরপরের অভিজ্ঞতা? এই প্রশ্নের উত্তরে নাট্যদলের সদস্য ফজলে রাব্বি সুকার্নো বলেছেন, ‘আমরা কেঁদেছি। কেঁদেছি দর্শকদের কাছ থেকে এতটা সাড়া পাব, তা ভাবতে পারিনি বলে। কেঁদেছি নিজেদের অভিনয় দক্ষতার সবটা যে আমরা উজাড় করে দিয়েছিলাম, জাপানি দর্শকদের কাছ থেকে তার খুবই ইতিবাচক প্রত্যুত্তর পেয়েছি বলে।’

ত্রিংশ শতাব্দী নাটকের কাহিনি জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকি শহরের ওপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একেবারে শেষ দিকে এসে যুক্তরাষ্ট্রের আণবিক বোমা হামলা চালানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। ফলে মঞ্চে ঠিক কী হচ্ছে, সে সম্পর্কে আঁচ পেতে তেমন অসুবিধা হয়নি দর্শকদের। এ ছাড়া মঞ্চের ওপরের দিকের পর্দায় ফুটে ওঠা জাপানি ভাষার সাবটাইটেল নাটকের ঘটনা পরম্পরা তাৎক্ষণিকভাবে বুঝে উঠতে সহায়ক হয়েছিল। তারপরও মঞ্চসজ্জার দিক থেকে একেবারেই সাদামাটা ধরনের একটি নাটক বিদেশি দর্শকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠার পেছনে আরও একটি বড় কারণ ছিল অভিনেতাদের বলিষ্ঠ অভিনয়। জাপানি দর্শকেরা পর্দায় ফুটে ওঠা সংলাপের জাপানি ভাষার অনুবাদ পাঠ করে নিয়ে সহজেই বুঝে উঠতে সক্ষম হয়েছেন।

বাদল সরকারের মূল নাটকটি হিরোশিমা-নাগাসাকির আণবিক বোমা হামলার ঘটনা নিয়ে রচিত হলেও জাহিদ রিপন এটাকে কিছুটা পরিমার্জিত করে নিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ–পরবর্তী সময়ের অন্যান্য সংঘাত আর যুদ্ধকেও এর মধ্যে নিয়ে এসেছেন। ফলে নাটকের প্রেক্ষাপট হয়ে উঠেছে আরও অনেক বেশি সমকালীন।

হিরোশিমা-নাগাসাকির মর্মান্তিক কাহিনি নিয়ে বাংলা ভাষায় লেখা নাটক জাপানের দর্শকদের সামনে পরিবেশন করা নাট্যকর্মীদের জন্য ছিল খুবই তৃপ্তিদায়ক এক অভিজ্ঞতা। জাহিদ রিপন নিজে যেমন বলেছেন, এটা অনেকটা স্বপ্নপূরণের মতো।